বিশেষ প্রতিবেদকঃ ফেসবুক তুমি কার? যে ফেসবুক ব্যবহার বা অপব্যবহার করে ফেসবুক তার। সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে– পশ্চিমবঙ্গের সংখ্যালঘু বিশ্ববিদ্যালয় আলিয়াকে নিয়ে কয়েকজন ফেসবুক-যোদ্ধা বেশ সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। তাদের প্রচারের মোদ্দাকথা হচ্ছে– সমস্ত দোষ আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালকবৃন্দের। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় যে সংকটে পড়েছিল– তাতে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থকরি নিয়ন্ত্রক এমএএমই-র আধিকারিকদের কোনও দোষ নেই– কোনও অবহেলা নেই– তাদের মিষ্টি-মধুর আচরণ– রাজ্য সরকারের সম্মান বৃদ্ধি করে যাচ্ছে– তারা সারা রাজ্যের সমস্ত দফতরের জন্য মডেল বা আদর্শ স্থানীয়।
এইসব কথা প্রচারের দায়িত্ব নিয়েছেন দু-তিনজন ব্যক্তিবিশেষ। ফেসবুক বা সোশ্যাল মিডিয়া যে কেউ ব্যবহার করতে পারেন। অবশ্য যদি না ফেসবুক কর্তৃপক্ষ বা সরকার নির্দিষ্ট কয়েকটি কারণ দর্শিয়ে তা সাময়িক বা স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেয়।
অন্য রাজ্যে জানি না– সাধারণত পশ্চিমবঙ্গের একটি অলিখিত নিয়ম রয়েছে। খুব বেশি প্রয়োজন না হলে বিভিন্ন দফতরের আধিকারিকরা খুব একটা কথা বলেন না। যা বলার রাজনীতির প্রতিনিধি হিসেবে মন্ত্রীরাই বলে থাকেন। ইদানীং দেখা যাচ্ছে– আধিকারিকরা খুব বেশি কথা না বললেও তাদের প্রতিনিধি সেজে কয়েকজন ফেসবুক ব্যবহারকারী সরকারের গোপন নথিপত্রের ফোটোকপি দিয়ে ফেসবুকে প্রমাণ করতে চাইছেন– তাদের ‘ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং’ প্রক্রিয়া সমস্ত নিয়ম-কানুন নস্যাৎ করে দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র তারা হস্তগত করছে। তারা বর্তমানে এতই পাওয়ারফুল! কাজেই বুঝহ স্বজন!
আর তারা ফেসবুকে ফোটোকপি দিয়ে তারা যে কত সত্য– কত নিখুঁত তা প্রমাণ করতে চাইছেন। একেবারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের সংরক্ষিত ও গোপন নথিপত্র উদ্ধৃত করার ক্ষমতা তারা রাখে। একটা-দু’টো নথি নয়– নথির বন্যা।
কিন্তু অনেক সময় নথিও ভুল ধারণা তৈরি করে। যেমন আগে বলা হত– ছবি (স্টিল বা ভিডিয়ো) কখনও মিথ্যে কথা বলে না। কিন্তু ছবি ও ভিডিয়ো ব্যবহার করেও যে দেদার মিথ্যো কথা প্রমাণ করার চেষ্টা চলে– তারও অগুনতি প্রমাণ রয়েছে।
সম্প্রতি ফেসবুকে উঠে এসেছে একটি কাহিনি। সেটি হচ্ছে– আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন হিন্দু ছাত্র দেবব্রত ব্যানার্জি স্কলারশিপ পাচ্ছেন না। আর সেই সমস্যার সমাধান জিম নওয়াজ সাহেব চোখের পলকে করে দিলেন। জিম নওয়াজ পুরো কাহিনিটি তাঁর নিজের ফেসবুক পেজে উদ্ধৃত করেছেন। দেবব্রত ব্যানার্জি এই কাহিনিটি ফেসবুকে বর্ণনা করেছেন এভাবেঃ ‘সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ছাত্রছাত্রীরা ডব্লিউবিএমডিএফসি থেকে স্কলারশিপ পেলেও আমাদের সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের ছাত্রছাত্রীদের স্কলারশিপ দেওয়া হয়নি। গতবছর আমরা সকলেই ২৩৯০০ টাকা করে পেয়েছিলাম। এবার এক টাকাও পাইনি। