পুবের কলম ওয়েব ডেস্কঃ নদী কখনও ধ্বংস করে। আবার কখনও গড়ে। একদিক যখন ধ্বংস হয়, তখন অন্যদিকের চর জেগে ওঠে। বিহারে ঘটেছে এমনই এক আশ্চর্য ঘটনা। জেগে উঠেছে এক পুরনো মসজিদ। যা নিয়ে হইচই পড়ে গিয়েছে বিহারে। বিহারের নওয়াদা জেলায় খরার ফলে এই মসজিদের উত্থান। ফুলওয়ারিয়া বাঁধের জলে এটি একসময় ডুবে গিয়েছিল। জল শুকিয়ে যাওয়ায় এখন চাক্ষুষ হচ্ছে পুরো মসজিদটিই। এ যেন রাখে আল্লাহ, মারে কে! তিন দশক জলের তলে থাকার পরে জেগে উঠেছে এই মসজিদটি। এটি দেখতে ভিড় করছে অনেক মানুষ।
নওজোয়ান থেকে বয়স্ক, সবার ঔৎসুক্য চিরালিয়া গ্রামের এই ‘নয়া’ দৃশ্যমান মসজিদটি নিয়ে। অনেকেই মসজিদটির কাছে গিয়ে ছবি তুলছেন। ভেতরে প্রবেশ করছেন কেউ কেউ। এতকাল পরেও মসজিদটির কাঠামো অবিকৃত থাকায় আশ্চর্য হচ্ছেন তারা। নির্মাণের কোনওরকম ক্ষতিই হয়নি। তিন গম্বুজওয়ালা মসজিদটি যেন আল্লাহর একত্ববাদ ও সর্বশক্তিমান ক্ষমতার ঐশী ঘোষণা দিচ্ছে।
এই মসজিদকে ঐতিহাসিক মসজিদ বললে ভুল হবে না। কারণ যখন এটি ত্রিশ বছর আগে দৃশ্যমান ছিল, তখনকার অনেকেই এখন আর বেঁচে নেই। তবে বৃদ্ধ যারা বেঁচে আছেন, তারা জানাচ্ছেন, এই মসজিদটির নাম ছিল নূরী মসজিদ। ১৯৮৫ সালে ফুলওয়ারিয়া ড্যাম নির্মাণের সময় এটির সলিলসমাধি ঘটেছিল। প্রথমে জলের স্তর কমতে থাকলে গম্বুজের চেহারা দৃশ্যমান হতে থাকে। তবে বিষয়টি ভালোভাবে কেউই বুঝতে পারেননি। সবার মধ্যে কৌতূহল জাগতে থাকে। এরপর জল শুকিয়ে পুরো মসজিদ সামনে আসতেই চমকে ওঠেন সবাই। এক রাতের মধ্যে জ্বিনে বানালো নাকি! কিন্তু, ইতিহাস সামনে আসতেই পরিষ্কার হয় পুরো ব্যাপারটি। মসজিদটির উচ্চতা প্রায় ৩০ ফুট। প্রাচীন মুঘল রীতিতে এটি নির্মিত বলে মনে করা হচ্ছে।
ফুলওয়ারিয়া ড্যাম নির্মাণ শুরু হয়েছিল ১৯৭৯ সালে। এখানে ছিল মুসলিমদের বেশ ভালোরকম বসবাস। তারা নিয়মিত নামায আদায় করতেন সেখানে। কিন্তু বাঁধ নির্মাণের জন্য তাদেরকে এই জায়গা ছেড়ে উঠে যেতে হয়। সরকার জায়গাটি অধিগ্রহণ করে। রাজাউলি ব্লকের অন্য আরেকটি গ্রাম হারদিয়াতে তাদের স্থানান্তর করা হয়। তবে বাঁধ নির্মাণের সময় সময় মসজিদটির কোনও ক্ষতি করা হয়নি। সেই মসজিদ এখনও অক্ষত। বয়স্ক মুরুব্বিরা বলছেন, এই মসজিদটি বিংশ শতকের প্রথমদিকে নির্মিত হয়। এখন এর বয়স প্রায় ১২০ বছর। মসজিদ নির্মাণের মুঘল রীতি অনুসরণ করা হয়েছে এতে। সেটা দেখেই বয়স অনুমান করা সহজসাধ্য হয়েছে অনেকের কাছে। তবে এমন ঐতিহাসিক মসজিদটিকে কেউ মন্দির বলে দাবি করে কি না, তাও ভাববার বিষয়। তাছাড়া জল যদি ফের বাড়ে, তবে মসজিদের ফের সলিলসমাধি হবে। আবার মানবচক্ষুর অন্তরালে চলে যাবে ইতিহাসের এক জীবন্ত মসজিদ।