পারিজাত মোল্লা: গত ৯ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মোতাবেক ১৬ নভেম্বর কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ এসএসসি সংক্রান্ত মামলা শোনার জন্য বিশেষ বেঞ্চ গঠন করে থাকে। এর মধ্যে দু’বার সাধারণ চাকরিপ্রার্থীদের তরফে দ্রুত শুনানির আর্জি জানানো হয়। এরেই মধ্যে মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টের নব নিযুক্ত বিশেষ বেঞ্চ এই মামলার প্রাথমিক শুনানি পর্ব শুরু করে দেয়। আর তাতেই প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ কে তাদের একেক জায়গায় একেক রকম অবস্থানের জন্য হলফনামা তলব করলো। স্কুলে নিয়োগ মামলায় দ্রুত তদন্ত শেষ করার জন্য কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাদেরকে ডেডলাইন বেঁধে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালতের নির্দেশে নিয়োগ সংক্রান্ত সব মামলা ফেরানো হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টে। তারপর উচ্চ আদালতের তরফে নিয়োগ মামলার নিষ্পত্তির জন্য বিশেষ বেঞ্চও গঠন করা হয়। মঙ্গলবার ওই বেঞ্চেই শুনানি চলে।
মূলত যে বিষয়ে নির্দেশে জানিয়েছে আদালত তাতে স্পষ্ট বলা হয়েছে, শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলা শীর্ষ আদালত কেন হাইকোর্টে পাঠালো তা আগে বুঝতে চায় হাইকোর্টের নবগঠিত ডিভিশন বেঞ্চ। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাকের ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, ‘এখানে একাধিক মামলা রয়েছে।তার মধ্যে আরও নতুন আবেদন যুক্ত হবে কি না? বা একই ধরণের মামলা থাকলে মামলার সংখ্যা কমিয়ে এনে শুনানি করা হবে তাও দেখবে ডিভিশন বেঞ্চ’। রাজ্যের হয়ে আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ‘এই সমস্ত মামলায় রাজ্যকে পার্টি না করে কার্যত এক তরফাভাবে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।তাই খারিজ করা হোক মামলা গুলি’।
এদিন বিশেষ ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, ‘সমস্ত প্যানেল যদি বাতিল করা হয়, বেশ কয়েকবছর চাকরি করার পর হঠাত্ করে এই কর্মরতদের বিতাড়িত করা হবে। সুতরাং সমস্তদিক খতিয়ে দেখতে চায় ডিভিশন বেঞ্চ’। কোন আইনের বলে চাকরি বাতিল করা হবে? সেটা স্কুল সার্ভিস কমিশনের কাছেও জানতে চেয়েছে হাইকোর্ট। যদি সম্পূর্ণ প্যানেল বাতিল হয় তবে অনেক যোগ্য ও ন্যায্য প্রার্থীও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে জানিয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের নব নিযুক্ত বিশেষ বেঞ্চ। সেক্ষেত্রে তাদের ক্ষতিপূরণও দিতে হবে বলে জানিয়েছে হাইকোর্ট। কলকাতা হাইকোর্টে স্কুল সার্ভিস কমিশন জানিয়েছিল, ‘তারা নিজেদের ক্ষমতা প্রয়োগ করে বেআইনি চাকরি প্রাপকদের সুপারিশপত্র প্রত্যাহার করেছে’।
