পারিজাত মোল্লা: বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে ওঠে পুলিশি হেফাজতে রহস্য মৃত্যু সংক্রান্ত মামলা।এক ব্যক্তির পুলিশ হেফাজতে মৃত্যুর অভিযোগ ওঠে। আর সেই ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে আরও বড় অভিযোগ ওঠে পুলিশের বিরুদ্ধে। কলকাতা হাইকোর্টে দায়ের হয় মামলা। এবার সেই মামলার তদন্ত করবে সিবিআই বলে জানালো ডিভিশন বেঞ্চ। পুলিশ হেফাজতে মৃত্যুর অভিযোগ ধামাচাপা দিতে মৃতের পরিবার ও আত্মীয়দের অন্য একটি খুনের মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। সেই দু’টি খুনের ঘটনা এবং পুলিশের ভূমিকা খতিয়ে দেখতে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ।
একইসঙ্গে নদিয়ার পুলিশ সুপারকেও এই রায়ের কপি পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে বিচারপতি চিত্তরঞ্জন দাশ ও বিচারপতি পার্থসারথি সেনের ডিভিশন বেঞ্চ।মুরুটিয়া থানার এই ঘটনায় পুলিশ অফিসারদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় পদক্ষেপ করতেও নির্দেশ দিয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ। নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পুলিশ সুপারকে। পুলিশ হেফাজতে মৃত্যুর মামলায় এর আগে বিচারপতি জয় সেনগুপ্তের সিঙ্গেল বেঞ্চে শুনানি হয়। গত ১৮ সেপ্টেম্বর থানার তদন্তে অসন্তোষ প্রকাশ করে সরাসরি পুলিশ সুপারকে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। পুলিশ সুপার বর্তমানে সেই তদন্ত চালাচ্ছে।
অন্যদিকে, পুলিশ হেফাজতে মৃত ব্যক্তির স্ত্রীকে অন্য একটি খুনের মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার অভিযোগে জামিনের মামলা উঠেছিল বিচারপতি জয়মাল্য বাগচির ডিভিশন বেঞ্চে। সেই মামলায় ডিভিশন বেঞ্চ যে পর্যবেক্ষণ দিয়েছিল তাতে পুলিশের বিরুদ্ধে ফাঁসিয়ে দেওয়ার অভিযোগে সারবত্তা আছে বলে ইঙ্গিত ছিল আদালতের নির্দেশে। বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ এই মামলার শুনানিতে সিবিআইকে দ্রুত নথি হাতে নেওয়ার নির্দেশ দেয়। তার পরের দু’মাসের মধ্যে গোটা তদন্ত করে রিপোর্ট দিতে হবে আদালতে।
একজনকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে পিটিয়ে মেরে দেহ ফেলে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছিল পুলিশের বিরুদ্ধে। সেই ঘটনাতেই রাজ্য পুলিশের বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্ত করার নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। এই ঘটনাটি নদিয়া জেলার মরুটিয়া থানায় এলাকার। দশ বছর আগে একটি মাদক মামলায় নাম জড়িয়েছিল এলাকার বাসিন্দা মোহন মণ্ডলের। সেই ঘটনায় আগে মোহনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছিল। পরে আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন পায় অভিযুক্ত। দশ বছর আগের সেই মামলায় চলতি বছরের ২৬ অগস্ট রাত ১টার সময় মরুটিয়া থানার পুলিশ ফের মোহনকে গ্রেফতার করার জন্য তার বাড়িতে যায়। তখন মোহন ও তার স্ত্রী পুলিশকে জানায়, সে আগেই জামিন পেয়েছে।
অভিযোগ, মোহনকে গ্রেফতার না করার জন্য পুলিশ ৩ লক্ষ টাকা দাবি করে। কিন্তু মোহন টাকা দিতে না চাওয়ায় তার ভাই শওকত মণ্ডলকে মারধর করে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। সেদিন ভোরবেলায় একটি বাঁশ বাগানে শওকতের দেহ খুঁজে পাওয়া যায়। এরপরেই পুলিশের বিরুদ্ধে অতিসক্রিয়তার অভিযোগ তুলে মামলা দায়ের করেন শওকতের স্ত্রী মঞ্জুরা বিবি। সেই মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত গত ১৮ সেপ্টেম্বর নির্দেশ দিয়েছিলেন, থানার আধিকারিকদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করতে হবে। এছাড়া পুলিশ স্টেশনের সমস্ত সিসিটিভি ফুটেজ সংরক্ষণ করে রাখা নির্দেশ দেন তিনি। শওকতের মৃতদেহের দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্ত করারও নির্দেশ দেয় আদালত।