গাজা, ১৫ মে: একজন ফিলিস্তিনি মা হলেন রনিম হিজাজি। ইসরাইলি হামলা থেকে গর্ভস্থ সন্তান ও তাঁর বেঁচে ফেরার গল্প শুনলে যে কেউই বিস্মিত হবেন। এই হামলায় বদলে গিয়েছে রনিমের জীবন। তিনি তাঁর এক বছরের সন্তান আজুজকে হারিয়েছেন। নিজের শরীরের কয়েকটি অঙ্গ হারিয়ে বাঁচার আশাটুকুও শেষ হতে বসেছিল রনিমের। সেদিনের ঘটনার রোমহর্ষক বিবরণ মিডিয়াকে দিয়েছেন রনিম। বলেন, গাজায় তাদের ঘরের ওপর চক্কর কাটছিল ড্রোন। জোরালো আওয়াজ হচ্ছিল তা থেকে। তাই বুঝতে পারেন খারাপ কিছু ঘটবে।
এমন সময় নিজের স্ফীত পেটের কাছে হাত রেখে গর্ভস্থ শিশুকে আগলে রেখে রনিম বলেন, ‘আমার যা হবে, ওরও তাই হবে।’ এরপর যখন হামলা হল, তখনকার কথা মনে নেই। রনিম বলেন, ‘হামলার কথা অনুভব করতে পারি না। তারপর যখন চোখ খুললাম, দেখি ধ্বংসস্তূপের নিচে।’ এরপর রনিমের জ্ঞান ফেরে। সঙ্গে সঙ্গে এক বছর বয়সী ছেলে আজুজকে চোখ ঘুরিয়ে খোঁজার চেষ্টা করেন। এক সময় রনিম তাঁর শাশুড়ির চিৎকারের শব্দ পান। তিনি বলেন, ‘আমার শাশুড়ি আজুজের দেহ আমার পেটের ওপর পেলেন। তিনি তাকে টেনে তুললেন।
তিনি আজুজের শরীরটি উঁচু করছেন। কিন্তু আজুজের মাথাটা আমার পেটের ওপর পড়ে গেল।’ এ ঘটনা ঘটে ২৪ অক্টোবরেরে। সেই দিন থেকেই বেঁচে থাকার কারণ খুঁজছেন রনিম। সেদিনের হামলার ঘটনা সম্পর্কে রনিম হিজাজি বলেন, ‘আমার পা দেখা যাচ্ছিল না। একটুকরো মাংসের সাহায্যে আমার হাত ঝুলেছিল শরীরের সঙ্গে। সেটাকে আমি টেনে আলাদা করে ফেলার চেষ্টা করি। কিন্তু পারিনি।’
এরকম জটিল অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসকরা রনিমকে বাঁচানোর আশা ছেড়েই দিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অলৌকিকভাবে ৮ মাসের অন্ত:সত্ত্বা রনিম হিজাজি তাঁর কন্যাসন্তানের জন্ম দেন। রনিম বলেন, ‘যখন আমার এই কন্যাসন্তান প্রথম নিঃশ্বাস নিল, তখন আমার ভেতর প্রাণ ফিরে এল। চিকিৎসকরা আমাকে বললেন, অলৌকিক ঘটনা এটা।’ কাতারের একটি হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে মৃদু কণ্ঠে নিজের এই কাহিনী বলছিলেন রনিম হিজাজি। তার বাম হাত কেটে ফেলা হয়েছে। দুই পা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত। তাঁর পায়ের চিকিৎসায় ‘বোন গ্রাফটিং’ পদ্ধতি ব্যবহার করা হবে।