পুবের কলম,ওয়েবডেস্ক: স্বামী যৌন নির্যাতন করলে সেটাও ধর্ষণ। এক মামলার পর্যবেক্ষণে এমনটাই জানাল গুজরাত হাইকোর্ট। এদিন কোর্ট আরও জানায়, ভারতীয় আইন এখনও পর্যন্ত বৈবাহিক ধর্ষণ’কে মান্যতা দেয়নি। বৈবাহিক ধর্ষণ ভারতীয় আইন অনুযায়ী অপরাধ নয়। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে হাজার হাজার মামলা সুপ্রিম কোর্টে ঝুলে রয়েছে। তবে এই বিষয়ে আমাদের নীরবতা ভাঙা প্রয়োজন। বিয়ে হয়ে যাওয়া মানেই একজন ব্যক্তিত্বের ওপর পূর্ণ অধিকার পাওয়া নয়। সম্মতির প্রয়োজন সব সম্পর্কে থাকে।
কোনও ব্যক্তি যদি মহিলাকে যৌন নির্যাতন করে তাহলে ভারতীয় দণ্ডবিধি অনুযায়ী সেটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। যদি হেনস্তাকারী ও নির্যাতিতার মধ্যে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক থাকে তাহলেও সেটা ধর্ষণ। আমাদের সমাজে এমন অনেক মহিলা যাদের ওপর প্রতিনিয়ত নির্যাতন হয়। অথচ তারা লোক-লজ্জার ভয়ে, বা কোনও আইন নেই জেনে চুপ থাকে। মামলা কোর্ট পর্যন্ত পৌঁছায় না। এমনকি ঘটনা প্রকাশ্যেও আসে না।
উল্লেখ্য, গত বছর রাজকোটের এক ব্যক্তির সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় আবেদনকারী। অভিযোগ, বিয়ের পর থেকে তাঁদের ঘরে গোপন ক্যামেরা লাগানো ছিল। এমনকি স্বামী-স্ত্রীর ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ছবি ও ভিডিয়ো তুলেছে শ্বশুরবাড়ির লোকজন। এমনকি ঘনিষ্ঠ ছবি তুলে পর্ন সাইটে বিক্রি পর্যন্ত করেছে তাঁর স্বামী। পরিবারের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপেও এই ছবি ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
মহিলার দাবি, হোটেল বিক্রি বাঁচানোর লক্ষ্যে টাকা উপার্জন করতে তাঁরা এই কাণ্ড ঘটিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন মহিলা। অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে। এই ঘটনায় জামিনের আবেদন চেয়ে গুজরাত হাইকোর্টে মামলা করেন আবেদনকারীর শাশুড়ি। তবে হাইকোর্ট তার জামিন নাকচ করে দিয়েছে।
বিচারপতি দিব্যেশ এ জোশী এদিন জানান, আপনি নিজে মহিলা হয়ে অন্য নারীর প্রতি কীভাবে এহেন নির্যাতন সহ্য করলেন। তিনি অন্য মহিলার সততা রক্ষা করার জন্য তার স্বামী এবং ছেলেকে বাধা দেননি। তিনি দুই অভিযুক্তের সমান ভূমিকা পালন করেছেন।
এদিনের শুনানিতে গুজরাত হাইকোর্টের বিচারপতি দিব্যেশ এ জোশী বৈবাহিক ধর্ষণের যুক্তি দিতে গিয়ে আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া এবং ব্রিটেনের প্রসঙ্গ টেনে আনেন। তিনি বলেন, আমেরিকার ৫০টি রাজ্য, অস্ট্রেলিয়ার ৩টি রাজ্য এবং অন্যান্য অনেক দেশে বৈবাহিক ধর্ষণ বেআইনি। অর্থাৎ এটি হল অপরাধ।
প্রসঙ্গত, ভারতীয় সংবিধানের ৩৭৫ (ব্যতিক্রম ২) ধারা অনুযায়ী, একজন স্বামী তার স্ত্রীর সঙ্গে সহবাসকে ধর্ষণ হিসেবে গণ্য করা হবে না।