যুদ্ধকালীন তৎপরতায় ভারতীয় মুসলমান এবং খ্রিস্টানদের হিন্দু ধর্মে ফিরিয়ে আনতে হবে। বিজেপি সাংসদ তেজস্বী সূর্য শনিবার এমনই হুঙ্কার দিয়েছেন।মোদিজি ২০১৪ তে ক্ষমতায় আসার পর প্রথম ‘ঘরওয়াপসি’র কথা শুনেছিল গোটা দেশ। অন্য ধর্মের বিশেষ করে মুসলিমদের হিন্দু বানানোর যে চেষ্টা তারই পোশাকি নাম ‘ঘরওয়াপসি।’ ব্যাপারটিকে ধর্মান্তর বলতে বিজেপির বেজায় আপত্তি। কিন্তু হিন্দু ধর্ম থেকে যদি স্বেচ্চায় কেউ অন্য ধর্ম, যেমন খ্রিস্টান কিংবা ইসলাম গ্রহণ করে তবে তা ধর্মান্তরণ বলে গণ্য করে তারা। এমন ধর্মান্তরণ প্রতিরোধই হিন্দুদের প্রধান উদ্দেশ্য হওয়া উচিত বলে হুঙ্কার ছেড়েছেন এই বিজেপি নেতা ।
সম্প্রতি হরিদ্বারে আয়োজিত ‘ধর্ম সংসদ’ সমাবেশ মুসলিমদের বিরুদ্ধে বিষ উগরেছে গেরুয়াধারী সন্ন্যাসীরা। তাদের নেতৃত্ব দিয়েছেন রিজভিকে হিন্দুধর্মে দীক্ষা দেওয়া নরসিংহানন্দ।ভোট সামনে এলেই গেরুয়াধারীদের একটা অংশ হিন্দুত্বের নাম বিদ্বেষ ফেরি করতে শুরু করে দেন। নিজেদের অরাজনৈতিক বলে দাবি করে বিজেপির জন্য কাজ করতে শুরু করে তারা।ফলে এই বিশ্বাস তাদের পাকা যে, বিজেপি তাদের কিছুই করবে না। উল্টে তারা প্রশ্রয় পাবে। ফলে তাদের টিকি ছোঁয় এই সাধ্যি কার !
দক্ষিণ বেঙ্গালুরুর সাংসদ হুঙ্কার দেন ‘হিন্দু পুনরুজ্জীবন’ নিয়ে। শনিবার উদুপিতে ছিল বিশ্বর্পনম অনুষ্ঠান। সেখানেই কার্যত আরও একবার হরিদ্বারের ধর্মসভার বিদ্বেষ ভাষণ শোনা গেল।তেজস্বী ‘হিন্দু জাগরণ’ চেয়েছেন।বহুকাল ধরে দেশ এমন বিদ্বেষীদের দেখে আসছে। কিন্তু তারা ২০১৪ এর পর থেকে যেভাবে প্রশ্রয় পেয়েছে তেমনটা বোধকরি আগে হয়নি।ফলে বিদ্বেষীদের মধ্যেও প্রতিযোগিতা হচ্ছে। একসময় মুসলিমদের মনে ভয় ধরানোর যে কাজ আদবানি, তোগাড়িয়ারা করতেন সেই ট্র্যাডিশন বদলায়নি।তবে একথা ঠিক যে অটলবিহারী নিজেও হিন্দুত্ববাদী নেতা হলেও তার নিজস্ব কবি প্রতিভা ও ইন্টেলেকচুয়ালিটি দিয়ে পরিস্থিতি ম্যানেজ করতেন। তিনি বিদ্বেষী হিন্দুত্বকে এমন বেআব্রু করে তোলেননি।
হিন্দুদের খেপাতে তেজস্বী বলেছেন, ইসলাম এবং খ্রিস্টান কেবল ধর্ম নয়, এই দুটি আসলে রাজনৈতিক সাম্রাজ্যবাদী মতাদর্শ। তিনি বলেন, “ভারতে সনাতন সংস্কৃতির অনুসারীরা তাদের ধর্ম এবং অন্যান্য ধর্মের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য জানেন না। কিন্তু অন্যেরা তরবারি চালিয়ে নিজেদের ধর্ম প্রচার করত। এ কারণেই রোম ও গ্রিসের প্রাচীন সভ্যতা কয়েক শতাব্দীর মধ্যেই ধ্বংস হয়ে যায়। যদিও ভারত তাদের চেয়ে অনেক বেশি আক্রমণের মুখোমুখি হয়েছে, তবুও এর মূলে সংস্কৃতি এখনও বেঁচে আছে। কারণ আমরা সাহস এবং দৃঢ়তার সাথে আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি।”
গেরুয়া ধর্মান্তরণ প্রয়াসকে বৈধ করতে এই বিজেপি নেতা বলেন, “হিন্দুকে তার মাতৃধর্ম থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। এই অসঙ্গতি মোকাবেলার জন্য শুধুমাত্র একটি সম্ভাব্য সমাধান আছে। যারা তাদের মাতৃধর্ম ত্যাগ করেছে এবং বিভিন্ন সামাজিক-রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক কারণে হিন্দু ধর্মের বাইরে চলে গেছে তাদের অবশ্যই সম্পূর্ণরূপে হিন্দু ধর্মে ফিরিয়ে আনতে হবে।”
আস্ফালন করে তেজস্বী বলেন, “আমরা এই দেশে রামমন্দির তৈরি করেছি। জম্মু ও কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা বাতিল করেছি। আমাদের উচিত পাকিস্তানের মুসলমানদেরও হিন্দু ধর্মে দীক্ষিত করা। ঘর ওয়াপসিকে আরও প্রাধান্য দিতে হবে।পাকিস্তান অখণ্ড ভারত ধারণার অন্তর্ভুক্ত।ঘরওয়াপসিতে মঠ এবং মন্দিরগুলিকে নেতৃত্ব দিতে হবে।’
তেজস্বী তাঁর ভাষণে বুঝিয়ে দিয়েছেন ধর্ম সংসদে যে কথা বলা হয়েছে তারা তাতে তেমন আপত্তিকর কিছু দেখছেন না।বরং তারা যে এই ধরণের বিদ্বেষী ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে দেশজুড়ে একটা বিদ্বেষের আগুন জ্বালাতে চাইছেন তা স্পষ্ট । ভোট যত এগিয়ে আসবে তত আরও বেশি করে এমন কথা বলবেন, বিজেপি বড়, ছোট ও কুচো নেতারা। মোদিজি সমানে আক্রমন জানিয়ে যাবেন আওরঙ্গজেবকে। ঠিক যেন দেশের বর্তমান সব সমস্যার মুলে তিনিই।মোদি যখন ভাষণে মেরুকরণকে স্থায়ী সাবজেক্ট করছেন, তখন নরসিংহানন্দ কিংবা তেজস্বীরা যে সেই পথই অনুসরণ করবে তা নিয়ে বিস্ময়ের কিছু নেই।