ঘটনাস্থল থেকে প্রতিবেদন: ইসরাইল দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছে, গাজার আল-শিফা হাসপাতালের নিচে হামাসের কমান্ড সেন্টার রয়েছে। এই দাবির ভিত্তিতে তারা আল-শিফা হাসপাতালে আক্রমণ করে। তারা বুধবার প্রথম বারের মতো হামলা চালায়। এরপর বৃহস্পতিবারও হামলা চালায় তারা।
ইসরাইলি বাহিনী দাবি করেছে, অভিযানে তাদের দাবির পক্ষে প্রমাণ মিলেছে। তবে দেখা যাক কী প্রমাণ মিলেছে তাদের।
হাসপাতালে কী পাওয়া গেল?
ইসরাইলি সামরিক বাহিনী হাসপাতালের একটি অব্যবহৃত ভবনের ভিডিয়ো ফুটেজ প্রকাশ করেছে। সেখানে দেখানো হয়েছে, তিনটি ডাফেল ব্যাগ, প্রতিটিতে একটি অ্যাসল্ট রাইফেল, গ্রেনেড, হামাসের ইউনিফর্ম ও ফ্ল্যাক জ্যাকেট রয়েছে। এ ছাড়া আরও একটি অ্যাসল্ট রাইফেল ও ল্যাপটপ পাওয়া গেছে বলেও দাবি করা হয়েছে।
হামাসের টানেল ও সামরিক কমান্ড সম্পর্কে কী পাওয়া গেল?
অভিযানের আগের দিনগুলোতে ইসরাইল জোর দিয়ে বলেছিল, হামাস আল-শিফা হাসপাতালের নিচ থেকে টানেল পরিচালনা করছে। তারা আরও দাবি করেছিল, হাসপাতালটি হামাসের একটি কমান্ড সেন্টার ও সামরিক চৌকিও বটে।
ইসরাইলের দাবিগুলোকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও সমর্থন করেছিলেন। তিনি হাসপাতালের নিচ থেকে যুদ্ধ পরিচালনার অভিযোগ এনে হামাসকে যুদ্ধাপরাধের জন্য অভিযুক্তও করেছিলেন।
অভিযান শুরু হওয়ার পর ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় পার হয়ে গেছে। কিন্তু তারা নিজেদের দাবির পক্ষে একটি প্রমাণও পেশ করতে সক্ষম হয়নি।
ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র জোনাথন কোনরিকাস বলেন, ‘এই অস্ত্রগুলোর একটিও হাসপাতালের কোনও প্রয়োজন নেই। তিনি বলেন, আমি ভেবেছিলাম যে উপাদানটি ‘আইসবার্গের শীর্ষ’।
ইসরাইলের দাবি ও ভিডিয়োতে অমিল কী?
প্যালেস্টাইন ন্যাশনাল ইনিশিয়েটিভের জেনারেল সেক্রেটারি মুস্তাফা বারঘৌতি বলেছেন, ইসরাইলের প্রকাশিত ভিডিয়োতে যা দেখা গেছে, তা তো তারাই সেখানে রাখতে পারে। এটি তো খুব বেশি কিছু নয়।
তিনি আরও বলেন, ইসরাইল প্রথমে কিছু দর্শককে আল শিফার ওই অব্যবহৃত কামরায় নিয়ে যাওয়ার ভিডিয়ো প্রকাশ করেছে, সেখানে তারা দাবি করেছিল যে কোনও সম্পাদনা বা কাটছাঁট ছাড়াই তারা ভিডিয়োটি প্রকাশ করেছে। পরে তারা ওই ভিডিয়োটি আবার ডিলিট করে দেয়। এরপর তারা পুনরায় ভিডিয়োটি প্রকাশ করছে। কিন্তু নতুন ভিডিয়োর সঙ্গে পুরনো ভিডিয়োর অভিন্নতা পাওয়া যায়নি। এই বিষয়টিও ইসরাইলি বাহিনীর দাবির সত্যতা নিয়ে সন্দেহকে ঘনীভূত করে।
হামাস কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে?
হামাস ইসরাইলি বাহিনীর সর্বশেষ বিবৃতি অস্বীকার ও প্রত্যাখ্যান করেছে। কাতার-ভিত্তিক হামাসের সিনিয়র সদস্য ইজ্জাত আল রাশক বলেছেন, ‘দখলদার বাহিনী এখনো মিথ্যাচার করছে।… তারা কিছু অস্ত্র, কাপড় ও সরঞ্জাম পাওয়ার দাবি করেছে। কিন্তু বাস্তবতা হল, তারা নিজেরাই সেগুলো আগে এনে রেখেছে।’
তিনি আরও বলেন, হামাস বার বার রাষ্ট্রসংঘ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও রেড ক্রিসেন্টের আন্তর্জাতিক কমিটির অধীনে ইসরাইলের দাবির সত্যতা যাচাইয়ের আহ্বান জানিয়েছে। কিন্তু তারা তো আহবানে সাড়া দেয়নি।
বারঘৌতি বলেন, ইসরাইল বরাবরই আল-শিফা হাসপাতালের পরিস্থিতি তদন্তের জন্য একটি স্বাধীন ও আন্তর্জাতিক সংস্থার অধীনে তদন্তের আহবান প্রত্যাখ্যান করে এসেছে। কারণ, তারা নিজেদের মিথ্যাচার সম্পর্কে সচেতন। তাই অন্যদের সামনে মিথ্যা যেন প্রকাশ না পায়, সেজন্য ওই আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছে।
আল-শিফায় এখন কী ঘটছে?
ইসরাইলের সামরিক বাহিনী আল-শিফা হাসপাতালে আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে। তারা হাসপাতালের চারপাশে সেনা মোতায়েন করে রেখেছে। বিষয়টি আল জাজিরার হানি মাহমুদ দক্ষিণ গাজার খান ইউনিস থেকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি আরও জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী হাসপাতালের অপারেশন সেক্টর ধ্বংস করে ফেলেছে। এ ছাড়া কক্ষের মাঝখানের দেওয়াল ও ভেতরের চিকিৎসাসামগ্রীও সম্পূর্ণ অকেজো করে ফেলেছে।
শতাধিক রোগী, ডাক্তার ও নার্স ও আল-শিফায় আশ্রয় নিচ্ছেন এমন আরও দুই হাজারেরও বেশি লোক এখনও হাসপাতালে রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বারঘৌতি বলেন, আমরা আজকে যা দেখছি তা হল এই যুদ্ধটি বেসামরিক নাগরিকদের ওপর আক্রমণ, হাসপাতাল আক্রমণ ও চিকিৎসা-সামগ্রী ধ্বংসের জন্য করা হয়েছে।