ইনামুল হক, বসিরহাট: সুন্দরবনের অন্যতম ঐতিহ্য গোলপাতা। মূলত নদী ও খালের ধারে অধিক পরিমাণে দেখা যায় এই গোলপাতা। সুন্দরবনে ছোট বড় মিলে প্রায় ৪৫০ এর মতো নদী ও খালের ধারে জালের ন্যায় বিন্যস্ত আছে। আর গোলপাতা গাছও এসব স্থানের নদী-খাল ও চড়াতে বিক্ষিপ্তরূপে শোভা পাচ্ছে। এটি সুন্দরবনের একটি সম্ভাবনাময় ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ প্রজাতি। যা সুন্দরবনের একটি অতি মূল্যবান প্রাকৃতিক অর্থকরী সম্পদও। সুন্দরবনের অরণ্যে লুকিয়ে আছে গোলপাতার অজানা সুস্বাদু ফল। এর রস হার মানাবে এই শীতের খেজুর গাছের রসকেও।
সুন্দরবন বিষয়ক গবেষক অনিমেষ মন্ডল বলেন, সুন্দরবনের স্বল্প ও মধ্যম লবণাক্ত অঞ্চলে জন্মে এই গোলপাতা। এর পাতা প্রায় ৩-৯ মিটার লম্বা হয়। দেখতে এটি নারকেল পাতার মতো। কিন্তু নারকেল পাতার চেয়ে এটা মজবুত এবং স্বল্প সময়ে এটি পচন ধরে না। স্থানীয় অধিবাসীদের ঘরের চালায় ছাউনি হিসেবে এটি ব্যপক চাহিদা রয়েছে। অদূর অতীতে স্থানীয়দের অধিকাংশের ঘরের চালায় এ গোলপাতার ব্যবহার লক্ষ্য করা গেছে। টিনের চালার বিপ্লবের যুগে বর্তমানে এর চাহিদা ততটা দেখা যায় না। সুন্দরবনের পাশাপাশি উত্তর ২৪ পরগনা জেলার টাকি মিনি সুন্দরবনের গেলে অসংখ্য গোলপাতা গাছ সহ গোলপাতা ফল দেখতে পাবেন। তবে এর ফল ঠিক তাল বা নারকেলের মত ভিতরে জল ও শাস সবই আছে। স্থানীয় মানুষের কাছে এই ফলের ভিতরে শাস খুবই প্রিয়। তবে এর আর একটি বৈশিষ্ট ও গুনাবলি হচ্ছে এটি তালের মত কেটে রস ঝরানো যায় যা দিয়ে খেজুর ও তালের রসের মতই খাদ্যে ব্যবহার করা যায়। এমনকি এ রস দিয়ে বিভিন্ন মিষ্টি সামগ্রি সহ গুড় তৈরী করা যায়।
উদ্ভিদবিদ রঞ্জিত মুখার্জি বলেন, সুন্দরবনের গোলপাতা গাছ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, একদিকে পরিবেশ দূষণ থেকে বাঁচাতে প্রচুর পরিমাণে অক্সিজেন ত্যাগ করে। পাশাপাশি জঙ্গলে বাঘ হরিণদের আত্মরক্ষার জায়গা এই গোলপাতা গাছ অপরিহার্য। পাশাপাশি এর যে ফল গুণগতমান অত্যন্ত বেশি জঙ্গলে থাকা পশু পাখি থেকে শুরু করে কীটপতঙ্গরা এই ফলের রস খায়।
অন্যদিকে, বাস্তু তন্ত্র রক্ষা করার অত্যন্ত উপযোগী এই গোলপাতার গাছ এছাড়াও দৈনন্দিক ও সামাজিক জীবনে গোলপাতার ফল অত্যন্ত সুস্বাদু এবং এই ফলের রস খেজুরের রসের গুণগতমান থেকে অনেকটাই বেশি। বর্তমানে খেজুর গাছের সংখ্যা কমে আসায় ও শিউলি না পাওয়া যযাওয়ায় নতুন করে এই পেশায় আসার জন আগ্রহী হয়ে উঠছে।