পুবের কলম প্রতিবেদক: ঘুর্ণিঝড় ‘মিধিলি’ আসছে বাংলায়। বঙ্গোপসাগরের বুকে তৈরি হয়েছে এই ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’। গতবুধবারে সৃষ্টি হওয়া মিধিলি গভীর নিম্নচাপটি যার অবস্থান ছিল মধ্য বঙ্গোপসাগরে। এখন তার গতিপথ উত্তর ও উত্তর – পূর্বদিকে, এই মুহূর্তে ৪১০ কিমি দক্ষিণে দীঘা। প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে – নিম্নচাপ শক্তি বাড়িয়ে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে । আগামী ১৮ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড় ভূমিতে আছড়ে পড়বে। বৃহস্পতিবার দুপুরে আলিপুরে আঞ্চলিক আবহাওয়া কেন্দ্রের বিজ্ঞানী ডঃ গণেশ চন্দ্র দাস এই খবর জানিয়েছেন।
তিনি আরও জানান, বাংলাদেশের খেপুপাড়া ও মংলা’ র দিকে চলে যাবে। এ রাজ্যের উপর দিয়ে সরাসরি অতিক্রম করছে না ফলে সেই অর্থে বড় কোনও প্রভাব পড়বে না। তবে, হাল্কা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হবে উপকূল জেলাগুলিতে। ৫০-৬০ কিমি গতিতে হাওয়া বইতে পারে। ঝোড়ো হাওয়ার গতিবেগ ঘন্টায় সর্বাধিক ৭০ কিমিও হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে ঐ পূর্বাভাস। এদিকে, আলিপুর আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, এর পরিপ্রেক্ষিতে শহর কলকাতায় বৃহস্পতি ওশুক্রবার , দুদিন ধরে বৃষ্টি হবে। আবহাওয়ার বিশ্লেষণ করে আবহাওয়া বিজ্ঞানীরা আরো জানিয়েছেন, পূর্ব মেদিনীপুরের পাশাপাশি দক্ষিণ ও উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলা জুড়ে দুদিন ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, পশ্চিম মেদিনীপুর, নদীয়া, পশ্চিম বর্ধমান জেলার কয়েক জায়গায় মাঝারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে । ১৬ ও ১৭ তারিখ বৃষ্টি হলে ও ১৮ নভেম্বর তা অনেকটা কমবে। কাজেই ১৬ থেকে ১৮ তারিখ মৎস্যজীবিদের সাগরে মাছ ধরতে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে শাক সবজির ক্ষেত্রে অনেক ক্ষয় ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।
রাজ্যের উপকূলবর্তী এলাকায় ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা যেমন থাকছে মিধিলির জেরে তেমনি দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায় থাকছে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা। সব থেকে বড় চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে অসময়ের এই বৃষ্টি যা ধান ও সবজি চাষের ক্ষেত্রে ক্ষতি ডেকে আনতে পারে। এখনও পর্যন্ত রাজ্যজুড়ে ৬৬ শতাংশ ধান কাটা শেষ হয়েছে। যার মধ্যে অধিকাংশটাই উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে। দক্ষিণবঙ্গে দেরি করে ধান চাষ শুরু হয়। সেই কারণে এখানে ধান কাটার পরিমাণ মাত্র ৫ শতাংশ। যে সমস্ত এলাকায় ধান পেকে গিয়েছে, সেখানে দ্রুত ধান কাটা শেষ করতে নামানো হচ্ছে হারভেস্টর মেশিন। তবে দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে দেরি করে ধান চাষ শুরু হয়েছে। সেই সব ধান এখনও পাকেনি। অধিকাংশ এলাকায় ধান কাটার মতো পরিস্থিতিও নেই। ফলে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। পুরো পরিস্থিতির ওপর অবশ্য নজর রাখছে নবান্নের শীর্ষমহল। সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলিকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যসচিব। এই ঝড়ের দরুণ পাকা ধান নষ্টের শঙ্কা যেমন থাকছে, তেমন সবজিতে পচন ধরে গিয়ে তা নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। শুধু তাই নয় বৃষ্টির জলে মাটি ভিজে গেলে পিছিয়ে যেতে পারে আলুচাষও।