পুবের কলম প্রতিবেদক: শনিবার কলকাতা পৌর সংস্থার মাসিক অধিবেশন আয়োজিত হয়। অনেকদিন পর, কলকাতা পৌর সংস্থার চেয়ারম্যান ছাড়া আয়োজিত হয় এই মাসিক অধিবেশন। চেয়ারম্যান মালা রায়ের শারীরিক অবস্থা খারাপ থাকার জন্য তাঁর দায়িত্বে এদিন সভার পৌরোহিত্য করেন অরূপ চক্রবর্তী। তৃণমূল কাউন্সিলরদের শোক প্রস্তাব দিয়ে এদিন শুরু হয় কলকাতা পৌর সংস্থার মাসিক অধিবেশন। মেয়র পারিষদ রাম পেয়ারে রাম, প্রাক্তন সাংসদ বাসুদেব আচার্যের মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব দেওয়া হয় অধিবেশনে।
এদিনের অধিবেশনে ১৩২ নম্বর ওয়ার্ডে বেআইনিভাবে নির্মিত কারখানা, ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডে জলের সমস্যা, কাউন্সিলরদের তহবিলে বরাদ্দ হওয়া টাকায় ধার্য হওয়া ট্যাক্স, পার্কিং টেন্ডার, হকার নীতি, ধর্মশালা সহ বেশ কিছু বিষয়ে প্রস্তাব পেশ করেন কাউন্সিলররা। একইসঙ্গে, কলকাতার বায়ু দূষণ, ১৩২ নম্বর ওয়ার্ডের নিকাশী ব্যবস্থা, কলকাতা পুরসভার আওতায় থাকা ফুটপাথবাসীদের জন্য থাকা “আশ্রয়” নিবাসের বিষয় সহ বেশ কয়েকটি বিষয়ে প্রশ্ন করেন কাউন্সিলররা।
এদিন, কলকাতা পুরসভার কাউন্সিলর বিশ্বরূপ দের ট্যাক্স সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে মেয়র জানান, কলকাতার পৌর সংস্থার পক্ষ থেকে জিএসটিতে অনেক টাকা বেরিয়ে যাচ্ছে। অথচ, উন্নয়নের স্কিমে প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা খরচ যায়নি। আপনার বোরো ছাড়া আরও অনেক বোরোতে খরচ হয়নি। যদি সার্বিক ভাবে টাকা খরচ না হয়। তাহলে পরে টাকা বরাদ্দ করতে সমস্যা হচ্ছে।
একইসঙ্গে, মেয়র জানান, আগে থেকে পৌর সংস্থার আয় প্রায় ৩০% বেড়েছে। কাউন্সিলরদের উদ্দেশে তিনি জানান, আপনারা টাকা খরচ করুন। তবে, এই প্রসঙ্গে একজন কাউন্সিলরের ভালো ফুটপাত ভেঙে দিয়ে আবার নতুন করে বানানোর প্রসঙ্গ উত্থাপন করে টাকার অপব্যাবহার করা যাবে না বলেও জানান মেয়র। পাশাপাশি, ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডের জলের সমস্যার কথা স্বীকার করে নিয়ে মেয়র জানান, এবিষয়ে ডিজি জল বিভাগকে ইতিমধ্যেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গরমের আগে যাতে এলাকাবাসীর জলের সমস্যা মেটে সেবিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ারও আশ্বাস দেন মেয়র।
অন্যদিকে, বিজেপির কাউন্সিলর সজল ঘোষ কলকাতার বায়ুদূষণ নিয়ে অভিযোগ তুললে তাঁকে যথাযথ জবাব দিয়ে মেয়র পরিষদ পরিবেশ বিভাগ স্বপন সমাদ্দার জানান, বায়ুদূষণ নিয়ে আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে। তিনি যে প্রশ্ন করেছেন সেটা ভুল তথ্য। কলকাতার পরিস্তিতি দেশের অন্য জায়গার থেকে অনেক ভালো। আমাদের 20 হাজার টাওয়ার বসানোর খরচ অনেক বেশি। পাশাপাশি, সজল ঘোষের এয়ার পিউরিফায়ার টাওয়ার প্রসঙ্গে স্বপন সমাদ্দার বলেন, দিল্লিতে টাওয়ার বসাতে গিয়ে দেখা গিয়েছে যে সেখানে বায়ু দূষণ বেড়ে যাচ্ছে। আমাদের বায়ুদূষণ কমিয়ে দেওয়ার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। বিজ্ঞানসম্মতভাবে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। কলকাতাকে বায়ুদূষণ মুক্ত করার জন্য ৪০টি ওয়াটার স্প্রিঙ্কলার চালানো হচ্ছে। আমরা খোলা নালা বন্ধ করেছি। আমরা বাড়ির বা বহুতলের নির্মাণের কারণে হওয়া বায়ুদূষণ রোধ করতে ব্যবস্থা গ্রহন করেছি। এছাড়া ক্লাইমেট চেঞ্জ ও কমব্যাট ফোর্স তৈরি করা হচ্ছে। নতুন প্রজন্মকে বিনা পয়সায় প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে যাতে তারা পরিবেশ সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করার জন্য কাজ করতে পারে। শুধু তাই নয়, প্রশিক্ষণ শেষে তাদের শংসাপত্রও দেওয়া হবে বলে জানান মেয়র পারিষদ পরিবেশ বিভাগ স্বপন সমাদ্দার।
এদিন, কাউন্সিলর ১৩২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সঞ্চিতা মিত্রের নিকাশি সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে প্রস্তাবের উত্তরে মেয়র পরিষদ তারক সিংহ জানান, এবছরই আমরা পুরো কাজ করে দিয়েছি। ওখানে একটা বড় জলের পাইপ রয়েছে। তবে এই বছরে ওখানে জল জমেনি। একইসঙ্গে, তারক সিংহ জানান, আমরা নর্দমার নোংরা জলকে পরিশ্রুত করে সেই জলকে রাস্তা ধোওয়া, গাছে জল দেওয়া, জল ছেটানোর কাজে ব্যবহার করব। রবিবার আমরা এই বিষয় নিয়ে বৈঠক করব। আমরা বড় বড় আবাসনকে এধরণের ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপনের জন্য বলব।