সেপ্টেম্বর ছিল শিশুদের ক্যানসার সচেতনতার মাস। প্রতিবছর এই মাসে শিশুদের ক্যানসার সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি আক্রান্তদের জন্য অর্থ সংগ্রহ সহ নানা কর্মসূচি নেওয়া হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন– পৃথিবী জুড়েই শিশুদের মধ্যে এই রোগ বাড়ছে। যদিও সতর্ক থাকলে এই রোগের মোকাবিলা করা অনেক ক্ষেত্রেই সম্ভব। বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে লিখছেন শ্যামলী বন্দ্যোপাধ্যায়।
শিশুদের ক্যানসারের সবচেয়ে বড় সমস্যা হল রোগ সম্পর্কে সচেতনতার অভাব। তার ওপর করোনার সময়ে আর্থিক ও পরিস্থিতির কারণে নিয়মিত চিকিৎসা করাতে পারছেন না অনেকে। এতে সমস্যা আরও বেড়ে গেছে। ল্যানসেটের এক রিপোর্ট বলছে– প্রতি দু’জন শিশুর মধ্যে একজন মারা যায় রোগ সময়ে ক্যানসার ধরা না পড়া ও চিকিৎসার অভাবে। অথচ শিশুদের ক্যানসারের বেশিরভাগই (প্রায় ৭৫-৯০ শতাংশ) ঠিক সময়ে চিকিৎসা করলে সুস্থ হয়ে যায়।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মতে– শিশুদের সবচেয়ে বেশি হয় লিউকেমিয়া। এছাড়াও ব্রেন টিউমার– লিমফোমা– কিডনির টিউমার ও চোখে রেটিনোব্লাস্টোমার মতো ক্যানসার হতে দেখা যায়।
বাচ্চাদের ক্যানসারের উপসর্গ কী?
এ বিষয়ে চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউটের (সিএনসিআই) ক্যানসার বিশেষজ্ঞ ডা. কল্যাণ কুসুম মুখোপাধ্যায় জানান বেশ কিছু উপসর্গ আছে এই রোগ সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা হওয়ার। যেমন–
তিন সপ্তাহের বেশিদিন ধরে অকারণে জ্বর
হাড়ে বা জয়েন্টে ব্যথা
মাড়ি– নাক বা ত্বক থেকে রক্তপাত
কোথাও আচমকা লাম্প গজিয়ে ওঠা
অকারণেই মাঝে মধ্যে বমি হওয়া
ডাবল ভিশন
শ্বাসকষ্ট
দ্রুত ওজন কমে যাওয়া
নাক– কান– গলা ও ফুসফুসে বারবার সংক্রমণ, মস্তিষ্কের টিউমার ক্যানসারযুক্ত হলে মাথা ব্যথা করা ও বমির প্রবণতা বেড়ে যাওয়া।
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. নন্দিতা সাহা জানান– একথা ঠিক– আগের তুলনায় শিশুদের মধ্যে ক্যানসার বেশি হচ্ছে। এই রোগ বৃদ্ধির আসল কারণ জানা না গেলেও পরিবেশ দূষণের কারণে জিনের পরিবর্তন এজন্য অনেকটা দায়ী বলে অনুমান করা হচ্ছে। আর অভিভাবকদের মধ্যে এই রোগ সম্পর্কে সচেতনতা খুবই কম। তাঁরা তাঁদের সন্তানের এমন অসুখ হয়েছে বলে মানতে চান না। ফলে যতদিনে চিকিৎসা শুরু হয় ততদিনে অনেকটাই দেরি হয়ে যায়। কাজেই বাচ্চার যে কোনও শারীরিক পরিবর্তন দেখলেই সতর্ক হতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। আরেকটা বিষয়ও ঠিক– যে বাচ্চাদের ক্যানসারের লক্ষণ তেমন স্পষ্ট থাকে না বলে সহজে তা ধরা পড়ে না।
বাবা মায়েদের তাঁদের সন্তান এই কঠিন অসুখে আক্রান্ত একথা জানানো চিকিৎসকদের পক্ষেও বেশ কষ্টকর বলে জানালেন কল্যাণ কুসুম মুখোপাধ্যায়। বাচ্চার ক্যানসার শুনলেই বাবা– মায়েরাও ভেঙে পড়েন। একে সন্তানের শরীরের চিন্তা তার ওপর এর জন্য খরচ জোগাবেন কীভাবে তা নিয়ে চিন্তা বাড়ে। অনেক নিম্ন এমনকী মধ্যবিত্ত পরিবারের পক্ষেও সেই খরচ জোগানো বেশ সমস্যার। ফলে তাঁদের মধ্যে দেখা দেয় হতাশা। এর প্রভাব বাচ্চার ওপরেও পড়তে বাধ্য। তাদেরও সুস্থ হতে সময় লাগে। তাই এমন সমস্যা শিশুর দেখা দিলে প্রয়োজনে তাঁদের কাউন্সেলরের সাহায্য নিয়ে হাসিখুশি থাকতে হবে। এতে শিশুর চিকিৎসায় সাড়া দিতে সুবিধা হয়।
তাই বিশেষজ্ঞদের সাবধানবাণী হল– করোনার সময়েও ক্যানসারের চিকিৎসা কিংবা ফলোআপে গাফিলতি করা চলবে না। একথা ঠিক– করোনার ভয়ে বাবা– মায়েরা সন্তানদের বাইরে বের করতে ভয় পান। তাছাড়া এই অসুখে আক্রান্ত শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে বলে এই ভাইরাস সংক্রমণের আশংকাও বেশি থাকে। তাই চিকিৎসা করাতে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে আবার সতর্কতাও অবলম্বন করতে হবে।