পারিজাত মোল্লা: শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে উঠে মেট্রোরেল সম্প্রসারণ প্রকল্পে গাছ কাটা সংক্রান্ত মামলা। জোকা-বিবাদী বাগ রুটের জন্য ময়দানে স্টেশন তৈরি করছে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ। সেই কাজের জন্য নির্বিচারে গাছকাটার অভিযোগ উঠেছে। তাই মামলা হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টে। সেই মামলায় নতুন করে গাছ কাটা যাবে না বলে অন্তবর্তী নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। শুক্রবার হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ এই নির্দেশ দিয়েছে। ময়দান এলাকায় মেট্রো স্টেশনের কাজ করতে নতুন করে গাছ কাটা যাবে না, শুক্রবার এমনই নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবাজ্ঞানমের ডিভিশন বেঞ্চ।
তবে আদালত জানিয়েছে, ‘মেট্রোরেলের কাজ বন্ধ রাখার প্রয়োজন নেই। কাজ যেমন চলছে চলবে। কাজ করতে গিয়ে যদি নতুন করে গাছ কাটার প্রয়োজন হয়, উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের (বন দফতর) থেকে অনুমতি নিতে হবে আরভিএনএলকে’।
বন দফতর ও রাজ্যকে এই মামলায় পক্ষভুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। আরভিএনএল, সেনাবাহিনী, রাজ্যের মুখ্যসচিব, কলকাতা পৌরনিগম, বনমন্ত্রক, বনদফতরকে হলফনামা দিয়ে তাদের বক্তব্য জানাতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের তরফে। আগামী ১৯ ডিসেম্বর এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে। এর আগে মেট্রোরেলের কাজের জন্য ময়দান এলাকায় গাছ কাটার উপর স্থগিতাদেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্টের পূজাবকাশকালীন বেঞ্চ। এই মামলার শুনানিতে এদিন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি এজলাসে জানান, ‘মেট্রো পরিষেবা এখন বিলাসিতা নয়। এটা এখন মানুষের কাছে প্রয়োজনীয় বিষয়। তাই মেট্রো ও পরিবেশ রক্ষা, দু’টোর মধ্যে যাতে ভারসাম্য থাকে, সেই বিষয় বিশেষ ভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে’। পিপল ইউনাইটেড ফর বেটার লিভিং ইন ক্যালক্যাটা বেসরকারি সংস্থা নির্বিবাদে গাছ কাটা হচ্ছে অভিযোগ তুলে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে।
এদিন শুনানিতে ওই সংস্থার আইনজীবী এজলাসে জানান , ”মোমিনপুর থেকে ধর্মতলা মেট্রোর কাজের জন্য নির্বিবাদে গাছ কাটা হচ্ছে ময়দান এলাকায় । আরভিএনএল (রেল বিকাশ নিগম লিমিটেড) কাজ করছে। মোট ৭০০ গাছ কাটবে তারা, সংবাদমাধ্যম সূত্র থেকে আমরা জানতে পেরেছি। তার মধ্যে প্রায় ২০০টি শুধুমাত্র মেশিন ও অন্যান্য জিনিসপত্র বহনের সুবিধার জন্য। আরটিআই করেছিলাম আমরা। উত্তর পাইনি। ৩২৫ মিটার ময়দান স্টেশন তৈরি হবে। খোঁড়া হচ্ছে মেশিন দিয়ে। একটা অংশ ব্যারিকেড করে ঘেরা। কাউকে সেই অংশে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। গত ২৫ সেপ্টেম্বর প্রথম চিঠি দিয়েছিলাম আমরা কর্তৃপক্ষকে। কিছু উত্তর দেওয়া হয়নি । পুজোর পরে মার্কিং করা হবে আরও গাছ । পরিবর্তে অন্যত্র গাছ লাগানো হবে বলা হচ্ছে । কিন্তু দীর্ঘদিন পুরনো গাছ কাটা হচ্ছে । এই ক্ষতি পূরণ হবে ? গাছ কাটার প্রয়োজনীয় অনুমতি নেই আরভিএনএলের । আরভিএনএল এবং কেন্দ্রকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল ২৩ অক্টোবর । কিন্তু তারা কোনও উত্তর দেয়নি।”
