পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষকে ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে উঠল মণিপুর। শুক্রবার গভীর রাতে মণিপুরের বিষ্ণুপুরের উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনায় তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। একাধিক বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। রাত দুটো নাগাদ নতুন করে সংঘর্ষ ছড়ায় বিষ্ণুপুরের কোয়াকতা এলাকায়। মেইতেই ও কুকি সম্প্রদায়ের সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন মেইতেই সম্প্রদায়ের অন্তত তিন জন। মৃতদের মধ্যে বাবা–ছেলে রয়েছে। এই ঘটনার পরেই কুকি জনগোষ্ঠীর একাধিক বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। নিহতরা হলেন ইউমনাম পিশাক মেইতি (৬৭) এবং তাঁর ছেলে ইউমনাম প্রেমকুমার মেইতি (৩৯) এবং প্রতিবেশী ইউমনাম জিতেন মেইতি (৪৬)৷ আহত হয়েছেন আরও দুজন।
পুলিশ সূত্রে খবর, দুই জনগোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ রুখতে যে বাফার জোন তৈরি করা হয়েছে, শুক্রবার রাতে সেই সীমানা পেরিয়েই কয়েকজন ঢুকে পড়ে এবং গুলি চালায়। এর পরেই নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। একাধিক বাড়িতে ভাঙচুর সহ আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে।
দুই দিন আগেও সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে মেইতেই গোষ্ঠীর বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষে বিষ্ণুপুরে উত্তেজনা ছড়িয়েছিল। শনিবার মণিপুরের ২৭ টি বিধানসভা কেন্দ্রের সমন্বয়কারী কমিটির ডাকা ২৪ ঘন্টার সাধারণ ধর্মঘট ইম্ফল উপত্যকায় স্বাভাবিক জীবনকে অচল করে দিয়েছে। প্রায় সমস্ত এলাকায় বাজার এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। খুব সংখ্যক রাস্তায় চলাফেরা করছে। মধ্যরাত থেকে ডাকা ধর্মঘটের কারণে বন্ধ স্কুল -কলেজ সহ সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তবে পার্বত্য জেলাগুলিতে তেমন প্রভাব পড়েনি।
প্রায় তিনমাস ধরে কুকি ও মেইতেই মধ্যে চলা সংঘর্ষে উত্তেজনা ছড়িয়ে পাহাড় ঘেরা এই মণিপুর রাজ্যে। ঘটনায় প্রায় শতাধিক মানুষের জীবনহানি হয়েছে, আহত বহু। প্রায় ৫০ হাআর মানুষ আশ্রয় নিয়েছে ত্রাণ শিবিরে। এর মধ্যে ফের গণকবর নিয়ে উত্তেজনা ছড়ায়। সহিংসতায় বিধ্বস্ত দুই জেলা চূড়াচাঁদপুর ও বিষ্ণুপুরের মধ্যবর্তী পার্বত্য গ্রাম হাওলাই খোপিতে তাঁদের সমাজের ৩৫ জনকে গণকবর দিতে চেয়েছিলেন কুকি জনগোষ্ঠীসহ বিভিন্ন উপজাতীয় সমাজের প্রতিনিধিরা। তীব্র প্রতিবাদ জানায় মেইতেই সমাজের মানুষ। তাঁদের বক্তব্য ছিল, ওই অঞ্চলকে একটি সমাধিস্থল বা কবরস্থানে পরিণত করা যাবে না। প্রায় ২৫ জনের বেশি আহত হয়। সেনা ও র্যাফ নামানো হয়। কাঁদানে গ্যাস ছোঁড়া হয়। বিষ্ণুপুরের কাংগভি ও ফুচাকগাও অঞ্চলে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে এগিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ সেই মিছিল আটকায়। তখনই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।ঘটনায় হস্তক্ষেপ করে আদালত। এর মধ্যেই ফের পুলিশ ক্যাম্পের অস্ত্রাগারের মধ্যে ঢুকে অস্ত্র লুট করেছে একদল মানুষ। ‘ঘাতক’ সিরিজের একে অ্যাসল্ট রাইফেল, ১৯০০০ হাজার বুলেট ও বিভিন্ন ধরনের গ্রেনেড লুট করে নিয়ে গেছে তারা। ১৯৫টি সংক্রিয় রাইফেলস, পাঁচটি এমপি বন্দুক, ১৬৯ এমএম পিস্তল, ২৫টি বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট, ২১ কার্বাইন, ১২৪ হ্যান্ড গ্রেনেড।