আবার সুপ্রিম কোর্টে তারা জানিয়েছে যে, ‘কলকাতা হাইকোর্টের চাপে তারা এ কাজ করেছে’। কেন এই ভিন্ন অবস্থান? তার ব্যাখ্যাও স্কুল সার্ভিস কমিশনের কাছে চেয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ। স্কুল সার্ভিস কমিশন কোন মিটিংয়ের মাধ্যমে চাকরি বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তার বিস্তারিত তথ্যও তলব করেছে আদালত।এর আগে এসএসসি সংক্রান্ত সব মামলা সুপ্রিম কোর্ট থেকে কলকাতা হাইকোর্টে ফেরত্ আসে। ছয় মাসের মধ্যে শুনানি শেষ করার নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। বিচারপতির দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি সব্বার রশিদির ডিভিশন বেঞ্চও গঠন করেন প্রধান বিচারপতি। আজ অর্থাৎ বুধবার থেকে এই সমস্ত মামলার শুনানি শুরু হচ্ছে।মধ্যশিক্ষা পর্ষদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ এর তরফে। ভর্ত্সনা করা হয়েছে পর্ষদকে।নিয়োগ সংক্রান্ত রাজ্যের সব মামলা গত ৯ নভেম্বর কলকাতা হাইকোর্টে পাঠিয়েছিল শীর্ষ আদালত।
বিশেষ বেঞ্চ এদিন জানিয়েছে, শীর্ষ আদালত যে নির্দেশ দিয়েছিল সেই নির্দেশ মত শিক্ষক নিয়োগ দূর্নীতি সংক্রান্ত সমস্ত মামলা বুধবার (৬ ডিসেম্বর ২০২৩) শুনানির জন্য তালিকাভুক্ত করা হল। নিয়োগ সংক্রান্ত একাধিক মামলা রয়েছে। তার মধ্যে আরও নতুন আবেদন যুক্ত হবে কিনা? বা একই ধরনের মামলা থাকলে মামলার সংখ্যা কমিয়ে এনে শুনানি করা হবে কিনা?এই বিষয়টিও খতিয়ে দেখছে হাইকোর্টের নবগঠিত বিশেষ ডিভিশন বেঞ্চ বলে জানা গেছে। এদিন মামলার শুনানিতে রাজ্যের আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান , -‘এই সব মামলায় রাজ্যকে পার্টি না করেই এক তরফা ভাবে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এরফলে এই মামলা আদৌ গ্রহণযোগ্য নয়’।
যা নিয়ে ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, ‘যদি সম্পূর্ণ প্যানেল বাতিল হয়, তাহলে অনেক যোগ্য প্রার্থীও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তাদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। জনগণের টাকা কেন এভাবে নষ্ট হবে’?নিয়োগে দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলাটির মূল মামলাকারী লক্ষ্মী তুঙ্গা, সাবিনা ইয়াসমিন, সন্দীপ প্রসাদ। এদিনের শুনানিতে কমিশনের তরফ থেকে সওয়াল করা হয়, মূলত যাঁরা মামলাকারী, তাঁরাই প্রথমে টাকা দিয়ে চাকরি পাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু চাকরি না পেয়ে মামলা করেছেন। সেক্ষেত্রে তাঁদের পরীক্ষাতেও বেনিয়ম রয়েছে। তার ভিত্তিতে বিচারপতি পাল্টা বলেন, “একজন দুর্নীতির চেষ্টা করেছে বলে কি আপনারাও দুর্নীতির ছাড়পত্র পেয়ে যাবেন?”
বিচারপতির আরও পর্যবেক্ষণ, ‘যদি সম্পূর্ণ প্যানেল বাতিল হয়, তাহলে অনেক যোগ্য প্রার্থীও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তাদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। জনগণের টাকা কেন এভাবে নষ্ট হবে ?’ সে প্রশ্নও করেন বিচারপতি। কেন দুই আদালতে (সুপ্রিম কোর্ট এবং কলকাতা হাইকোর্ট) কমিশনের ভিন্ন অবস্থান? তা নিয়েই প্রশ্ন করে ডিভিশন। আগে কমিশনকে সেই বিষয়টিই পরিষ্কার করে জানাতে বলা হয়েছে সাতদিনের মধ্যে। আজ অর্থাৎ বুধবার বহু চর্চিত এসএসসি মামলার মূল শুনানি শুরু হচ্ছে বলে জানা গেছে।