পারিজাত মোল্লা: দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের কলকাতায় প্রস্তাবিত রাজনৈতিক সভা ঘিরে ফের মামলা কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে। বিচারপতি রাজশেখর মান্থারের সিঙ্গেল বেঞ্চের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ডিভিশন বেঞ্চের দারস্থ হয়েছে রাজ্য। আগামী ২৯ নভেম্বর ধর্মতলায় ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে বিজেপির সভায় উপস্থিত থাকার কথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের।
দুবার দিনক্ষণ জানিয়ে সভার অনুমতি চাওয়া সত্ত্বেও কলকাতা পুলিশের তরফে সভার অনুমতি না মেলায় কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল রাজ্য বিজেপি। সেই মামলায় গত সোমবারই আদালত জানিয়ে দিয়েছিল বিজেপি ওই জায়গায় সভা করতে পারবে। কিন্তু সিঙ্গল বেঞ্চের সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বুধবার প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে দ্বারস্থ হয়েছে রাজ্য। এদিন মামলাকারীর আইনজীবী বলেন, রাজ্য ২৮ নভেম্বর ডিভিশন বেঞ্চে মামলা করার জন্য প্রস্তাব দিয়েছে।
আর পরের দিন সভা। আসলে সভা যাতে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ঝুলিয়ে রাখা যায়, এটা তার কৌশল। একথা শুনেই রাজ্যের আইনজীবীকে বিচারপতি প্রশ্ন করেন, -‘বুধবার মামলা দায়ের করে কেন সেই মামলার শুনানির ডেট এতদিন পরে রাখা হয়েছে!’রাজ্যের কাছে এই ঘটনার ব্যাখ্যা তলব করেছেন বিচারপতি ।
বৃহস্পতিবার দুপুর ২টোর মধ্যে এই ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে হবে রাজ্যকে। আর তার আগে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে মামলার শুনানি হয়ে গেলে তখন পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে সিঙ্গেল বেঞ্চ, জানিয়েছেন বিচারপতি।উল্লেখ্য, বিজেপি যেখানে সভা করার অনুমতি চেয়েছে, ওই একই জায়গায় ২১ জুলাইয়ের সভা করে তৃণমূল। বিজেপির তরফে প্রাথমিকভাবে ২৮ তারিখ সভা করার অনুমতি চাওয়া হয়েছিল কলকাতা পুলিশের কাছে।
রাজ্যের দাবি -‘ কম্পিউটারের স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা জানিয়ে দেয়, ওই দিন সভা করার জন্য জায়গা খালি নেই’। এরপর তারিখ পাল্টে ২৯ নভেম্বর সভার অনুমতি চাইলে তাও একই কারণ দেখিয়ে খারিজ করে দেওয়া হয়। এরপর হাইকোর্টে মামলা করেন বিজেপি নেতা জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়।তার শুনানিতে গত সোমবার ‘ভারপ্রাপ্ত’ সিঙ্গেল বেঞ্চের বিচারপতি রাজশেখর মান্থার জানিয়ে দেন,-‘ ওই জায়গায় সভা করতে পারবে বিজেপি ‘।
এমনকী, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই বারবার সভার আবেদন নাকচ করে দেওয়া হচ্ছে কিনা? সে প্রশ্নও তুলেছিলেন বিচারপতি মান্থার। তাঁর রায় পছন্দ না হওয়ায় বুধবার ডিভিশন বেঞ্চে গিয়েছে রাজ্য। এই সমাবেশেই উপস্থিত থাকার কথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের । এর আগে ২০ নভেম্বর রাজ্য বিজেপির তরফে আইনজীবী আদালতে বলেন, “প্রথমে ২৮ নভেম্বর সভা করার জন্য আবেদন জানানো হয়েছিল । ১৮ নভেম্বর সেই অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয় । কিন্তু ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তা খারিজ করে দেয় পুলিশ । পুনরায় সভার দিনক্ষণ পরিবর্তন করে ২৯ নভেম্বর সভা করতে চেয়ে জয়েন্ট কমিশনার অফ পুলিশের কাছে আবেদন করা হয় । এবার সেই আবেদনও বাতিল করে পুলিশ ।
“আইনজীবী আরও জানান, -‘ ১৫ দিনের আগে আবেদন করা হয়নি, এই যুক্তিতে প্রথমবারের আবেদন বাতিল করেছিল পুলিশ প্রশাসন । পরে ২৯ নভেম্বর সভা করতে চেয়ে নতুন আবেদনও বাতিল হয় । তবে এর জন্য কোনও দর্শায়নি পুলিশ । দু-দু’বার সভা বাতিলের ক্ষেত্রে একই রকম চিঠি দিয়েছিল পুলিশ ।
গত সোমবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার রাজ্যের আইনজীবীর উদ্দেশ্যে বলেন, “অবাক হচ্ছি, আপনাদের আপত্তি জানানো দু’টি চিঠির বয়ান দেখে । স্বাধীন রাষ্ট্রে সবার মিটিং মিছিল করার অধিকার আছে । এখানে তো সবার এমন সভা করার অধিকার আছে । দু’টি অনুমোদন বাতিলের চিঠি দিয়েছে পুলিশ । একটিতেও আপত্তির কারণ পর্যন্ত লেখা নেই । খুব বিস্মিত হচ্ছি পুলিশের এমন জবাবে । কী শর্ত দেবে, সেটা পুলিশ ঠিক করুক । কিন্তু অনুমতি দিতে হবে পুলিশকে ।” এবার বিচারপতির এই নির্দেশের বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে আবেদন করেছে রাজ্য সরকার ।