নসিবুদ্দিন সরকার, হুগলি: শীত মানেই পিঠেপুলির মরশুম। আর সেই পিঠে তৈরি করতে প্রয়োজন হয় সিদ্ধ চালের গুঁড়ি, নয়তো আতপ চালের গুঁড়ি। হুগলি জেলার বিভিন্ন মুসলিম অধুষ্যিত এলাকায় গ্রাম্য ভাষায় যাকে বলা হয় সিদ্ধ চালের আটা ও আতপ চালের আটা। ওই আটা দিয়েই গোটা অগ্রহায়ণ, পৌষ ও মাঘ মাসে গৃহস্থের বাড়িতে বাড়িতে চলে পিঠেপুলি তৈরি ও খাওয়া দাওয়া। আগেকার দিনে ওই চালের গুঁড়ি বা আটা গ্রাম-গঞ্জে তৈরি করা হত ঢেঁকিতে। এক সময় শীত পড়লেই গ্রাম-গঞ্জে রাতে বিছানায় শুয়ে শুয়ে শুনতে পাওয়া যেত বাইরে থেকে আশা ধূপধাপ আওয়াজ। সেই আওয়াজ ছিল ঢেঁকিতে চালের গুঁড়ি তৈরি করার। কোথাও কোথাও একটা ঢেঁকিতে পাড়া-প্রতিবেশীরা লাইন দিয়ে সারারাত ধরে চালের গুঁড়ি তৈরি করত। অগ্রহায়ণ, পৌষ, মাঘ মাসে সেই গুঁড়ি দিয়ে তৈরি হত বিভিন্ন আকৃতির রকমারি পিঠে। খেজুর গুড় দিয়ে ওই পিঠে খেতে খুবই ভাল লাগে।
কিন্তু বর্তমান সময়ে বিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে মেশিনে তৈরি চাল গুঁড়ি বা আটা। দোকানে দোকানে প্যাকেটে করে বিক্রি হচ্ছে চালের গুঁড়ি তথা আতপ চালের আটা। এছাড়াও অনেক পরিবারে মিক্সিতে চালের গুঁড়ি বা আটা তৈরি করে নেওয়া হচ্ছে। যদিও গ্রামবাসীদের দাবি, ঢেঁকিতে তৈরি চালের গুঁড়ি বা আটার পিঠের স্বাদ ও মিষ্টতা অতুলনীয়। ওই পিঠে খেলে মেশিনে তৈরি চালগুঁড়ির পিঠে খেতে আর ইচ্ছা করবে না। তাই যন্ত্রের যুগে গ্রাম বাংলা থেকে ঢেঁকির অস্তিত্ব ধীরে ধীরে আজ বিলুপ্তির হচ্ছে। যদিও গ্রাম বাংলার কোনও কোনও এলাকায় এখনও ঢেঁকির অস্তিত্ব বিরাজমান। ঢেঁকির ঐতিহ্যকে আজও ধরে রাখতে ভুলে যায়নি বর্তমান প্রজন্ম। গোঘাটের বালি পঞ্চায়েতের শ্যামবল্লভপুর দামোদরপুর প্রভৃতি এলাকায় আজও ঢেঁকির ঐতিহ্যের ছবি দেখা যায়। শীতের মরশুমে ওই গ্রামগুলিতে কান পাতলে ঢেঁকির শধ আজও শুনতে পাওয়া যায়।