পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: : প্রায় তিনটে বছর বিরাট কোহলির ব্যাট থেকে আসে নি কোনও সেঞ্চুরি। রান পেয়েছেন, কিন্তু সেঞ্চুরি পাননি। ক্যাপ্টেন হিসেবে একের পর এক সিরিজ জয় করলেও কোহলির অধিনায়কত্বে ভারত কোনও আইসিসি ট্রফি পায়নি। আর তাতেই বিরাট কোহলির নাম শুনলেই অনেকের মুখেই শোনা যাচ্ছিল বিদ্রুপের সুর। কেউ বলেছিলেন বাতিল ঘোড়া, কেউ বলেছিলেন বিরাটকে ক্যাপ্টেনসি থেকে সরিয়ে দেওয়া হোক, ভারতীয় টিম থেকে বুড়ো ঘোড়াদের ছেঁটে ফেলা হোক। বিরাট কর্ণপাত না করে নিজেই ক্যাপ্টেনসি ছেড়ে দিলেন। আর তারপর যে খেলাটা শুরু করলেন সেটাকে বিরাটোচিত বললেও বোধহয় কম বলা হবে। চলতি বিশ্বকাপ বিরাট কোহলির বিশ্বকাপ। এটা অতি বড় বিরাট বিরোধীও অস্বীকার করতে পারবেন না।
আর সেই বিশ্বকাপে নিজের পারফরমেন্সের আরও একটা নমুনা তিনি দেখিয়ে দিলেন ওয়াংখেড়েতে সেমিফাইনালে চলতি বিশ্বকাপের তৃতীয় ও তাঁর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কেরিয়ারের পঞ্চাশ নম্বর ওয়ানডে সেঞ্চুরি করে। বেঙ্গালুরুতে ডাচদের বিরুদ্ধেই বিরাটের ৫০ নম্বর সেঞ্চুরি প্রত্যাশা করেছিলেন অনেকেই। কিন্তু তা হয়নি। মুম্বই সেই প্রত্যাশা পূরণ করে দিয়েছে। শচীন তেন্ডুলকরের সামনেই তাঁর রেকর্ড ভেঙে পঞ্চাশটি সেঞ্চুরি করার সঙ্গে সঙ্গে আধুনিক ক্রিকেটের ডনের আর তিনটি রেকর্ডও ভেঙে দিয়েছেন ভারতীয় ক্রিকেটের নতুন রাজা।
টসে জিতে এদিন প্রথম ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা। শুভমানের সঙ্গে জুটি বেঁধে রোহিত দারুণ শুরু করলেন। ৪টি চার ও চারটি ছক্কার সাহায্যে মাত্র ২৯ বলে ৪৭ রান করে ফিরলেন ভারত অধিনায়ক। গিলও বেশ মারছিলেন। কিন্তু ৭৯ রান করার পর পায়ে ক্র্যাম্প ধরায় মাঠ থেকে বেরিয়ে যান। শ্রেয়সকে সঙ্গী করে বিরাট কোহলি নিজের লক্ষ্যের দিকে এগোতে থাকেন। একটাও ভুল শট খেলেননি সেঞ্চুরির আগে পর্যন্ত।
শচীন তাঁর ৪৯ টি সেঞ্চুরি করেছিলেন ৪৫২টি ইনিংস খেলে। আর বিরাট এদিন তাঁর ৫০ নম্বর ওয়ানডে সেঞ্চুরি পূরণ করলেন মাত্র ২৭৯ টি ইনিংস খেলে। গ্যালারিতে তখন এক বিরল দৃশ্য। একাধারে শচীন দেখছেন তার রেকর্ড ভেঙে যাওয়ার দিনকে, আর ডেভিড বেকহ্যাম উপভোগ করছেন তাঁর প্রিয় কোহলির সেঞ্চুরির অর্ধশতক। অনুষ্কা শর্মা আবেগি হয়ে পড়ছেন বারবার। বিরাট আনন্দে লাফিয়ে উঠলেন। তারপরই দুহাত তুলে শচীনকে শ্রদ্ধা জানালেন।
১১৭ রানে তিনি ফেরার পর বাকি কাজ সারলেন শ্রেয়স আইয়ার। তিনিও চলতি বিশ্বকাপে নিজের দ্বিতীয় সেঞ্চুরিটা হাঁকিয়েই দিলেন। কোহলি ফেরার পর রাহুল মারমুখী ছিলেন।
২০ বলে তিনি ৩৯ রান করেন। ভারত শেষ পর্যন্ত ৩৯৭ রান তুলল। পাহাড় প্রমাণ রান তাড়া করতে নেমে নিউজিল্যান্ড শুরুতেই দুটি উইকেট হারালেও শেষ পর্যন্ত তারা যে লড়াইটা লড়ল সেটার প্রশংসা করতেই হয়। ডারেল মিচেল সেঞ্চুরি করলেন। নিউজিল্যান্ড যখন ম্যাচটা প্রায় ধরে নিয়েছে, সেই সময়ই ফের ভারতের উদ্ধারকর্তা মুহাম্মদ শামি। চারটি উইকেট তুলে নিয়ে তিনি কিউয়িদের জয়ের রাস্তা বন্ধ করে দিলেন।