পুবের কলম, ওয়েবডস্ক: এ যেন নিজেকেও ছাপিয়ে যাওয়া। সেই অসাধ্যসাধনই করে দেখিয়েছে গুজরাতের এসি মিস্ত্রির ছেলে রাজিন মনসুরি (২৩)।
‘কমন অ্যাডমিশন টেস্ট’ (ক্যাট)। নামটা শুনতে বেড়ালের মতো সহজ হলেও পরীক্ষাটা মোটেই তা নয়। কঠোর অধ্যাবসায় ও প্রখর মেধা না থাকলে ম্যানেজমেন্টের এই দুর্গম পরীক্ষায় সাফল্য পাওয়া অসম্ভব। আর সেই অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখিয়েছে রাজিন। তাও একবার নয়, পরপর দু’বার। প্রথমবার (২০২১ সাল) ক্যাট পরীক্ষা দিয়ে ৯৬.২০ শতাংশ নম্বর পেয়েছিল সে। এই সাফল্যে বাড়ির সবাই ও বন্ধু-বান্ধবরা খুশি হলেও খুশি হতে পারেনি রাজিন। কারণ, সে জানত ‘মাত্র’ ৯৬ শতাংশ নম্বরে তার মেধাকে বেঁধে রাখা সম্ভব নয়। তাই প্রথমবারের রেজাল্ট নাপসন্দ হওয়ায় পরেরবার ফের পরীক্ষায় বসে সে। এবার সাফল্য কার্যত ‘আত্মসমর্পণ করল তার কাছে। ২০২২ সালের ২৭ নভেম্বর। স্কোরবোর্ড দেখাচ্ছে রাজিনের প্রাপ্ত নম্বর ৯৯.৭৮ শতাংশ। অর্থাৎ, প্রায় ১০০ শতাংশ বললেও অত্যুক্তি হয় না।
প্রথমবারের পরীক্ষাতে যে নম্বর রাজিন পেয়েছিল তাতে সে অনায়াসেই যে কোনও ভাল কলেজে ভর্তি হতে পারত। সেইমতো ‘আইআইএ উদয়পুর’-এ সুযোগও মিলেছিল। কিন্তু, এতে সন্তুষ্ট ছিল না রাজিন। পরের বছর পরীক্ষায় প্রায় ১০০ শতাংশ নম্বর পাওয়ায় এখন আইআইএম বেঙ্গালুরু ও আইআইএম কলকাতা’য় পড়াশোনার সুযোগ মিলেছে। রাজিন কলকাতা থেকেই এমবিএ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
রাজিনের কথায়, ‘দেশের দু’টি শীর্ষস্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ভর্তির সুযোগ আসায় আমি রীতিমতো রোমাঞ্চিত। আইআইএম কলকাতাই আমার পছন্দ।’
রাজিন জানিয়েছে, বেঙ্গালুরুতে ‘বিজনেস অ্যানালিটিক্স’-এ পড়ার সুযোগ পেয়েছিল। আর কলকাতায় জেনারেল এমবিএ পড়ার সুযোগ রয়েছে তার সামনে। সে কলকাতা থেকেই এমবিএ করতে চায়। কোর্স ফি প্রায় ২৭ লক্ষ টাকার মতো। তবে বিপুল অঙ্কের কোর্স ফি’তেও খুব একটা সমস্যা হবে না বলেই জানিয়েছে সে। রাজিন আত্মবিশ্বাসী ব্যাঙ্ক থেকে উচ্চশিক্ষা ঋণ ও স্কলারশিপের টাকাতেই কোর্স ফি মেটাতে পারবে সে।
একজন এসি মিস্ত্রির ছেলে। খুবই সাদামাটা পরিবার। সেখান থেকে এই কঠিন পরীক্ষায় সাফল্য—যাত্রাপথ কিন্তু মোটেই সহজ ছিল না রাজিনের পক্ষে। রাজিন জানিয়েছে, তাদের পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। পালদিতে একটি ঘরে বাবা-মা ও ছোট ভাইয়ের সঙ্গে থাকত সে। ফলে রাতে পড়ার সময় আলো অল্প করে রাখতে হত, যাতে অন্যদের ঘুমের ব্যাঘাত না হয়।
পড়াশোনায় সেই ছোট থেকেই অত্যন্ত মেধাবী রাজিন। দুর্দান্ত রেজাল্টের জন্য স্কুল পড়ার সময় থেকেই নিয়মিত স্কলারশিপ পেয়ে আসছে সে। সি এন বিদ্যালয় থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর ভর্তি হয় আহমদাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানেও সে স্কলারশিপ পায়। ২০২২ সালের মে’তে সে আইটি’তে ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পন্ন করে। ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করার পর বছরে ৬ লক্ষ টাকার চাকরির অফার পেয়েছিল রাজিন। কিন্তু, সেই চাকরি সে করেনি।
রাজিনের কথায়, ‘আম চাকরিতে ঢুকিনি কারণ আমার স্বপ্ন ছিল ভালো কোনও আইআইএম-এ ভর্তি হওয়া। সেইমতো আমি ‘ক্যাট’- এর জন্য নতুন করে প্রস্তুতি শুরু করে দিই। সেইমতো ২০২১ সালে পরীক্ষায় বসি। কোনও কোচিং ছাড়াই ৯৬ শতাংশের বেশি নম্বর পাই। কিন্তু, এই নম্বরে আমি খুশি ছিলাম না। এরপর অবশ্য কোচিং নিয়েছিলাম, কারণ সেখানে আমাকে অর্ধেক কোর্স ফি’তে পড়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল।’ রাজিনের কোচিং ক্লাসের মেন্টর সতীশ কুমার জানান, রাজিন অত্যন্ত মেধাবী। আইআইএম-এ আসন সংখ্যা খুব কম। পরীক্ষার্থী প্রায় ২-৩ লক্ষ। এমনকী হার্ভার্ড, স্ট্যানফোর্ডের থেকেও এখানে সুযোগ পাওয়া কঠিন। আর রাজিন জানিয়েছে, আইআইএম থেকে পড়া শেষ করার পর সে সমাজের পিছিয়ে থাকা শ্রেণিকে সাহায্য করার চেষ্টা করবে যাতে তারও তাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে।
উল্লেখ্য, ক্যাট হচ্ছে সর্বভারতীয় ম্যানেজমেন্ট পরীক্ষা। দেশে ২০টি আইআইএম ও ১০০টি’র মতো বি-স্কুলে (বিজনেস ইনস্টিটিউট) পড়ার সুযোগ রয়েছে। প্রতি বছর ২ থেকে আড়াই লক্ষ ছাত্র-ছাত্রী ক্যাট পরীক্ষা দেয়। সুযোগ পায় মাত্র কয়েক হাজার।