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেছি। তাঁকে জানানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু তিনি গুরুত্ব দেননি। এক পর্যায়ে তিনি জানিয়ে দেন– আমরা সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের ছাত্রছাত্রীরা ঐক্যশ্রী স্কলারশিপ পাব না– পাওয়ার যোগ্য নই। এ বিষয়ে উপাচার্য আলোচনা তো দূরের কথা– সান্ত্বনা দেওয়ার প্রয়োজনটুকু মনে করেননি। হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। স্কলারশিপের প্রয়োজন থাকলেও পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। আমরা সংখ্যালঘু নয় বলেই কি উপাচার্য আমাদের গুরুত্ব দিলেন না! স্কলারশিপ পাইয়ে দেওয়ার বিন্দুমাত্র প্রচেষ্টা করলেন না! নিজের অজান্তেই সাম্প্রদায়িক ভাবনাও উঁকি দিয়েছে। স্কলারশিপ নিয়ে ভাবনা একেবারেই ছেড়ে দিয়েছি– এমন সময় গত বুধবার সকাল দশটা নাগাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার জুনিয়র কম্পিউটার সায়েন্সের ছাত্র জুয়েল রানার ফোন এল। আমায় বলল– এনামুলদার সঙ্গে কথা বলে সকাল ১১টার সময় টেকনোপলিশ বিল্ডিংয়ের সামনে দাঁড়াতে হবে। এনামুলদার সঙ্গে যোগাযোগ করে নির্দিষ্ট সময়ে আমরা দু’জনে টেকনোপলিশ বিল্ডিংয়ের সামনে দাঁড়িয়ে পড়লাম। কিছুক্ষণ পরেই সিলভার কালারের একটি হোন্ডা সিভিক (!) গাড়ি এসে আমাদের সামনে দাঁড়াল। পিছনের সিটে দু’জনে উঠে পড়লাম। গাড়ি চলতে শুরু করল। গাড়ির সামনের সিটে বসে থাকা ব্যক্তির সঙ্গে পরিচয় হল। নাম— জিম নওয়াজ। নামের সঙ্গে আগে থেকেই পরিচিত ছিলাম। আমার নাম জানতে চাইছেন। বললাম। স্কলারশিপের বিষয় নিয়ে জানতে চাইলেন। জানালাম। কথা বলতে বলতে আমরা গন্তব্যস্থলে পৌঁছে গেলাম। গাড়ি থেকে নেমে দু’টো-তিনটে সিকিউরিটি পেরিয়ে একটি বিশেষ জায়গায় পৌঁছে রিসেপশনের সোফায় বসে অপেক্ষা করতে শুরু করলাম। কিছুক্ষণ পরেই আমাদের ডাক পড়ল– ভিতরে ঢুকে বুঝলাম জিমদা আগে থেকেই সব বলে রেখেছিলেন। আমায় বলতে বলা হল। দু-তিন মিনিটের ভিতর বিষয়টি বললাম। শোনার পরেই অতিসত্বর সকল নন মাইনরিটি ছাত্রছাত্রীদের স্কলারশিপ দেওয়ার জন্য ডব্লিউবিএমডিএফসি-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর মৃগাঙ্ক বিশ্বাসকে নির্দেশ দিলেন। আমি এবং এনামুলদা বাইরে বেরিয়ে এলাম। জিমদা ভিতরে আরও বেশ কিছুক্ষণ থাকার পরে বেরিয়ে এলেন। তিন মাস ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে ঘোরাঘুরি করেও যে সমস্যার সমাধান হয়নি– উপাচার্য বিন্দুমাত্র আন্তরিকতা দেখাননি– সেই সমস্যা মাত্র পাঁচ মিনিটের ভিতর সমাধান হয়ে গেল! অনেকটা স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছিল। জিমদা আমার দিকে চেয়ে হাসতে হাসতে বললেন– দেবব্রত আমায় তোমরা মিষ্টি খাওয়াবে কিন্তু। অনেকটা হাত জোড় করে জিমদাকে বললাম– দাদা শুধু মিষ্টি খাবেন! এত সহজে আমাদের সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বুঝিনি। আপনি না থাকলে হত না। আপনি যা খেতে চাইবেন– তাই খাওয়াব। জিমদা বললেন– মজা করছিলাম। আমায় খাওয়াতে হবে না। তোমাদের প্রাপ্য তোমরা পাচ্ছ। আমার কর্তব্য আমি করেছি। শুধু