পুবের কলম প্রতিবেদক: সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগমে প্রি-মেট্রিক ও পোস্ট মেট্রিক মিলে মোট আবেদন জমা পড়লো ৪২ লক্ষ। প্রি-মেট্রিকের আবেদনের শেষ তারিখ সম্পন্ন হয়েছে। পোস্ট মেট্রিকের আবেদনে সময়সীমা করা হয়েছে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এর ফলে আবেদন ৪৫ লক্ষ অতিক্রম করবে বলে আশা পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগমের। সংশ্লিষ্ট দফতরের এক আধিকারিক বলেন, আরও আবেদন জমা পড়বে।
এদিকে বিত্ত নিগমের ওয়েবসাইটে আবেদন জমা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে অভিযোগ আবেদন-প্রার্থীদের একাংশের। বিত্ত নিগমের ওয়েবসাইট খুলছে না। এই প্রসঙ্গে বিত্ত নিগমের এক আধিকারিক বলেন, অভিযোগ পায়নি। তবে কেন বিত্ত নিগমের ওয়েবসাইট খুলছে না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কোনও সমস্যায় যাতে পড়তে না হয়, তার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
উল্লেখ্য, সংখ্যালঘু পড়ুয়াদের স্কলারশিপ কেন্দ্র সরকার বন্ধ করার ঘোষণা দিলেও রাজ্য সরকার চালু তা চালু রেখেছে। সংখ্যালঘু স্কলারশিপ প্রদানে নজির তৈরি করে স্কচ অ্যাওয়ার্ডও পেয়েছে রাজ্য। এ রাজ্যে সংখ্যালঘু স্কলারশিপের আবেদনের সময়সীমা ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত করা হলেও পোস্ট মেট্রিকের আবেদন ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত আবেদন গ্রহণ করা হচ্ছে। রাজ্য সরকারের সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগমের তরফে ঐক্যশ্রী পোর্টালের মাধ্যমে স্কলারশিপ চালু রয়েছে। ইতিমধ্যে স্কলারশিপের আবেদন প্রক্রিয়া চলতি মাস পর্যন্ত চালু থাকবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট দফতর। রাজ্যের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষা সংক্রান্ত বৃত্তির ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা বাড়াতে ‘দুয়ারে সরকার’ শিবিরেও আবেদন গ্রহণ করা হয় এ বছর। এমনকি বৃত্তির পুনর্নবীকরণের জন্যও দুয়ারে সরকার শিবিরে সুবিধা দেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ক্ষমতায় আসার পর সংখ্যালঘু উন্নয়ন বিত্ত নিগম থেকে ঐক্যশ্রী বৃত্তি প্রদান শুরু হয়। প্রথম শ্রেণি থেকে শুরু করে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত আবেদনের ভিত্তিতে সংখ্যালঘু ছাত্রছাত্রীরা বৃত্তি পায়। এত দিন এই বৃত্তি প্রদানের জন্য আবেদন করতে হত অনলাইনে। তবে আবেদন যাচাই করা থেকে শুরু করে বৃত্তি প্রদানের প্রশাসনিক কাজ করতে হত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকেই। এ বার সেই কাজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাইরে দুয়ারে সরকার শিবির থেকেও করা হবে।
কেন্দ্র সরকারের স্কলারশিপ বন্ধ করা প্রসঙ্গে সংখ্যালঘু বিষয়ক ও মাদ্রাসা শিক্ষা দফতরের এক আধিকারিক বলেন, আবেদন ও পরীক্ষার মাধ্যমে এই স্কলারশিপ প্রদান করা হত, এখন তা আর দেওয়া হবে না। তবে রাজ্য সরকার স্কলারশিপ দেওয়া চালু রেখেছে। আগামীতেও সংখ্যালঘু প্রি-মেট্রিক স্কলারশিপ চালু থাকবে বলে এ রাজ্যের সংশ্লিষ্ট দফতর সূত্রের খবর। সংখ্যালঘু দফতরের এক আধিকারিক বলেন, পড়শোনা ফ্রি থাকলেও স্কলারশিপ-এর প্রয়োজন রয়েছে। রাজ্য সরকার সাইকেল দিচ্ছে, মোবাইল দিচ্ছে। এতে পড়ুয়াদের আগ্রহ বাড়বে। পাশাপাশি স্কুলে ড্রপ আউটও কমবে। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত বিনামূল্যে পড়ানো হচ্ছে বলে স্কলারশিপ বন্ধ করে দিচ্ছে কেন্দ্র, এটা কোনও যুক্তি হতে পারে না। এতে স্কুলে ড্রপ আউট বাড়বে বলে মনে করছেন স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকারাও।
অভিভাবকদের বক্তব্য, প্রতিদিন দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের ক্ষেত্রে আর্থিক সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। তার উপর পড়াশোনার ক্ষেত্রেও আনুষাঙ্গিক খরচ রয়েছে। সরকারি আর্থিক সহযোগিতা না মিললে অনেকেই পড়াশোনা ছেড়ে দিতে পারে বলে মনে করছেন বহু অভিভাবক। এই বিষয়ে শিক্ষক সংগঠনগুলির বক্তব্য, স্কলারশিপ বন্ধ করা হলে সংখ্যালঘু পড়ুয়াদের উৎসাহ কমবে। এর ফলে বহু পড়ুয়া মাঝপথে পড়াশোনা ছেড়ে দিতে পারে। স্কলারশিপের পরিমাণ যৎসামান্য হলেও এটা ছিল প্রত্যান্ত গ্রাম্য এলাকার ছাত্রছাত্রীদের কাছে উৎসাহ ব্যঞ্জক।