পুবের কলম, ওয়েবডেস্কঃ আরও এক ঐতিহাসিক ঐতিহ্যের নাম পাল্টে দেওয়া হল। মুঘল থেকে নবাবি, বলা ভাল মুসলিম ঐতিহ্যের ছোঁয়া রয়েছে এমন অনেক রাস্তা, রেল স্টেশন, শহরের নাম তো আগেই বদলেছে। আর এবার বদলে যাচ্ছে দিল্লির রাষ্ট্রপতি ভবনের মুঘল গার্ডেনের নাম। শনিবার কেন্দ্রীয় সরকার এই মুঘল গার্ডেনের নাম বদলে ‘অমৃত উদ্যান’ করছে।
বিরোধীদের অনেকে বলছেন, মোদি সরকার দেশের ইতিহাস থেকে মুঘলদের নাম-নিশানা সম্পূর্ণ মুছে দিতে চাইছে। ইতিহাস নতুন করে লেখার চেষ্টা হচ্ছে। মুঘল ইতিহাস বিজড়িত স্থানগুলির নাম পাল্টে দেওয়া হচ্ছে।
যদিও গেরুয়া ঘনিষ্ঠ ঐতিহাসিকদের দাবি, ঔপনিবেশিকতার অতীত ইতিহাস মুছে দেওয়ার পথে মোদি সরকারের এটা আরও একটি বড় সিদ্ধান্ত। এর আগে দিল্লির রাজপথের নাম পরিবর্তন করে ‘কর্তব্য পথ’ করা হয়েছে।
কেন্দ্রের তরফে অবশ্য জানানো হয়েছে, ভারতের স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে ‘অমৃত মহোৎসব’-এর থিমের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তারা মুঘল গার্ডেনের নাম পরিবর্তন করে ‘অমৃত উদ্যান’ করছে। এই প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি নাভিকা গুপ্তা জানান, আজাদী কা অমৃত মহোৎসব হিসেবে দেশের স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি উদ্যাপন উপলক্ষ্যে দেশের রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রপতি ভবন উদ্যানগুলির ‘অমৃত উদ্যান’ হিসেবে নামকরণ করেছেন।
জানা গিয়েছে, ২৯ জানুয়ারি রবিবার রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এই ‘অমৃত উদ্যান-এর উদ্বোধন করবেন। ৩১ জানুয়ারি থেকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত প্রায় ২ মাস ধরে তা সাধারণ মানুষের পরিদর্শনের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। সাধারণত প্রতিবছর রাষ্ট্রপতি ভবনের উদ্যান ফ্রেব্রুয়ারি থেকে মার্চ, এক মাস সর্ব সাধারণের জন্য খোলা থাকে। কারণ, এই সময়ে বাগানে ফুল ফোটে। নাভিকার কথায়, জনসাধারণের জন্য রাষ্ট্রপতি ভবনের বাগানের দরজা দু’মাসের জন্য খুলে দেওয়ার পাশাপাশি বিশেষ গোষ্ঠী মূলত কৃষক ও প্রতিবন্ধীদের দেখার জন্য বাগান খোলা রাখার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ৭৫ তম স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন, যে সমস্ত চিহ্নে ঔপনিবেশিক মানসিকতার ছাপ রয়েছে সেগুলি বাতিল করতে হবে। তারপরই একে একে নয়া দিল্লির রাস্তার নাম বদল করা হয়। রাজপথের নাম বদলে কর্তব্য পথ, রেসকোর্সের নাম লোকমান্য মার্গ করা হয়। ঔপনিবেশিক অতীত ভোলাতেই ব্রিটিশ আমলে তৈরি এই রাস্তাগুলির নাম বদল করা হয়। এবার মুঘল ইতিহাসের প্রতীক মুঘল গার্ডেনের নাম বদল করা হল।
রাষ্ট্রপতি ভবনের তিনটি উদ্যানের অন্যতম এই মুঘল গার্ডেন। ১৯১৭ সালে ১৫ একর জমির উপর এই উদ্যান তৈরির পরিকল্পনা করেছিলেন স্যার এডউইন ল্যুটিয়েন্স। মুঘল আর ব্রিটিশ বাগিচা নির্মাণের শৈলী মিশিয়ে এটি তৈরি করা হয়েছিল। এই বাগানে রয়েছে ১৩৮ রকমের গোলাপ ও ৭০ রকমের নানা মরশুমি ফুল। শীতের মরশুমে গোলাপ-টিউলিপে সজ্জিত এই উদ্যানের শোভা চোখ জুড়িয়ে দেয়।