মনে রাখবে– কখনোই অন্যায়কে প্রশ্রয় দেবে না। অন্যায়ভাবে কিছু পাওয়ার জন্য কাউকে কোনও টাকা বা অন্য কিছু দেবে না। সৎ পথে থাকবে। জিমদা আপনাকে দেখলাম– আপনার কাজ দেখলাম– আপনার নিঃস্বার্থভাবে পরোপকারী মানসিকতা দেখলাম– আপনার কথা শুনলাম– আপনার সম্পর্কে যে যতই মিথ্যাচার করুক– কুৎসা করুক আপনি আমাদের অন্তরে থাকবেন– শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় থাকবেন। সুস্থ থাকুন– ভালো থাকুন।’
দেবব্রত ব্যানার্জির বয়ানে জিম নওয়াজ সাহেবের ওয়ালে নওয়াজ সাহেবের সার্থক পদক্ষেপ এবং প্রশংসার এখানেই ইতি।
যেহেতু লেখাটি দেবব্রত ব্যানার্জির ওয়াল থেকে জিম নওয়াজ সাহেব নিজের ফেসবুক ওয়ালে পোস্ট করেছেন– সেক্ষেত্রে বুঝতে হবে লেখার প্রায় প্রতিটি বাক্যের সঙ্গে জিম নওয়াজ সাহেবের সম্মতিও জড়িয়ে রয়েছে। প্রথমে নওয়াজ সাহেবকে ধন্যবাদ দিতে হবে। তিনি ‘মুসলিম প্রধান আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে’ একজন হিন্দু তরুণের স্কলারশিপ থেকে বঞ্চিত হওয়ার মর্মান্তিক বঞ্চনার অবসান ঘটিয়েছেন। নিজের ওয়ালে তুলে ধরা লেখাটিতে বেশ কিছু আত্মপ্রচারও রয়েছে। তবে তা থাকতেই পারে। সিলভার কালারের হোন্ডা সিটিতে সওয়ার হয়ে মোদির কল্যাণে মহার্ঘ তেল পুড়িয়ে তিনি যেভাবে দেবব্রত ব্যানার্জি ও অন্য হিন্দু ছাত্রছাত্রীদের স্কলারশিপ বঞ্চনার অবসান ঘটালেন– তা কিন্তু মুখের কথা নয়।
কিন্তু আসল বিষয়টি কি? দুঃখজনকভাবে দেবব্রত ব্যানার্জি তার প্রাপ্য স্কলারশিপের অর্থ পাচ্ছিলেন না। দেবব্রত ব্যানার্জির উদ্ধৃত করা আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি নাকি বলে দিয়েছিলেন ‘সংখ্যাগুরু (হিন্দু) সম্প্রদায়ের ছাত্র-ছাত্রীরা ঐক্যশ্রীর স্কলারশিপ পাব না– পাওয়ারও নাকি যোগ্য নই।’ দেবব্রত ব্যানার্জি দুঃখ করে লিখেছেন– ‘সেই সময় তার মনে সাম্প্রদায়িক ভাবনাও উঁকি দিয়েছিল।’ আর হওয়ারই কথা– ভারতবর্ষ তথা পশ্চিমবঙ্গ হিন্দু প্রধান রাষ্ট্র এবং রাজ্য। আর খোদ হিন্দুরাই যদি এখানে বঞ্চিত হয়– অভিযোগ জানিয়েও প্রতিকার না হয়– তবে হিন্দুরা কোথায় যাবে? আর বিষয়টি বিজেপির কানে গেলে তো চরম সর্বনাশ। এপার বাংলায় হিন্দু বঞ্চনার একটি জ্বলন্ত নজির তারা হাতে পেয়ে যেত। আর প্রচার শুরু করত– পশ্চিমবাংলায় হিন্দু ছেলেমেয়েরা স্কলারশিপ পায় না। কিন্তু নওয়াজের চেষ্টায় হিন্দু ছাত্র-ছাত্রীদের বঞ্চনা দূর হল। পশ্চিমবঙ্গ একটি মারাত্মক বদনামের হাত থেকে রক্ষা পেল।
কিন্তু অনেকেই বলছেন– আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি সম্ভবত তথ্যে ভুল করেননি। ঐক্যশ্রী স্কলারশিপটি মূলত সংখ্যালঘুদের জন্যই। আর হিন্দু ছাত্র-ছাত্রীদের যে স্কলারশিপ দেওয়া হয় তাহল ‘স্বামী বিবেকানন্দ মেরিট কাম মিনস স্কলারশিপ’। তবে কি দেবব্রত ব্যানার্জি ঐক্যশ্রীতে আবেদন করেছিলেন– নাকি ‘স্বামী বিবেকানন্দ মেরিট কাম মিনস স্কলারশিপ’ এ? তিনি ‘স্বামী বিবেকানন্দ মেরিট কাম মিনস স্কলারশিপ’-এ যোগ্য হলে এমএএমই-র আধিকারিকরা তা কখনই প্রত্যাখ্যান করতে পারেন না। ভারতবর্ষ এখনও সেক্যুলার রাষ্ট্র। এখানে সংখ্যাগুরু হিন্দুদেরকে এভাবে বঞ্চিত করা সম্ভব নয়!
