পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: আজও বাংলা ভাষা দিবস। ১৯৬১ সালের এ দিন অসমের শিলচরে বাংলা ভাষায় জন্য প্রাণ দিয়েছিলেন ১১ জন বাঙালি। আর আজকের এই বিশেষ দিনেই ইন্তেকাল করলেন বাংলাদেশের খ্যাতনামা সাংবাদিক ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গানটির রচয়িতা আবদুল গাফফার চৌধুরী। এ দিন, ১৯ মে, ভারতীয় সময় সকাল ৭টায় লন্ডনের বার্নেট হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন তিনি (ইন্নালিল্লাহি…)। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর।
তাঁর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন ইংল্যান্ডে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাঈদা মুনা তাসনিম। তাঁর কথায়, ‘গাফফার চৌধুরী গত কয়েকদিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। তাঁর মেয়ে আমাকে বলেছেন, আজ সকাল ৭টায় তিনি প্রয়াত হয়েছেন। আমরা গভীরভাবে শোকাহত।’
গাফফার চৌধুরী বাংলাদেশের ইতিহাসে অনেক বাঁক-মোড়ের সাক্ষী। তিনি ১৯৭১ সালের মুজিবনগর সরকারের মুখপত্র সাপ্তাহিক ‘জয়বাংলা’র প্রধান সম্পাদক ছিলেন। ১৯৭৪ সাল থেকে লন্ডনে বসবাস করলেও মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু ও উদার মূল্যবোধের সমর্থনে তিনি সর্বদা সোচ্চার ছিলেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মুহাম্মদ আবদুল হামিদ তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। গাফফার চৌধুরী ডায়াবেটিস ও কিডনি রোগে ভুগছিলেন। দুই মাস আগে লন্ডনের নর্থ উইক হাসপাতালে ভর্তি হন।
মাত্র এক মাস আগে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৪ এপ্রিল মাসে তাঁর কনিষ্ঠ কন্যা বিনীতা চৌধুরী মারা যান। ক্যানসার তাঁকে কেড়ে নেয়। গাফফার চৌধুরীর পাঁচ সন্তানের মধ্যে বিনীতা ছিলেন তৃতীয়। তিনি লন্ডনে তাঁর বাবার সঙ্গে থাকতেন এবং গাফফার চৌধুরীর যত্ন নিতেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৫০ বছর। সেই শোক আর কাটিয়ে উঠতে পারেননি গাফফার চৌধুরী।
বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার উলানিয়া চৌধুরী পরিবারে ১৯৩৪ সালের ১২ ডিসেম্বর জন্ম গ্রহণ করেন আবদুল গাফফার চৌধুরী। সাংবাদিকের তিনি ছিলেন একজন বাংলাদেশি গ্রন্থকারও। লিখে গিয়েছেন অসংখ্য উপন্যাস এবং স্মৃতিকথা। এ ছাড়াও ছোটদের উপন্যাস লেখক হিসেবেও তিনি বেশ জনপ্রিয় ছিলেন। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা প্রায় ৩০টি।
এ ছাড়াও ‘পলাশী থেকে বাংলাদেশ’, ‘রক্তাক্ত আগস্ট’, ‘একজন তাহমিনা’ প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ নাটকের রচয়িতা তিনি। পেয়েছেন স্বাধীনতা পদক, একুশে পদক, অ্যাকাডেমি পদক, বঙ্গবন্ধু পুরস্কার-সহ একাধিক সম্মাননাও। তাঁর মৃত্যুতে বাংলাদেশ-সহ এপার বাংলার সংßৃñতিমহলে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক শোক বার্তায় বলেছেন, ‘বাংলাদেশ এমন একজন কিংবদন্তিকে হারিয়েছে যিনি তাঁর লেখা এবং গবেষণার মাধ্যমে দেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করেছেন।’