পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: নবী সা. কে নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্যের জেরে খবরের শিরোনামে বিজেপির সাসপেন্ডেড নেত্রী নূপুর শর্মা। গোটা বিশ্ব নেত্রীর করা মন্তব্যে নিন্দায় মুখর হয়েছে। সউদি আরব, বাহরাইন, কাতার, কুয়েত ও ইরান ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে ডেকে নবী (সা.) সম্পর্কে মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করেছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ অভিযোগ করেছেন, ভারতের বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের সময় সংখ্যালঘু মুসলিমরা বিপন্ন। পশ্চিম এশিয়ার একাধিক বাণিজ্যিকস্থলে ভারতীয় পণ্য বয়কট করা হয়।
ভারতেও বহু দেশে এই ঘটনায় উত্তেজনা ছড়িয়েছে। এবার নানা কাণ্ডে মুসলিমদের নিশানা করা হচ্ছে বলে সরব হল অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। প্রসঙ্গত, বিগত কয়েকদিনে বেশ কয়েকটি ঘটনায় একের পর এক ঘটনায় নাম জড়িয়েছে সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের। এর মধ্যে অন্যতম হল হিজাব কাণ্ড। চলতি বছরের প্রথম দিকে কর্নাটকে হিজাব ইস্যুতে উত্তাল হয়ে রাজ্য-রাজনীতি। মামলা আদালত পর্যন্ত গড়ায়। কিন্তু এখনও এই ইস্যুতে সমাধান সূত্র মেলেনি। এর পরেই জায়গা করে নিয়েছে বুলডোজার ইস্যু। সামান্য অজুহাতে বুলডোজার দিয়ে মুসলিমদের বাড়ি, ঘর, দোকানপাট গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এর জন্য আইন-আদালত কোনও কিছুরই পরোয়া করা হচ্ছে না। এরই পাশাপাশি জায়গা করে নিয়েছে মসজিদে সংস্কারের কাজ চলাকালীন মন্দির ও শিবলিঙ্গ আবিষ্কৃত হওয়ার ঘটনা। এছাড়াও আছে মুসলিম যুবক থেকে কিশোরকে পিটিয়ে খুনের মতো ঘটনা।
বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে নূপুর শর্মার বিরুদ্ধে দেশের একাধিক রাজ্যের থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। কিন্তু সুকৌশলে একটি হাজিরা এড়িয়েছেন নূপুর। আরও অনেকগুলি থানায় মামলা ঝুলছে তার নামে। সেইগুলি কোনদিকে যায় সেইদিকেই তাকিয়ে আছে সকলে। এমনকী বিতর্কিত মন্তব্যের পর পরই প্রবলভাবে বিরোধীদের চাপে পড়ে নূপুর শর্মাকে সাসপেন্ড করে বিজেপি। এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এবার কেন্দ্রকে নিশানা করে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল-এক কড়া বিবৃতি জারি করে ভারত সরকারকে মুসলিমদের দিকে নিশানা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। কয়েকটি কারণ উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট সংস্থা বলেছে, নূপুর শর্মার বিতর্কিত মন্তব্যের প্রতিবাদে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে বিক্ষোভ হয়েছে। সেই বিক্ষোভ দমনে কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে সেই রাজ্যগুলির সরকার। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে অতিরিক্ত দমন পীড়ন নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। যার ফলসরূপ দেশে একটি শিশু সহ দুজনের মৃত্যুর মতো ঘটনা ঘটেছে।
এই ঘটনায় অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল কড়া বিবৃতি জারি করে জানিয়েছে, ‘বিক্ষোভ দমনে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ যেন অবিলম্বে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ থেকে বিরত থাকে। শান্তিপূর্ণ উপায়ে যাঁরা প্রতিবাদ জানাচ্ছেন তাঁদের যে কায়দায় আইনশৃঙ্খলার ক্ষেত্রে ‘বিপজ্জনক’ হিসাবে চিহ্নিত করা হচ্ছে তা গভীর উদ্বেগের বিষয়। একইসঙ্গে মুসলিমদের নিশানা করে সরকার ক্রমাগত যে পদক্ষেপ গ্রহণ করছে তাও চিন্তার বিষয়।’ বিবৃতিতে তারা লিখেছে, ‘ভারত সরকার প্রতিশোধমূলক ভাবে বেছে বেছে সেই সমস্ত মুসলিমদের উপর নিপীড়ন নামিয়ে আনছে যারা মুখ খোলার স্পর্ধা দেখাচ্ছেন বা শান্তিপূর্ণ উপায়ে তাঁদের উপর হওয়া বিদ্বেষের প্রতিবাদ জানাচ্ছেন।’
উল্লেখ্য, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল একটি মানবাধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থা। সংস্থাটি ১৯৬১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্থাপিত হয়। সংস্থাটি ১৯৭৭ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার এবং ১৯৭৮ সালে জাতিসংঘ মানবধিকার পুরস্কার পায়। ২০২০ সালের সংস্থাটির ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে ভারত সরকার। ফলে কার্যক্রম পরিচালনা করতে না পারায় ২৯ সেপ্টেম্বর ভারতে সংস্থাটি কাজ করা বন্ধ করে দেয়। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ভারতে সংখ্যালঘু নির্যাতন, মুসলিম পিটিয়ে হত্যা, দিল্লি দাঙ্গায় পুলিশের ভূমিকা, ভারত শাসিত কাশ্মীরের মানবাধিকার ইত্যাদি নিয়ে সরব ছিল।