পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: গুজরাতের মোরাবি জেলায় মেচ্ছু নদীর উপরে অভিশপ্ত ব্রিজ বিপর্যয় প্রাণ কেড়েছে ১৪১ জনের। এই ঘটনায় কাঠগড়ায় বেসরকারি সংস্থা ওরেভা কোম্পানি। কারণ ১৫০ বছরের এই পুরনো সেতু রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ছিল এই সংশ্লিষ্ট কোম্পানিটির কাঁধে।
এবার এই মর্মান্তিক ঘটনায় মৃত্যুর কারণ ব্যাখ্যা করে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির ম্যানেজার জানালেন ‘সবই ঈশ্বরের ইচ্ছে’। ওরেভা কোম্পানির ম্যানেজার দীপক পারেখের এই মন্তব্য নিয়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। ব্রিটিশ আমলের এই ব্রিজের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে ছিল এই ওরেভা কোম্পানি। যাদের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ উঠেছে।
ব্রিজ দুর্ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ৯ গ্রেফতার হয়েছে। এই ৯ জনের মধ্যে রয়েছেন ওরেভা কোম্পানির ম্যানেজার দীপক পারেখ। আদালতের মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট এম জে খানের সামনেই এমনই মন্তব্য করেন পারেখ।
মোরাবির ডেপুটি সুপারিনটেনডেন্ট অফ পুলিশ পিএ জালা আদালতকে জানান, গুজরাতের মেচ্ছু নদীর উপরে ঝুলন্ত ব্রিজটির তারটিতে মরচে ধরে গিয়েছিল। সেটিকে সারিয়ে লাগানো হয়নি।
পিএ জালা আরও জানিয়েছেন, সেতুটি একটি কেবল তারের ওপরে ছিল। সেটির কোনোরকম রক্ষণাবেক্ষণ, অয়েলিং বা গ্রিসিং করা হয়নি। ফলে ‘কেবল’ তারটিতে মরচে ধরে গিয়েছিল। অত্যাধিক ভারের চাপে সেটি ভেঙে পড়ে। যদি কেবলটিকে সারানো হত, তাহলে এই ঘটনা এড়ানো হয়তো সম্ভব হত।
আইনজীবী আদালতে জানান, ঠিকাদাররা সর্ব জনসাধারণের জন্য ব্যবহৃত ইমরাৎ সারানোর জন্য সঠিকভাবে প্রশিক্ষিত, অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ছিলেন না। তার পরেও এই ঠিকাদারদের ২০০৭ ও ২০২২ সালে সেতু রক্ষণাবেক্ষণের কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। সেতুর মেঝেটি মেরামত করা হয়েছিল। কিন্তু যেহেতু কেবল তারগুলিকে সারানো হয়নি, তাই মরচে ধরা কেবল তারগুলি মেরামত করা মেঝের ভার নিতে পারেনি।
অন্যদিকে এই ঘটনার পর পরই ওরেভার ব্যবস্থাপনা পরিচালক জয়সুখভাই প্যাটেল প্রকাশ্যে দাবি করেছিলেন যে, সংস্কার করা সেতুটি কমপক্ষে আট থেকে দশ বছর পরিষেবা দিতে সক্ষম। কিন্তু এই দুর্ঘটনার পর থেকেই বেপাত্তা জয়সুখভাই প্যাটেল। সেতুটি পুনরায় খোলার দিন প্যাটেলকে তার পরিবারের সঙ্গে দেখা গিয়েছিল শেষবার, তার পর থেকে তাকে আর দেখা যায়নি। দুর্ঘটনার পর থেকেই আহমেদাবাদের ওরেভা কোম্পানিটির ফার্ম হাউসটি তালাবন্ধ অবস্থায় পড়ে আছে। পুলিশের এফআইআরে যারা কোম্পানিটিকে এই ব্রিজ রক্ষণাবেক্ষণের চুক্তিটি দিয়েছিলেন সেই ওরেভার শীর্ষ কর্তাদের নামের কোনও উল্লেখ নেই। ওরেভা কোম্পানির ম্যানেজার দীপক পারেখ সহ দুই সাব কন্ট্রাক্টরকে শনিবার পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে পাঠানো হয়েছে। নিরাপত্তারক্ষী এবং টিকিট বুকিং ক্লার্ক সহ আরও পাঁচজন ধৃত ব্যক্তিকে বিচার বিভাগীয় হেফাজতে রাখা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ৩০ অক্টোবর সন্ধ্যা নাগাদ একদিকে ছটপুজো আর অন্যদিকে দীপাবলির পর রবিবার সেতুটিতে পর্যটকদের ভিড় উপচে পড়ে। গুজরাতি নববর্ষের কথা মাথায় রেখে গত ২৬ অক্টোবর সরকারের অনুমতি ছাড়াই সেতুটিকে সাধারণের ব্যবহারের জন্য খুলে দেওয়া হয়। এর পরেই ব্রিজটিতে ক্রমশ ভিড় হতে শুরু করে। শনিবার বহু মানুষের ভিড়ে ঠাসা ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। এর পর রবিবার সেই অভিশপ্ত দুর্ঘটনা ঘটে। মৃত্যু হয় ১৪১ জনের।