কিন্তু কেউ কেউ প্রশ্ন করছেন– জিম নওয়াজ কীভাবে ঐক্যশ্রী স্কলারশিপ সংখ্যাগুরু হিন্দু ছাত্র-ছাত্রীদের পাইয়ে দিলেন? তাদের জন্য তো স্বামী বিবেকানন্দ স্কলারশিপ রয়েছে। নাকি এমএএমই-তে যে আধিকারিকরা এতদিন ধরে সাফল্যের সঙ্গে বিভিন্ন স্কলারশিপ বণ্টন করে চলেছেন– তাঁরা নওয়াজ বর্ণিত কর্তাব্যক্তির চাপের ফলে সরকারি নিয়ম ভেঙে ‘ঐক্যশ্রী-ই স্কলারশিপ’ দেবব্রত ব্যানার্জিকে দিয়ে দিলেন।
সে যাই হোক– কোনও একটি স্কলারশিপ দেবব্রত ব্যানার্জি পাওয়াতে আমরাও খুশি। কিন্তু বিলম্বের জন্য দায়ী কে– আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় নাকি এমএএমই? কারণ– দু’টি স্কলারশিপই দেয় এমএএমই দফতর। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কেবল আবেদনে রেফার করতে পারে মাত্র।
‘তবে দু-তিনটি সিকিউরিটি পেরিয়ে বিশেষ জায়গায় পৌঁছনোর পর’ মৃগাঙ্ক বিশ্বাসকে কোন ব্যক্তি ‘সকল নন মাইনরিটি’ ছাত্র-ছাত্রীদের স্কলারশিপ দেওয়ার নির্দেশ দিলেন– তা কিন্তু ঠিক বোঝা যায়নি। কারণ– নওয়াজ বা দেবব্রত তাঁর নামটি সযত্নে এড়িয়ে গেছেন। কিন্তু একটা প্রশ্ন থেকে যায়– নন মাইনরিটি ছাত্র-ছাত্রীদের স্কলারশিপকে আটকে রেখেছিল? এবং কার নির্দেশে? কেন ভারতবর্ষের হিন্দু ছাত্র-ছাত্রীদের তাদের প্রাপ্য স্কলারশিপ পেতে এত হেনস্থা হতে হল? এতে তো আখেরে তৃণমূল সরকারেরই বদনাম হল। এই ব্যক্তিদের কিন্তু চিহ্নিত করা প্রয়োজন।
যারা পশ্চিমবাংলায় সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্পকে আরও হাওয়া দিতে চায়– তাদের কিন্তু কাজে লাগবে এই তথ্যগুলি।
জিম নওয়াজ সাহেব ফেসবুকে ‘পুবের কলম’ এর নামটিও ব্যবহার করেছেন। ‘পুবের কলম’এর একটি খবর উল্লেখ করে জিম নওয়াজ রায় দিয়েছেন– ‘পুরোটাই ঢপ খবর’। খবরটি ছিল– আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অচলাবস্থা ও সংকট নিরসনে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ এবং সাংসদ ও সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঐকান্তিক প্রয়াসে নবান্নে একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। মূল বিষয় ছিল– কেন আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রদত্ত আর্থিক বরাদ্দ আটকে রাখা হয়েছে? এতে উপস্থিত ছিলেন মাননীয় মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম– রাজ্যের মুখ্যসচিব এইচ কে দ্বিবেদী– অর্থনীতি বিষয়ক সচিব– এমএএমই দফতরের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি গোলাম আলি