পারিজাত মোল্লা: শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে আদালতে হাজির হয়েছিলেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিনহা। এদিন সকাল ১০টা নাগাদ হাইকোর্টে পৌঁছে যান তিনি। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিরোধীদের করা মামলায় আদালত অবমাননার অভিযোগ ওঠে রাজীব সিনহার বিরুদ্ধে। ‘আদালতের নির্দেশ না মেনে অবমাননা করা হয়েছে’ বলেই পর্যবেক্ষণ রয়েছে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের। সেই কারণেই গত অক্টোবর মাসে তাঁর বিরুদ্ধে রুল জারি হয় ও আদালতে হাজিরার নির্দেশ দেওয়া হয়। এদিন তাঁকে রুলের উত্তর দিতে সময় দিল আদালত। কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম ও বিচারপতি উদয় কুমারের ডিভিশন বেঞ্চ আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিল রাজ্য নির্বাচন কমিশনারকে।
‘রুল অনুযায়ী ১৫-২০ দিন সময় দেওয়া হোক’, শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টে এই আর্জি জানান কমিশনার। এরপর প্রধান বিচারপতি রুলের শুনানির দিন স্থির করেন। আগামী ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছ রাজীব সিনহাকে। তার মধ্যে উত্তর দিতে হবে তাঁকে। ৫ জানুয়ারির মধ্যে সবপক্ষ কে লিখিত জানাতে হবে। আগামী ৮ জানুয়ারি এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে।
গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল। তবে যে পদ্ধতিতে মোতায়েন করা হয়, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন বিরোধীরা। আদালতে তাঁরা এই অভিযোগ সামনে আনেন। দীর্ঘ শুনানির পর প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, ‘আদালত অবমাননা করা হয়েছে’। এরপরই রুল জারি হয়। এই ঘটনা কার্যত নজিরবিহীন। কোনওপ্রকার অসাংবিধানিক বা বেআইনি ঘটনা ঘটলে হাইকোর্ট নিজে অথবা কারও দায়ের করা মামলায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে ব্যাখ্যা চাইতে পারে। একেই রুল জারি বলা হয়। রাজীব সিনহার ক্ষেত্রে শুক্রবার সেই রুলের শুনানি চলে।
প্রসঙ্গত, গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় হিংসার অভিযোগ তোলেন বিরোধীরা। ভোটের পর আদালতে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী উল্লেখ করেন, ‘আদালতের নির্দেশ থাকার পরও পঞ্চায়েত নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে সঠিকভাবে ব্যবহার করেনি রাজ্য নির্বাচন কমিশন’।
আদালত সূত্রে প্রকাশ, রুলের উত্তর দিতে এদিন প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম ও বিচারপতি উদয় কুমারের ডিভিশন বেঞ্চের কাছে আবেদন জানান রাজীব কুমার। ডিভিশন বেঞ্চ নির্বাচন কমিশনারের আবেদন গ্রহণ করেছে। আগামী ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে তাঁকে রুলের উত্তর জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। পঞ্চায়েত ভোটের সময়ে বারবার কলকাতা হাইকোর্টের ভর্ত্সনার মুখে পড়েছিলেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিনহা। তাঁকে ভর্ত্সনা করেছিলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসও। বাংলায় পঞ্চায়েত রক্তপাতের দায় পুরোপুরি নির্বাচন কমিশনারের বলে মন্তব্য করেছিলেন রাজ্যপাল। গত পঞ্চায়েত ভোটে ৮০০-র বেশি কোম্পানি আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম। সেই মোতায়েন যথাযথ করার জন্য বিএসএফের এক আইজি পদমর্যাদার অফিসারকে নোডাল অফিসার করা হয়েছিল। কিন্তু ওই বিএসএফ কর্তা অভিযোগ করেন, ‘ভোটের দিন দুপুর পর্যন্ত স্পর্শকাতর বুথের তালিকা তাঁকে দেওয়া হয়নি’। এরপরই রাজ্য নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টের মামলা করেছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী।
রাজ্য নির্বাচন কমিশনরের এই ভূমিকায় চরম অসন্তুষ্ট আদালত গত অক্টোবরে তাঁর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করেছিল। প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের বেঞ্চে এই মামলার শুনানি চলে। তাঁর বিরুদ্ধে আদালতের রুল জারি করার যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, এদিন তারই জবাব দিতে আদালতে আসেন তিনি। কিন্তু, প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের কাছে তিনি সময় চান, জারি করা রুলের জবাব দেওয়া জন্য। তার পরেই আদালত তাঁকে আগামী ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দিয়েছে। এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে আগামী ৮ জানুয়ারি। শুক্রবার আদালতে রাজ্য নির্বাচন কমিশনার বলেন, ”বিএসএফ যে রিপোর্ট দিয়েছে, তার উত্তর দিতে প্রস্তুত আমি। শোকজের উত্তর দিতে সময় দেওয়া হোক। নিয়ম অনুযায়ী ১৫-২০ দিন সময় দেওয়া হোক শোকজের। আর রুল জারির বিষয়টিকে ‘প্রাথমিক ধারণা’ হিসেবেই দেখা হোক।”
তাঁর আবেদন অনুযায়ী, প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম ও বিচারপতি উদয় কুমারের ডিভিশন বেঞ্চ রাজীবা সিনহাকে সময় দিয়েছে। ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে রিপোর্টের জবাব দিতে হবে রাজীবা সিনহাকে। আর কমিশনের সেই রিপোর্টে নিয়ে ৮ জানুয়ারির মধ্যে উত্তর দেবে মামলাকারীরা। ওইদিনই এই মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে। সেই দিন সব পক্ষের আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে, মূল শুনানির দিন ঠিক হবে। ‘পঞ্চায়েত ভোটে রাজ্য নির্বাচন কমিশনার আদালতের নির্দেশ ঠিক মতো পালন না করে, অবমাননা করেছেন’। এই অভিযোগে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী-সহ অন্যান্যরা আদালত অবমাননার মামলা করেছিলেন।