রাজ্যের আইনজীবী বলেন , “কাজ করছে আরভিএনএল । সেনাবাহিনীর জায়গা । রাজ্য শুধু আইনরক্ষার কাজ করতে পারে ।” তবে আরভিএনএলের পক্ষে আইনজীবী বলেন, “কলকাতা হাইকোর্টে আগে একটি জনস্বার্থ মামলা হয় । সেই মামলার নির্দেশ মতো আরভিএনএলকাজ করছে ।”আগের শুনানিতে হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ রয়েছে , -‘ময়দান কলকাতার অন্যতম ফুসফুস । একই সঙ্গে প্রতিদিনের হাঁটা, খেলাধুলো ও ঘোরাঘুরির জায়গা । অন্যান্য বড় শহরের সঙ্গে তুলনা করে সব থেকে তাপমাত্রা বৃদ্ধির শহর বলে কলকাতাকে চিহ্নিত করা হয়েছে । এই ধরনের গাছ কাটা অবিলম্বে বন্ধ হওয়া উচিত । প্রায় ৭০০ গাছ কাটা হবে শুনে আদালতও চমকিত’ ।এদিন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চও আদালতের আগের দিনের পর্যবেক্ষণকে সমর্থন জানায় ।
এর পাশাপাশি প্রধান বিচারপতি টিএস শিবাজ্ঞানম বলেন, “কোথা দিয়ে জাতীয় সড়ক বা কোথা দিয়ে মেট্রো টানেল যাবে, সেটা আদালত নির্ধারণ করতে পারে না ।”হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি এদিন বলেন, “মেট্রো রেল প্রয়োজন, এটা অনস্বীকার্য। কিন্তু ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। ময়দান হল শহরের বড় ফুসফুস।” মামলাকারী সংগঠন যাতে এই মামলাকে লড়াইয়ের জন্য না নেয়, সেই কথাও বলেন প্রধান বিচারপতি। তিনি বলেন, “আমরা গর্বের সঙ্গে বলতে পারি জলের তলায় প্রথম মেট্রো এখানেই।”তবে মামলাকারী পক্ষের অভিযোগ ছিল, কলকাতায় গাছ লাগানো যতটা উচিত্, তার মাত্র ৩০ শতাংশ হচ্ছে। মামলাকারীর সেই অভিযোগের কথাও এদিন উঠে আসে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের কথায়।
৩০ শতাংশেরও কম নতুন করে গাছ লাগানো হয়েছে, সেই মন্তব্যও করেন তিনি। তবে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ এও স্পষ্ট করে দিয়েছে যে মেট্রোর প্রজেক্ট বন্ধ করে দেওয়ার কথা বলেনি কলকাতা হাইকোর্ট। তবে অনুমতি ছাড়া কোনও গাছ কাটা যাবে না, পর্যবেক্ষণ হাইকোর্টের। প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ এদিন জানায়, -‘ সেনার অনুমতি ছাড়া নতুন করে গাছ কাটা যাবে না’।
উল্লেখ্য, এদিন মামলার শুনানিতে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের তরফে জানানো হয়, নতুন করে গাছ বসানোর করার কাজ এখনও হয়নি। সেই নিয়ে কলকাতা পুরনিগমের কী ভূমিকা রয়েছে? তাও জানতে চান প্রধান বিচারপতি। মামলায় হেরিটেজ কমিশনের বক্তব্যও জানতে চাওয়া হয়েছে, কারণ খুব কাছেই রয়েছে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল। আগামী ১৯ ডিসেম্বর এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে।মেট্রোর কাজের জন্য ময়দান এলাকায় নতুন করে কোনও গাছ কাটা যাবে না। এই অন্তর্বর্তী নির্দেশ দিয়ে জানাল কলকাতা হাইকোর্ট। শুক্রবার প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে , -‘ওই প্রকল্পের জন্য কেন্দ্রের পরিবেশ মন্ত্রকের বক্তব্য জানতে চায় আদালত’।