বিশেষ প্রতিবেদক: একদিকে অবরুদ্ধ একটি ছোট্ট জনপদের ২৩ লক্ষ মানুষের রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্বকারী ক্ষুদ্র এক সংগঠন হামাস। আর অন্যদিকে দুনিয়ার সবথেকে সুসংহত, পেশাদার বলে পরিচিত এবং পরমাণু বোমা-সহ বিমান, আধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র ও সব থেকে ভয়ংকর হাতিয়ারের অধিকারী ইসরাইলি সেনাবাহিনী। তাদের মধ্যে সংঘর্ষ চলছে। ৪০ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনও ইসরাইল ও তার পার্টনার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী গাজার দখল নিতে পারেনি।
ইসরাইলি সেনাবাহিনী বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র দ্বারা গাজার প্রায় সমস্ত পরিকাঠামো, ঘরবাড়ি, হাসপাতাল, বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পানি সরবরাহের ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। তা সত্ত্বেও প্রাণ যাওয়ার ভয়ে গাজায় ইসরাইলি সেনাবাহিনী সুরক্ষিত ট্যাঙ্ক বহর নিয়েও গাজায় ঢুকতে ভয় পাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত তারা আল-শিফা হাসপাতালে পৌঁছেছে এবং হাসপাতালটির দখল নিয়েছে। অবশ্য আগে তারা এই হাসপাতালে বোমারু বিমান দ্বারা আক্রমণ শানিয়েছে। রোগী, তার পরিজন ও চিকিৎসকদের মৃত্যুর কোনও পরোয়া যায়নবাদী সেনাবাহিনী করেনি। শেষে ট্যাঙ্ক বহর নিয়ে তারা আল-শিফা হাসপাতালের দখল নিয়েছে।
তাদের দাবি মতো হাসপাতালের নিচে হামাসের ঘাঁটি, অস্ত্রশস্ত্র কোনও কিছুই তারা পায়নি। যে ফেক ভিডিয়ো প্রচারের চেষ্টা যায়নবাদীরা করেছিল, তা বিশ্বের সাধারণ মানুষের কড়া নজরদারিতে ধরা পড়ে গেছে। কিন্তু কী ধরনের বর্বরতার আশ্রয় নিয়েছে, তার শুক্রবারের একটি রিপোর্ট পাঠকদের কাছে পেশ করা যেতে পারে। সেখানকার হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যবস্থাকে বিনষ্ট করে দেওয়ার ফলে অসংখ্য রোগী কষ্টদায়ক মৃত্যু বরণ করেছে।
আল-শিফা হাসপাতালের ডিরেক্টর বলেছেন, গুরুতর অসুস্থ যে রোগীরা আইসিইউ ওয়ার্ডে ছিল তারা সকলেই মারা গেছে। হাসপাতালে যে সমস্ত অসুস্থরা চিকিৎসা নিচ্ছিল, চিকিৎসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা এখন মারা যাচ্ছে।
আল-শিফা হাসপাতালে প্রায় ৭,০০০ মানুষ ইসরাইলের ঘেরাব¨ির মধ্যে পড়েছে। খাদ্য, ওষুধ ও পানির অভাবে তারা অনেকেই মৃত্যু মুখে। তার উপর দখলদার ইসরাইলি সেনারা যখন তখন এই মানুষদের হত্যা করছে। আল-শিফা হাসপাতালের ডিরেক্টর বলেছেন, হাসপাতালটি এখন আর এক নতুন কারাগারে পরিণত হয়েছে। ইসরাইলি সেনারা এখন পশ্চিম তীরের জেনিন হাসপাতালেও আক্রমণ চালিয়েছে। ইসরাইল বলছে, তাদের ধারণা হাসপাতালগুলি হচ্ছে হামাসের মূল ঘাঁটি। আর অসুস্থ রোগীরাও হচ্ছে হামাসের জঙ্গি। এছাড়া শিশু ও বালকদেরও ইসরাইল জঙ্গি হিসেবে গণ্য করছে।
ইতিমধ্যে গাজার ৬-৭টি হাসপাতাল ইসরাইল হয় বিনষ্ট না হয় তাদের সেবা দেওয়ার ক্ষমতা শেষ করে দিয়েছে। অর্থাৎ হাসপাতাল, চার্চ, স্কুল মসজিদ, এতিমখানা যেগুলিকে মানুষ মনে করে যে যুদ্ধের সময়ও এখানে হামলা করা যাবে না, পুরো বিশ্বকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ইসরাইল তাই করছে।
তার পার্টনার আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তৎক্ষণাৎ ঘোষণা করেছেন, ইসরাইলের হাসপাতালে হামলা করার নাকি অধিকার রয়েছে। কাজেই ইসরাইলকৃত নরসংহারকে স্বাভাবিক আখ্যা দিতে জো বাইডেনের বিন্দুমাত্র সময় লাগেনি।
ইসরাইল জানিয়েছে, তারা তাদের ‘স্থল অভিযান’ আরও প্রসারিত করবে। অর্থাৎ সাধারণ মানুষকে তারা মৃত্যু ও ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। কিন্তু এই ‘বিজয়’ ইসরাইলের যায়নবাদী মুখোশ ও আমেরিকার ইসলাম বিদ্বেষী পাঁয়তারাকে সারাবিশ্বের সামনে নিয়ে এসেছে।