পুবের কলম প্রতিবেদক: একটানা তিন বছর এনসিআরবি’র তালিকার শীর্ষে রয়েছে কলকাতা। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর রিপোর্ট অনুসারে, লক্ষাধিক জনসংখ্যার সর্বনিম্ন সংখ্যক অপরাধের বিচারে দেশের প্রধান শহরগুলির মধ্যে শীর্ষে রয়েছে কলকাতা। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর রিপোর্টে ২০২০ সাল থেকেই দেশের প্রধান শহরগুলির মধ্যে সবথেকে নিরাপদ শহর হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আসছে তিলোত্তমা। ২০২১ এবং ২০২২ সালেও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
এনসিআরবি রিপোর্ট অনুসারে, ২০২১ সালে কলকাতায় প্রতি লক্ষ লোকে ১০৩.৪টি অজ্ঞাত অপরাধের মামলা নথিভুক্ত হয়েছিল, যা ২০২২ সালে ৮৬.৫-এ নেমে এসেছে। ২০২০ সালে, এহেন অজ্ঞাত অপরাধের মামলা নথিভুক্ত হয়েছিল ১২৯.৫। রিপোর্ট অনুসারে, মহিলাদের সঙ্গে হওয়া অপরাধমূলক ঘটনার নিরিখে গোটা দেশে পশ্চিমবঙ্গ চতুর্থ স্থানে রয়েছে। উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র ও রাজস্থানের পরে স্থান পেয়েছে তিলোত্তমা।
অন্যদিকে, মহিলাদের সঙ্গে অপরাধের ক্ষেত্রে দেশে শীর্ষস্থানে রয়েছে দিল্লি। প্রধানমন্ত্রী যতই মুখে “বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও” বলুন না কেন আদতে তাঁর এই প্রকল্প যে পুরোপুরি ফ্লপ, তা আরও একবার প্রমাণ হল এনসিআরবির রিপোর্ট সামনে আসতেই। একদিকে, যখন তিন রাজ্যে জেতার আনন্দে গেরুয়া আবির ওড়াচ্ছে বিজেপি ঠিক তখনই সামনে এল কেন্দ্রীয় এজেন্সির রিপোর্ট। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো তথা এনসিআরবির প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, নারীদের জন্য সব থেকে অসুরক্ষিত শহরগুলির মধ্যে শীর্ষে রয়েছে দিল্লি। ২০২১ সালের তুলনায় দিল্লিতে চলতি বছরে মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধ বেড়েছে ৪ শতাংশ। ২০২১ সাল থেকে ২০২২ সালে ৪,২৮,২৭৮টি ঘটনা বেড়ে হয়েছে ৪,৪৫,২৫৬টি। মহিলাদের উপরে নির্যাতনের একটা বড় অংশ জুড়ে রয়েছে গার্হস্থ্য হিংসা (৩১.৪%)।
এদিকে, রিপোর্ট অনুসারে ২০২২ সালে কলকাতায় খুন হয়েছেন ৩৪ জন। দুর্ঘটনাজনিত কারণে মৃত্যু হয়েছে ২১৭ জনের(১.৫%), যা দেশের অন্য শহরগুলির তুলনায় কম। শুধু তাই নয়, রিপোর্ট অনুসারে ভ্রূণ বা, শিশু হত্যার ঘটনা নথিভুক্ত হয়নি। যেখানে দিল্লি, মুম্বইয়ে যথাক্রমে ৩২টি এবং ১৮টি ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। এই খবর প্রকাশ্যে আসতে তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ লেখেন, “এনসিআরবি ক্রাইম রিপোর্ট ২০২২ বলছে, এই নিয়ে টানা তিন বছর, কলকাতায় অপরাধের হার সবচেয়ে কম। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অশেষ ধন্যবাদ আমাদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার জন্য। শিক্ষিত হলে বিজেপি এই খবরের পর মুখ বন্ধ করে রাখবে।”
অন্যদিকে, রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী এবং কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে কেন্দ্রের ইউএপিএ আইনের প্রয়োগ নিয়ে কটাক্ষ করেন। মঙ্গলবার, উত্তরপ্রদেশের হাথরসের ঘটনার কথা উল্লেখ করে ফিরহাদ বলেন, “সন্ত্রাসবাদের নামে অনেক নিরীহ সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অর্থাৎ, যে আমার মতের সঙ্গে সহমত হবে না সে সন্ত্রাসবাদী হয়ে যাবে। এটা খুবই সাংঘাতিক বিষয়। আমি সন্ত্রাসবাদী তাকে বলব, যে আমার দেশকে ভেঙ্গে ফেলার চেষ্টা করবে, দেশের ক্ষতি করার চেষ্টা করবে, দেশের মানুষকে মারার চেষ্টা করবে। নিশিতভাবে, সে সন্ত্রাসবাদী। আমরা ভারতবাসী তাদের বিরুদ্ধে। যে সন্ত্রাসবাদীরা আমাদের দেশের বাইরে থেকে দেশের উপর আক্রমণ করছে, ৯/১১-র মত ঘটনা ঘটাচ্ছে, নিশ্চিতভাবে সমস্ত ভারতবাসী তার বিরুদ্ধে। তবে, জাকে তাকে সন্ত্রাসবাদী তকমা দিয়ে আটকে দেবে, ইউএপিএ আইনের মাধ্যমে, এটা ঠিক হচ্ছে না। এর বিরুদ্ধে আমরা।”