পুবের কলম, ওয়েব ডেস্ক: দেশবাসীকে যখন ডিজিট্যাল ইন্ডিয়ার স্বপ্ন দেখানো হচ্ছে, ঠিক তখনও বহু শতাব্দী আগের অস্পৃশ্যতার শোষণ দেশে নতুন করে মাথাচাড়া দিতে শুরু করেছে। প্রায় ১৭ দিন আগে টিডিগোল গ্রামের হনুমান মন্দিরের উৎসবে যখন রথ বেরিয়েছিল, তখন গ্রামের উচ্চবর্ণের মানুষজনরা নিজেদেরকেই উচ্চতার আসনে বসিয়ে দিলেন। তাঁরা নির্ধারণ করে দিলেন, মূর্তি আর রথের চাকার অধিকার একমাত্র তাদেরই। গ্রামের দলিত পরিবারগুলির সেই অধিকার নেই। মন্দিরের উৎসব চলাকালীন ভুল করে এক দলিত যুবক রথের চাকায় হাত দিতেই তাদেরকে সমাজ থেকে একঘরে করলেন উচ্চবর্ণের মোড়লরা। কর্ণাটকের রায়চুর জেলার সিন্দানুর তালুকের টিডিগোল গ্রামের প্রায় ১০০ টি দলিত পরিবারকে রাতারাতি একঘরে করার ঘটনায় স্তব্ধ গোটা দেশ।
সম্প্রতি এই ভেদাভেদের প্রশ্নে সরব হয়ে দশ হাজার মানুষের সঙ্গে আম্বেদকরের শপথবাক্য পাঠ করে বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করায় মন্ত্রীত্ব হারাতে হয়েছে আম আদমি পার্টির প্রাক্তন সমাজকল্যাণ মন্ত্রী রাজেন্দ্র পাল গৌতমকে। ওই যুবকের রথের চাকা স্পর্শ করার ‘অপরাধে’ প্রতিটি দলিত পরিবারকে কোণঠাসা করেছেন তথাকথিত ‘উচ্চবর্ণের’ মানুষজন। তাদেরকে কোনো খাদ্য পণ্য বিক্রি করছেন না উচ্চবর্ণের মানুষজন। তাদের ধান,গম পেষাই করতে অস্বীকার করছেন কলের মালিকরা। এমনকি চা এর দোকান বা হোটেলে কেউ তাদেরকে খাবার বিক্রি করছেন না। তাদের অপরাধ, ৩০ সেপ্টেম্বর তাদেরই গোত্রের এক যুবকের ভুল বশত রথের চাকায় হাত দেওয়া। শুধু একঘরে করা নয়, গ্রামের উচ্চবর্ণের কয়েকজন মিলে মন্দিরে ঢোকায় বেশ কয়েকজন দলিত যুবককে ব্যাপক মারধর করে বলেও অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে। এমনকি গ্রামের মাঠে তাদেরকে কাজ করতেও দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ। দলিত যুবকরা পুলিশের কাছে অভিযোগ জানালে বিষয়টি মিটমাট করার চেষ্টা করে পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন। যদিও এখনও পর্যন্ত সমস্যা মেটেনি বলে অভিযোগ।
সিন্দানুরের তেহসিলদার অরুণ এইচ দেশাই জানিয়েছেন, গ্রামের উচ্চবর্ণের প্রভাবশালীরা লিখিতভাবে জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে এমন ঘটনা ঘটবে না। যদিও গ্রামের দলিত পরিবারগুলির দাবি এখনও তাদেরকে এড়িয়ে যাচ্ছেন উচ্চবর্ণের মানুষজন। তাদের সঙ্গে কেউ কথাও বলছেন না বলে আক্ষেপ তাদের। সেখানকার পুলিশ আধিকারিক ভেঙ্কাটাপ্পা নায়েক জানিয়েছেন, শান্তি বজায় রাখতে ওই ঘটনার পর থেকে গ্রামে পুলিশের টহলদারি চলছে। খুব তাড়াতাড়ি এই সমস্যায় ইতি টানা হবে বলে দাবি ভেঙ্কাটাপ্পার। স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরও গান্ধি-আম্বেদকরের স্বপ্ন অধরা থেকে গেল বলে আক্ষেপ সংশ্লিষ্ট মহলের। সম্প্রতি দেশের রাষ্ট্রপতির পদ অলঙ্কৃত করেছেন দলিত পরিবার থেকে উঠে আসা দ্রপদী মুর্মু। লোকসভার স্পিকারের দায়িত্ব সামলেছেন দলিত পরিবারের মেয়ে মীরা কুমার। এমনকি বিশ্বের সর্ববৃহৎ লিখিত সংবিধানের জনক দলিত নেতা ড. বি আর আম্বেদকর। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গুরুত্বপূর্ণ পদ অলঙ্কৃত করছেন দলিতরা। তারপরও বিজেপি শাসিত কর্ণাটকে এমন মধ্যযুগীয় মানসিকতার কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না কেউই।