পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: গাজায় নিরাপরাধ শিশু-বৃদ্ধা-মহিলার শয়ে শয়ে প্রাণহানিতে ইসরাইলকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করলেন জর্ডনের রাজা দ্বিতীয় আবদুল্লাহর স্ত্রী রানী রানিয়া। ইসরাইলকে কটাক্ষ করে রানিয়া বলেছেন, বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর অতি-ডানপন্থী ইহুদিবাদী শাসন ‘আত্মরক্ষার’ নামে নিরপরাধদের হত্যা করছে। ২৪ অক্টোবর রানী রানিয়ার একটি সাক্ষাৎকার নেন এক বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিক ক্রিশ্চিয়ান আমানপোর। সেই সাক্ষাৎকারেই ইসরাইলের বিরুদ্ধে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় নেতানিয়াহুর সরকারকে আক্রমণ করেন রানী।
রানিয়া বলেন, আত্মরক্ষার আড়ালে আমরা নৃশংসতাকে দেখতে পাচ্ছি। প্রতিটি দেশেরই নিজের প্রতিরক্ষার অধিকার রয়েছে। তবে যুদ্ধাপরাধের মাধ্যমে নয়। সবাইকে শাস্তির মাধ্যমেও নয়।
রানিয়া তীব্রভাবে ইসরাইলের বর্বরোচিত, নৃশংসতার বিরুদ্ধে ধিক্কার জানিয়ে প্রশ্ন করেন, ৬০০০-এর বেশি নাগরিক নিহত, এর মধ্য ২৪০০ শুধুমাত্র শিশু। পরিবারগুলি নিশিহ্ন হয়ে যাচ্ছে। এর নাম আত্মরক্ষা?
রানী রানিয়া একের পর এক বিস্ফোরক আক্রমণ করে বলেন, আমরা শুধু নির্ভুল অস্ত্র ব্যবহার করে ব্যাপক হারে কসাই দেখতে পাচ্ছি। গত দু-সপ্তাহ ধরে আমরা শুধু গাজায় ইসরাইলের অবিরাম বোমা বর্ষণ দেখে চলেছি। ইহুদি বাহিনীর টার্গেট থেকে বাদ যায়নি হাসপাতাল, স্কুল, চার্চ, মসজিদ, স্বাস্থ্যকর্মী থেকে সাংবাদিকরা। এর নাম আত্মরক্ষার লড়াই? এই যুদ্ধ পরিস্থিতিতে পশ্চিমা বিশ্বের দু-মুখো আচরণের জন্য তার তীব্র নিন্দা করেন জর্ডনের রাজা দ্বিতীয় আবদুল্লাহর স্ত্রী রানী রানিয়া।
রানিয়া বলেন, ইসরাইল ‘আত্মরক্ষার ব্যানারে’ নৃশংসতা চালিয়ে যাচ্ছে আর ফিলিস্তিনিরা যখনই সহিংসতার বিরুদ্ধে লড়াই করছে তখনই তাদের ‘সন্ত্রাসবাদি’ বলা হচ্ছে। সন্ত্রাস শব্দটি কি শুধুমাত্র মুসলিম এবং আরবদের জন্য সংরক্ষিত?
রানী রানিয়া তীব্র কটাক্ষ করে বলেন, গত ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরু হয়। বিশ্ব তৎক্ষণাৎ ইসরাইলের আক্রমণকে ‘আত্মরক্ষা অধিকারের লড়াই’ বলে তকমা দিয়ে তাদের পাশে দাঁড়িয়ে হামলার নিন্দা করে। কিন্তু গত কয়েক সপ্তাহ ধরে বিশ্ব নীরবতার ভূমিকা পালন করছে। এটি দু-মুখো আচরণ ছাড়া আর কি?
রানী রানিয়া তীব্র আক্ষেপ করে বলেন, বিশ্বের ইতিহাসে এই প্রথম এত বড় মানবিক বিপর্যয়ের পরেও বিশ্ব যুদ্ধ বিরতির আহ্বান জানাচ্ছে না। নীরবতা এখন বধিরতায় পরিণত হয়েছে।
আমাদের বলা হচ্ছে যে একটি পরিবারকে, পুরো পরিবারকে বন্দুকের সামনে হত্যা করা ভুল, কিন্তু তাদের দিকে বোমা নিক্ষেপ করা ঠিক? রানিয়া প্রশ্ন তোলেন, আমি বলতে চাইছি এখানে দু-মুখো বক্তব্যই দেওয়া হচ্ছে। আরব বিশ্বের কাছে এটি মর্মাহত বার্তা। সাক্ষাৎকারের সময় সাংবাদিক ক্রিশ্চিয়ান আমানপোর রানিকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ইসরাইলকে বর্ণবাদি রাষ্ট্র বলার জন্য তাকে ইহুদি সমর্থকদের কাছে সমালোচনার মুখে পড়তে হতে পারে। রানিয়া পালটা আক্রমণ শানিয়ে বলেন, বর্ণবাদ এমন একটি উপাধি যা আরবরা নয়, ইসরাইল এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলির দেওয়া।
রানিয়া বলেন, এই যুদ্ধ ৭ অক্টোবর শুরু হয়নি, এই সংঘাত বহু আগের। কিন্তু বেশিরভাগই নেটওয়ার্কগুলিই ‘যুদ্ধে ইসরাইল’ এই শিরোনামে খবর পরিবেশন করছে। কিন্তু ফিলিস্তিনিরা কখনও এই ভূখণ্ড ছেড়ে চলে যায়নি। এই পরিস্থিতি একদিনে তৈরি হয়নি, দীর্ঘ ৭৫ বছরের পুরনো কাহিনি। এই ইতিহাসের পিছনে রয়েছে ফিলিস্থিনিদের মৃত্যু, তাদের বাস্তুচ্যুত, ইসরাইয়েলি দখলদারিত্ব, ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ সহ তাদের মানবিক অধিকার কেড়ে নেওয়া। পশ্চিম তীর এবং গাজার ফিলিস্তিনিরা প্রতিদিনের অসম্মান এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার। গত কয়েকদিনে যা ঘটেছে, তার কারণে হামাসের বিরুদ্ধে একটি অস্বাভাবিক বিদ্বেষ তৈরি হয়েছে। তবে এটি এমন একটি সমস্যা যা হামাসের অনেক আগের এবং হামাসের পরেও অব্যাহত থাকবে। এটি স্বাধীনতা এবং ন্যায়বিচারের লড়াই।
প্রসঙ্গত, রানী রানিয়ার জন্ম কুয়েতে, ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে বড় হয়ে ওঠা। তাঁর বাবা-মা দুজনেই ফিলিস্তিনি।