বিশেষ প্রতিবেদন: বায়ু দূষণ ক্রমশ ভয়ঙ্কর আকার নিচ্ছে ভারতে। দূষণের কারণে প্রতি বছর ২১ লক্ষের বেশি মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। চিনের পরেই এই ভয়ঙ্কর সত্যির মুখোমুখি ভারত।
দ্য বিএমজে একটি মডেলিং সমীক্ষা করে। সেই প্রতিবেদন অনুযায়ী এই তথ্য সামনে এসেছে। সমীক্ষা বলছে, প্রতি বছর দূষণের কারণে ভারতে কমপক্ষে প্রায় ২১ লক্ষ ৮০ হাজার মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। চিনের পরেই অবস্থানে রয়েছে ভারত। সমীক্ষা বলছে, এই দূষণের কারণের মধ্যে রয়েছে শিল্প, বিদ্যুৎ, পরিবহণে ব্যবহৃত জ্বালানি থেকে নির্গত ধোঁয়া। যা গোটা বিশ্বে ৫১ লক্ষ মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী। ভারতে প্রতি বছর ২১ লক্ষ ৮০ হাজার মানুষের মৃত্যু হচ্ছে এই দূষণের কারণে। ২০১৯ সালে এই দূষণের কারণে বিশ্বে ৮৩ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। গবেষকরা বলেছেন, জীবাশ্ম জ্বালানিকে পরিষ্কার, পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি দিয়ে প্রতিস্থাপন করে দূষণ এড়ানো যেতে পারে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, যে মৃত্যুর চিত্র দেওয়া হয়েছে, তাতে দূষণের মাত্রা কম করার জন্য আরও বেশি করে এই কাজগুলির দিকে নজর দেওয়া উচিৎ।
ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্মানির গবেষকরা জীবাশ্ম জ্বালানি-সম্পর্কিত বায়ু দূষণের কারণ, কারণ-নির্দিষ্ট মৃত্যুর অনুমান করে তার উপর গবেষণা করেছেন। জীবাশ্ম জ্বালানিকে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি দিয়ে প্রতিস্থাপন করে মানুষের স্বাস্থ্যর দিকগুলি বিবেচনা করে একটি নয়া মডেল ব্যবহার করেছেন। গবেষকরা অতিরিক্ত মৃত্যুর একটি মূল্যায়ন করেছে্ন। যেখানে একটি নির্দিষ্ট সময়ে মৃত্যুর হার বেশি।
গ্লোবাল বার্ডেন অফ ডিসিজ-২০১৯ একটি সমীক্ষা করে। সেখানে জানানো হয় নাসা-স্যাটেলাইটের মাধ্যমে একটি জনসংখ্যার তত্ত্ব সামনে আনে। সেখানে বায়ুমণ্ডলে অ্যারোসোলের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। প্রথম ক্ষেত্রে দেখা গেছে, জীবাশ্ম, জ্বালানি থেকে নির্গত ধোঁয়া, ধুলোর কারণে দূষণের মাত্রা বাড়ছে। দ্বিতীয়ত ও তৃতীয় ক্ষেত্রে ২৫ থেকে ৫০ শতাংশ ধোঁয়া-ধুলো নানাভাবে বাইরে নির্গত হচ্ছে। চতুর্থক্ষেত্রে রয়েছে মানব সৃষ্ট দূষণ। এছাড়াও রয়েছে মরুভূমির ধুলো ও প্রাকৃতিক দাবানল। গবেষকদের মতে মনুষ্য তৈরি দূষণের ৮২ শতাংশ এড়ানো সম্ভব। বায়ু দূষণ প্রকোপ দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বাধিক যেখানে চিনে প্রতি বছর দূষণে মৃত্যুর সংখ্যা ২৪ লক্ষ ৪৪ হাজার। ভারতে প্রতি বছর ২১ লক্ষ ৮০ হাজার মানুষের মৃত্যুর কারণ সেই দূষণ। এর মধ্যে ৫২ শতাংশ মৃত্যুর কারণ সাধারণ, ৩০ শতাংশ মৃত্যুর কারণ হৃদরোগ, ১৬ শতাংশ মৃত্যুর কারণ স্ট্রোক, ১৬ শতাংশের মৃত্যুর কারণ ফুসফুসে সংক্রমণ, ৬ শতাংশের মৃত্যুর কারণ ডায়াবেটিস। ২০ শতাংশের মৃত্যুর কারণ অজানা। এর মধ্যে রয়েছে উচ্চ রক্তচাপ, নিউরোডিজেনারেটিভ ডিসঅর্ডার যেমন আলঝাইমার এবং পারকিনসন।
নয়াদিল্লি উজালা সিগনাস গ্রুপ অফ হাসপাতালের কনসালটেন্ট ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের ডা: শুচীন বাজাজ বলেন, দূষণ ভারত একটি মারাত্মক জায়গায় পৌঁছেছে। ঝুঁকির মুখে মানুষের স্বাস্থ্য। দূষণ মানুষের অকাল মৃত্যুর জন্য দায়ী। দূষণে থাকা সালফার, নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড, সালফার ডাই অক্সাইড গুরুতরভাবে শ্বাসযন্ত্র এবং কার্ডিওভাসকুলার ঝুঁকি তৈরি করে। দূষণের উচ্চ ঘনত্ব, ক্ষুদ্র কণা যা ফুসফুসের গভীরে প্রবেশ করতে পারে। এই ক্ষুদ্র কণা শ্বাসযন্ত্রের রোগ, হৃদরোগ এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যগত জটিলতা তৈরি করছে। এই দূষণের সব থেকে বেশি প্রভাব পড়ছে শিশু ও বয়স্কদের মধ্যে। উচ্চ আয় সম্পন্ন দেশগুলিতে দূষণের কারণে প্রায় ৪৬ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। তবে এগুলি বন্ধ করা সম্ভব হলে প্রায় ৯০ শতাংশ ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব।
অ্যাসোসিয়েশন অফ হেলথকেয়ার প্রোভাইডার এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ডাঃ গিরধর গয়ানি উল্লেখ করেছেন যে, বাতাসের বিষাক্ত দূষণগুলি অকাল মৃত্যুর পাশাপাশি মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করে৷ ঝুঁকি এড়াতে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। এই সংকটের সময় সরকার ও দেশের নাগরিক উভয়ের সহযোগিতার আহবান জানিয়েছেন ডাঃ গিরধর গয়ানি