আনসারি– আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মুহাম্মদ আলি প্রমুখ। ‘পুবের কলম’ খবরটি সঠিকভাবে পরিবেশন করে বলে– আলিয়ার আর্থিক সংকট নিরসনের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তবে যাঁরা উপস্থিত ছিলেন তাঁদের তালিকা ছিল অসম্পূর্ণ। কারণ– ওই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে সভাপতিত্বকারী মাননীয় মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের নামটি আমাদের রিপোর্টার লেখেননি। এজন্য ‘পুবের কলম’ আগেই দুঃখ প্রকাশ করেছে। আর এর জন্য ‘পুবের কলম’ এর রিপোর্টারও সম্পূর্ণ দায়ী ছিলেন না। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য জনাব মুহাম্মদ আলিকে বৈঠক শেষে ফোনে প্রশ্ন করা হয়– ওই সংকটমোচন বৈঠকে কে কে উপস্থিত ছিলেন? উপাচার্য যেকোনও কারণেই হোক ওই বৈঠকের মুখ্য ব্যক্তিত্ব মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের নামটি উল্লেখ করেননি। জিম নওয়াজ বর্ণিত ওই ‘ঢপ-এর খবর’এ আলিয়ার আর্থিক সংকট নিরসনের খবরটি কিন্তু যথার্থই ছিল। নওয়াজ সাহেব মূল খবরটি ভুল ছিল– এমনটি বলতে পারেন না।
আর বিভিন্ন পত্রিকায় কখনও কখনও এই ধরনের ভুল বা অসম্পূর্ণ খবর প্রকাশিত হয়। যেমন ১২ সেপ্টেম্বর পুবের কলম’এ একটি খবরের শিরোনাম ছিল ‘মিথ্যার বেসাতিতে ব্যবহৃত হচ্ছে ভিডিয়ো গেমের ফুটেজ’। এমনকী ‘আনন্দবাজার পত্রিকা’র পোর্টালেও কয়েকদিন আগে একটি খবর ছিল– ‘কার্গিলে যুদ্ধ করা পাকিস্তানি বাহিনীই আফগানিস্তানে পাঞ্জশির দখল করেছে।’ কিন্তু খবরটি অন্য আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে গুরুত্ব পায়নি। সম্ভবত আনন্দবাজার কোনও ভুল সূত্র থেকে এই খবরটি বেছে ছিল।
আসলে সংবাদপত্রেও অসম্পূর্ণ খবর যাওয়া বিরল নয়। আনন্দবাজারের মূল খবরটি ছিল– আফগানদের পাঞ্জশির দখল। আর ‘পুবের কলম’-এর মূল খবর ছিল– আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আটকে রাখা অর্থ বরাদ্দ বন্ধ থাকার ফলে সৃষ্ট সংকট অবিলম্বে দূর হতে চলেছে। খবরটি ‘পুবের কলম’ই প্রথম ‘ব্রেক’ করে।
আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের যে সংকট নিয়ে পশ্চিমবাংলায় সংখ্যালঘু ছাত্র-ছাত্রী– অভিভাবক– বিদ্বজ্জন ও সুধী সমাজ প্রবল উদ্বিগ্ন ছিলেন– তাকে জিম নওয়াজ সাহেব আখ্যা দিয়েছেন ‘পুরোটাই ঢপ খবর’। বোঝা মুশকিল– সংকট নিরসনের খবরটি কেন নওয়াজ সাহেবের ‘ঢপ’ মনে হল! তবে হতেই পারে। কারণ– জিম নওয়াজ সাহেবেরও তো নিজস্ব একটি পছন্দ আছে। গণতান্ত্রিক দেশে ‘পসন্দ আপনা আপনা’ তত্ত্বকে তো উপেক্ষা করা যায় না!