পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: জনপ্রিয় শিশু প্রসাধন সামগ্রী প্রস্তুতকারী সংস্থা জনসন অ্যান্ড জনসনের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে বেবি পাউডার তৈরি সহ বিক্রির অনুমতি দিল বম্বে হাইকোর্ট। আদালতের বেঞ্চ তার পর্যবেক্ষণে জানিয়েছে, প্রসাধন সামগ্রীগুলিতে গুণমান সহ সুরক্ষার মানগুলি বজায় রাখা প্রয়োজন। একইভাবে পণ্যগুলিতে সামান্য ত্রুটি বিচ্যুতি ধরা পড়লেই তার জন্য গোটা উৎপাদন প্রক্রিয়াকে বন্ধ করার কোনও মানে হয় না।
জনসন ও জনসন শিশুদের পাউডার তৈরির জন্য একটি জনপ্রিয় সংস্থা। কোম্পানিটি দাবি করেছে, লাইসেন্স প্রত্যাহারের কারণে বিক্রি হওয়া পণ্যের বাজার মূল্যের ভিত্তিতে দৈনিক ২.৫ কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে তারা।
২০১৯ সাল নাগাদ সংস্থার উৎপাদনের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে মহারাষ্ট্র সরকার। ২০১৮ এর ডিসেম্বর মাস নাগাদ মহারাষ্ট্র সরকারের খাদ্য ও ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থার তরফে একটি সমীক্ষা চলছিল। সে সময় জনসনের পাউডার সংগ্ৰহ করে সেটি পরীক্ষা করে দেখা হয়। সেই গবেষণায় দেখা যায়, শিশুদের এই দ্রব্যটি সঠিক গুণমান মেনে তৈরি করা হচ্ছে না। এরপরেই সংস্থার মুলুন্দ কারখানার উৎপাদনের অনুমতিপত্র বাতিল করা হয়। সংস্থাকে বাজার থেকে সমস্ত দ্রব্য তুলে নেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছিল সরকারের তরফে। ২০১৯ সালে পরীক্ষার বিস্তারিত ফলাফল আসে। যা থেকে জানা যায়, শিশুদের এই পাউডারে পিএইচ-এর মাত্রা সঠিক নেই। এর পরেই মহারাষ্ট্র সরকার সংস্থার লাইসেন্স প্রত্যাহার করে এবং পণ্য উৎপাদন ও বিক্রয় বন্ধ করতে বলে। লাইসেন্স স্থগিত ও প্রত্যাহার করার আদেশ ল্যাবের রিপোর্টের ভিত্তিতে পাস করা হয়েছিল।
বুধবার মহারাষ্ট্র সরকারের সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে জনসন অ্যান্ড জনসনকে বেবি পাউডার তৈরি ও বিক্রির অনুমতি দিল বম্বে হাইকোর্ট। সেইসঙ্গে বিচারপতি গৌতম প্যাটেল এবং এস জি ডিজের একটি ডিভিশন বেঞ্চও ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে বাজেয়াপ্ত করা কোম্পানির বেবি পাউডারের নমুনা পরীক্ষা করতে দেরির জন্য রাজ্য খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসনের (এফডিএ) উপর তীব্র নিন্দা জানায়। আদালত বলে, ২০১৮ সালে এফডিএকে সামগ্রীর নমুনা পরীক্ষার জন্য দেওয়া হয়েছিল, সেটি পরীক্ষা করা হয় ২০১৯ সালে। তার পরেও ২০২২ সাল পর্যন্ত কোম্পানির উৎপাদন ও বিক্রি বন্ধ করে রাখা হয়েছিল, সেটি অযৌক্তিক।
বেঞ্চ তার পর্যবেক্ষণে জানায়, প্রসাধন সামগ্রীর গুণগত মান সব সময়ই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে, একটি নির্দিষ্ট সামগ্রীতে গুণগত মান খারাপের কারণে পুরো উৎপাদনই বন্ধ করে দিতে হবে। পুরো উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়ার অর্থ বাণিজ্যিক ক্ষতি। হাইকোর্ট তার আদেশে উল্লেখ করেছে যে, নতুন পরীক্ষায় বেবি পাউডার পণ্যের সমস্ত ব্যাচ নির্ধারিত নিয়ম মেনেই করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, মহারাষ্ট্র সরকার সংশ্লিষ্ট সংস্থার বিরুদ্ধে তিনটি নির্দেশ দেয়। গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর সরকার জনসনের লাইসেন্স প্রত্যাহার করে। ওই বছরেই ২০ সেপ্টেম্বরে উৎপাদন বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়। ২০২২ সালের ১৫ অক্টোবর রাজ্য সরকার দুটি নির্দেশকে বহাল রাখার আদেশ দেয়। বম্বে হাইকোর্ট মহারাষ্ট্র সরকারের এই নির্দেশের প্রসঙ্গে বলে, একটি পিঁপড়ে মারার জন্য নিশ্চই হাতুড়ি ব্যবহার করা যায় না। সেই ভাবে একটি সামগ্রীতে কিছু ত্রুটি পেলেই সেটির পুরো উৎপাদন প্রক্রিয়াকে বন্ধ করে দেওয়া যায় না। সংস্থার উপরে এটি একটি কঠিন সিদ্ধান্ত চাপানো হয়েছিল, যেটি অযৌক্তিক।