পুবের কলম,ওয়েবডেস্ক: বছর পঁয়ত্রিশের অ্যালবার্ট ভাইফেইয়ের জন্য ৪ মে’র রাত ছিল সবচেয়ে দীর্ঘ রাত। মণিপুরের কাংপোকপি জেলার কুকি অধ্যুষিত গ্রাম সালাং পাটং-এ পেট্রোল বোমায় সজ্জিত এক দল জনতার ভিড় দেখে অ্যালবার্ট আতঙ্কে সিটিয়ে যায়।
বাবা-মা’কে সে বলে যা কিছু সঙ্গে নেওয়ার নিয়ে দ্রুত বেরিয়ে এসো। বাড়ি থেকে বেরিয়ে ৫০ মিটার দূর চলার পরই তাঁর বাবা ৬০ বছরের ক্যামবেম ভাইফেই পড়ে যান। অ্যালবার্ট তাঁকে জাগানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। অ্যালবার্টের বাবা আর নেই। কিন্তু অসহায় অ্যালবার্টের কাছে শোক প্রকাশেরও সময় ছিল না। বাবার লাশ কাঁধে তুলে মা’র সঙ্গে সে হাঁটতে থাকে।
অ্যালবার্টের কাছে তাঁর বাবাকে ছেড়ে যাওয়া যেমন সম্ভব ছিল না, তেমনই তাঁর সম্মানজনক শেষকৃত্যের বিকল্পও ছিল না। রাজ্যের চারিদিকে সহিংসতার মধ্যেই অ্যালবার্ট শেষপর্যন্ত বাবার মৃতদেহ নিয়ে নিজেদের বিধ্বস্ত গ্রামে ফিরে আসেন এবং সেখানেই দাফন করেন যেখানে তাঁর জন্ম হয়েছিল।
গ্রামে পৌঁছতে তাঁকে বাবার লাশ কাঁধে ১৭ কিলোমিটার খাড়াই রাস্তা অতিক্রম করতে হয়। নিজের সম্প্রদায়ের কথা উপেক্ষা করে জঙ্গলে রাত কাটাতে হয়। অ্যালবার্টকে তাঁর সম্প্রদায়ের মানুষরা অন্য গ্রামে তাঁর বাবাকে দাফন করার পরামর্শ দিয়েছিল।
সে জানায়, ‘আমি এখনও আমার কাঁধে সেই ভার অনুভব করছি।’ অ্যালবার্ট বর্তমানে মণিপুরের টেংনুপাল জেলায় সেন্ট পিটার্স স্কুলে কুকিদের জন্য তৈরি ত্রাণশিবিরে তাঁর মা নিয়াংবোই ভাইফেইয়ের সঙ্গেই রয়েছেন।
৩ মে’র পর দু’মাস অতিক্রান্ত হয়েছে, কিন্তু পার্বত্য জেলায় আধিপত্য বিস্তারকারী কুকি এবং উপত্যকার সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেই সম্প্রদায়ের সংঘর্ষ জারি রয়েছে।
পরিসংখ্যান বলছে সহিংসতার বলি এখনও পর্যন্ত ১৫৫, বাস্তুচ্যুত ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষ। যখন কুকিরা উপত্যকা ও পাদদেশ থেকে বিতাড়িত হয়েছিল, তখন পাহাড়ে বসবাসকারী মেইতেইরাও তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যায়।
ইম্ফলে কুকিদের তাঁদের আইকার্ড সমেত কলেজ, কর্মস্থল থেকে বিতাড়ন করা হয় এবং তারপর মারধর করে মরার জন্য ছেড়ে দেওয়া হয়। অ্যালবার্ট জানান, ‘তলহাটির গ্রাম থেকে আমাদের খেদিয়ে দেওয়ার পর আমাদের ঘরবাড়িতে লুঠপাট চালানো হয়, আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় এবং জেসিবি নিয়ে বাড়িঘর ভেঙে ফেলা হয়।