পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: দেশে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক অপরাধের তালিকায় গণ্য হতে পারে। সংসদীয় কমিটির এই রিপোর্ট মোদি সরকারের নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার গ্রহণ করলে, এই ধরনের সম্পর্ক অপরাধের তালিকায় শামিল হবে। তবে সেটি ২০১৮ সালে শীর্ষ আদালতের পাঁচ বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের রায়ের পরিপন্থী হিসেবে গৃহীত হবে।
ভারতের সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ আগে রায় দিয়েছিল, পরকীয়া অপরাধ নয়। পরকীয়া করার জন্য কারও জেল হতে পারে না। পরকীয়া বিবাহ-বিচ্ছেদের গ্রাউন্ড হতে পারে কিন্তু ফৌজদারি অপরাধ নয়। অর্থাৎ, পরকীয়ার অভিযোগ এনে স্বামী বা স্ত্রী ডিভোর্স চেয়ে দেওয়ানি বিধিতে আইনত মামলা করতে পারেন। কিন্তু এবার ভারতের সংসদীয় কমিটি কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আর্জি জানাতে চলেছে যাতে পরকীয়া বা ব্যাভিচারকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হোক। মঙ্গলবার সংসদীয় কমিটির তরফে তেমনই সুপারিশ জানানো হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে। কমিটির দাবি, বিবাহ একটি পবিত্র প্রতিষ্ঠান। সেই বন্ধনকে রক্ষা করা কর্তব্য। সংসদীয় কমিটির মতে, ব্যাভিচার আইনে এতদিন পর্যন্ত শুধুমাত্র পুরুষদেরই অপরাধী গণ্য করে শাস্তিযোগ্য বলে মনে করা হত। এই আইনেও বদল এনে লিঙ্গবৈষম্য ঘোচানোর আর্জি জানানো হয়েছে।
চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা বিল পেশ করে অমিত শাহ নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। ওই বিল নিয়ে মঙ্গলবার একটি রিপোর্ট জমা দেয় সংসদীয় কমিটি। সেখানেই উপরিউক্ত সুপারিশ জানানো হয়েছে।
ভারতীয় ন্যায় সংহিতা অধিনিয়ম বিল দেশের আইনশৃঙ্খলার খোলনলচে বদলে দেওয়ার তিনটি বিলের মধ্যে একটি। আগস্ট মাসে সেটি স্বরাষ্ট্র বিভাগীয় স্ট্যান্ডিং কমিটির কাছে পর্যালোচনার জন্য পাঠানো হয়। এর নেতৃত্বে রয়েছেন বিজেপি সাংসদ ব্রিজ লাল। যদিও এই সুপারিশের বিরোধিতা করেছেন কংগ্রেস সাংসদ পি চিদম্বরম। তাঁর বক্তব্য, কোনও ব্যক্তির জীবনে প্রবেশের অধিকার নেই রাষ্ট্রের। ২০১৮ সালে তদানীন্তন প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, বিবাহবিচ্ছেদ মামলার ক্ষেত্রে বিষয়টি যুক্তিগ্রাহ্য হিসেবে ধরা গেলেও, বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক কখনও অপরাধ হিসেবে গন্য হতে পারে না। আদালত জানায়, একটা সময় ছিল যখন একজন স্ত্রীর কাছে স্বামী প্রভু হিসেবে গণ্য হতেন। কিন্তু এখন দিনকাল পাল্টেছে।
২০১৮ সালে ওই রায়ের আগে পর্যন্ত বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক অপরাধ হিসেবে গণ্য হত। প্রসঙ্গত, ভারতে ব্যাভিচার সংক্রান্ত আইনটি ১৫৭ বছরের পুরনো। ভারতীয় দণ্ডবিধি আইপিসি-র ধারা ৪৯৭ অনুযায়ী, কোনও ব্যক্তি বিবাহিত কোনও মহিলার সঙ্গে স্বেচ্ছায় যৌন সম্পর্ক করলে তা ধর্ষণ নয়, সেটি ব্যাভিচার হিসেবে গণ্য হবে। সেক্ষেত্রে এই পরকীয়া প্রমাণিত হলে এবং অভিযোগ দায়ের হলে শাস্তি শুধু পুরুষেরই হবে। যে মহিলার সঙ্গে তিনি সম্পর্কে জড়িয়েছেন তার কোনও শাস্তি হবে না। পাঁচ বছর পর্যন্ত জেল ও জরিমানা হতে পারে। অবশ্য এই সম্পর্কে সেই বিবাহিত মহিলার স্বামীর মত থাকলে বিষয়টি আর ব্যাভিচারের অপরাধ হিসেবে গ্রাহ্য হবে না। পাঁচ বছর আগে সেই আইন বাতিল করে বিবাহবির্ভূত সম্পর্ককে অপরাধমুক্ত করে শীর্ষ আদালত।