আহমদ হাসান ইমরান: ইসরাইলের ঘাতক সৈন্যবাহিনী গাজার আল-শিফা হাসপাতালের দখল নিয়েছে। তাদের বড় ভয় ছিল এই আল-শিফা হাসপাতালই বোধহয় হামাস যোদ্ধাদের ঘাঁটি! নৃশংস ইসরাইলি সেনারা আল-শিফা হাসপাতালের গেটে এবং আশপাশে গুলি চালিয়ে প্রচুর বেসামরিক ব্যক্তিকে হত্যা করেছে বলে বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে। তবে ফিলিস্তিনের অধিবাসীরা যে খুনি ইসরাইলি সেনাদের ভয় পায় না, তা বোঝা গেল যখন ট্যাঙ্ক নিয়ে ইসরাইলি বাহিনী আল-শিফা হাসপাতালে দখল কায়েম করতে এলো। ডাক্তার, নার্স ও সাধারণ মানুষ— সকলেই তাদের বাধা দিয়েছে।
ইসরাইলি সেনাবাহিনীর রাইফেল ও ট্যাঙ্ককে যে তারা ভয় পায় না, তা বিভিন্ন ফুটেজ থেকে প্রমাণ। হাসপাতালের দখল নিয়ে ইসরাইলি সেনারা প্রথমে সমস্ত রোগী ও চিকিৎসকদের বের করে দেয়। মুমূর্ষু রোগীরাও রাস্তায় খোলা আকাশের নীচে পড়ে থাকতে বাধ্য হয়।
ইসরাইলি সেনারা জেহোবা-র নাম করতে করতে বুক উঁচিয়ে অতি সন্তর্পণে চলে যায় হাসপাতালের বেসমেন্টে। সেখানে পৌঁছে অবশ্য তাদের খুব দুঃখ হয়। তারা এতদিন প্রচার করে আসছিল, আল-শিফা হাসপাতালের বেসমেন্টে কিংবা তার নীচে রয়েছে হামাসের ঘাঁটি। এমনকী জো বাইডেনও ইসরাইলি প্রোপাগান্ডায় আস্থা রেখে বলে দিয়েছেন, আরে হাসপাতালগুলিই তো হচ্ছে হামাসের মূল কেন্দ্র। ইসরাইল তো ঠিকই বলেছে। সকলেই এখন জানে ইসরাইল হচ্ছে আমেরিকার পোষিত ও পালিত এক জবরদ’লকারী রাষ্ট্র। কিন্তু দেখা গেল আশ শিফা হাসপাতালে হামাশের মুজাহিদরা তো নেই। নেই কোনও অস্ত্রশস্ত্র ভাণ্ডারও।
ইসরাইলের খুনি সেনাদের বক্তব্য, এত বাংলার পিসি সরকারের অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার খেলার মতো। হামাসের মুজাহিদদের কোনও স্ট্রেশ বা হদিশ নেই। ইসরাইল দাবি করেছে, তারা বেশকিছু হামাস মুসাজিদকে হত্যা করেছে। কিন্তু গাজা সূত্রের ‘বর, সাধারণ মানুষকে মেরে তাদের লাশগুলিকে এ’ন ইসরাইল হামাস বলে প্রচার করতে চাইছে। অবশ্য ইসরাইলের সেনা ও রাজনীতিকরা বলেছেন, অবরুদ্ধ গাজায় বসবাসকারী প্রত্যেক শিশু-নারী বৃদ্ধরাও নাকি ‘হামাস’। যায়নবাদী ইহুদিদের প্রচারকে শাবাশি দিতেই হবে। তার কারণ, তাদের হাতে যে সাড়ে চারহাজার শিশু এ’নও পর্যন্ত মারা গিয়েছে, তার কোনও কৈফিয়ত তাদের কাছে নেই। অবশ্য তাদেরকে ‘হামাস’ বানাতে পারলে খানিকটা স্বস্তি পাওয়া যায়। ইসরাইলি বক্তব্যে কেউ হাততালি না দিলেও জো বাইডেন এবং ইহুদি এবং খ্রিস্টান কবলিত মিডিয়া তো রয়েছেই। আর পশ্চিমা ‘বিখ্যাত’ পত্রিকা ও টিভিসমূহ যা প্রচার করে, এপি, রয়টার্স, এএফপি, বিবিসি যেভাবে মিথ্যাকেও সত্যিতে ‘পরিণত’ করে তাকে আবার আমাদের দেশ ভারত-সহ অন্যান্য স্থানের মিডিয়াগুলি সমানে প্রচার করতে থাকে।
‘পুবের কলম’ পত্রিকায় প্রথমেই লে’া হয়েছিল, ছোট্ট জনপদ গাজার নির্বাচিত শাসকদল হামাস ইসরাইল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্মিলিত অর্থ ও মারাত্মক অস্ত্রবল (যার মধ্যে রয়েছে বিমান, ক্ষেপণাস্ত্র, ট্যাঙ্ক, নিষিদ্ধ বোমা প্রভৃতি) তার সঙ্গে আ’েরে পেরে উঠবে না। যদি চিন বা রাশিয়া হামাসকে মদদ দিত, তাহলে ভিন্ন কথা ছিল।
তবে হামাস দেখিয়ে দিয়েছে ঈমানী শক্তির উপর আস্থা রেখে কীভাবে শক্তিশালী জালেমের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো যায়, তাদেরকে বুঝিয়ে দেওয়া যায়, শুধু তোমরা নয়, আমরাও পারি। ৭ অক্টোবরে হামাসের মুজাহিদবাহিনী ইসরাইলের ভিতরে প্রবেশ করে সফল আক্রমণ পরিচালনা করা সারাবিশ্বকে অবাক করে দিয়েছে।
গাজায় ঢুকলেও তারা তেমন করে হামাস মুজাহিদ বাহিনীর খুব একটা সন্ধান পাচ্ছে না। অন্যদিকে তাদের সেনাবাহিনী, ট্যাঙ্ক প্রভৃতির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ইসরাইলের বড় আশঙ্কা, এই হামাস যোদ্ধারা কোথায় গায়েব হল। তবে কী তারা সুড়ঙ্গ কেটে ইসরাইলের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেছে? তাহলেও তো মহাবিপদ।
তবে এই যুদ্ধ ইসরাইলের মুকোশ সারা দুনিয়ার সামনে ‘ুলে দিয়েছে। এটাই যোদ্ধাদের সবথেকে বড় প্রাপ্তি। দ্বিতীয়ত, ফিলিস্তিনের প্রকৃত অবস্থা এবং সমস্যার প্রতি সমস্ত বিশ্বের দৃষ্টি নতুন করে নিবদ্ধ করেছে।