সেখ কুতুবউদ্দিন: এ দেশে ঐতিহ্য রয়েছে আরবি শিক্ষার। কিন্তু স্কুলের আরবি পদে পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকায় বন্ধের মুখে পড়েছিল স্কুলের আরবি শিক্ষা। রাজ্যের ২ হাজারের বেশি হাই স্কুলে আরবিতে পঠন-পাঠন হয়। প্রতিটি স্কুলে রয়েছে একজন করে অনুমোদিত আরবির পদ ।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের বিজ্ঞপ্তি অনুসারে হাইস্কুলের আরবিতে ‘ভ্যাকেন্সি’ ছিল ৩৪৩। এর মধ্যে ৭৯টি এসসি-এসটি, ওবিসি- বি’দের জন্য সংরক্ষিত। আর সংরক্ষিত আসনে প্রার্থী না মেলায় ওই পদ শূন্য রয়েছে। স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি) মোট শূন্য আসনের মধ্যে কাউন্সেলিংয়ে ১৬০ জনকে নিয়োগ দেওয়ার বন্দোবস্ত করে। তবে আরও একটি কাউন্সেলিং রয়েছে। প্রথম কাউন্সেলিংয়ে ১৪৩ জন এবং দ্বিতীয় কাউন্সেলিং মিলে মোট ১৬০ জনকে চূড়ান্ত তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলে জানিয়েছে এসএসসি।
২০১৪ সালের বিজ্ঞপ্তি অনুসারে পরীক্ষা হয় ২০১৫ সালে। ২০২১ সালে ১৪ হাজার শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করলেও সেই তালিকা বাতিল করে কলকাতা হাইকোর্ট। তারপর আদালতের নির্দেশে পুনরায় কাউন্সেলিং শুরু হয়। অন্যান্য ‘সাবজেক্ট’-এর সঙ্গে আরবি বিষয়েও নিয়োগের তালিকা তৈরি করে এসএসসি। আদালতের নির্দেশানুসারেই প্রার্থীদের ‘রেকমেন্ডেশন’ লেটার পাঠাবে এসএসসি।
চাকরিপ্রার্থীদের বক্তব্য, এসসি-এসটিদের জন্য সংরক্ষিত আসন থাকার জন্য আরবি বিষয়ে প্রার্থী পাওয়া যাচ্ছে না। ওই আসনগুলি শূন্যই থেকে যাচ্ছে। তবে এই বিষয়ে কিছু প্রার্থীর উদ্যোগে আরবি বিষয়ের সংরক্ষিত আসনগুলি ‘ডি-রিজারভেশন’-এর জন্য শিক্ষা দফতরে চিঠি দেওয়া হয়েছে। শিক্ষা দফতরও আরবি বিষয়ের আসনগুলি ‘ডি-রিজারভেশন’ করার বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছে।
আরবি বিষয়ের এই নিয়োগ প্রসঙ্গে বৃহস্পতিবার স্কুল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদার ‘পুবের কলম’কে বলেন, আরবি বিষয়ে ১৬০ জনকে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। আদালতের নির্দেশেই এই নিয়োগ হচ্ছে। আরবি বিষয়ে আরও ভ্যাকেন্সি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই নিয়োগ ২০১৪ সালের বিজ্ঞপ্তি অনুসারে। পরবর্তীকালে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তিতে বাকি ভ্যাকেন্সি পূরণের আশ্বাস দেন এসএসসি-র চেয়ারম্যান।
তাঁর আরও বক্তব্য, প্রতিটি বিষয়ে শিক্ষক নিয়োগের কাউন্সেলিং হচ্ছে। তবে আদালতের নির্দেশেই এই নিয়োগ হচ্ছে। তিনি বলেন, কাউন্সেলিং হলেও সমস্ত প্রার্থীরা উপস্থিত হননি। প্রতিটি বিষয়ে ১০ শতাংশ প্রার্থী অনুপস্থিত ছিলেন। কেন অনুপস্থিতি, এই বিষয়ে এসএসসি জানিয়েছে, উচ্চশিক্ষা বা অন্যত্র চাকরি পাওয়ার জন্য তাঁদের অনুপস্থিতি।
এই নিয়োগ প্রসঙ্গে চূড়ান্ত তালিকাভুক্ত এক চাকরিপ্রার্থী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষায় ছিলাম। এ’ন নিয়োগ হচ্ছে। অধৈর্য হয়নি। এতে খুশি। মুসলিম এলাকার এইসব স্কুলের পড়ুয়ারা আরবি বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করার সুযোগ পাবে।
স্কুলে আরবি শিক্ষক নিয়োগ প্রসঙ্গে গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মেহেদি হাসান বলেন, এতদিন পর হলেও এই নিয়োগে খুশি। এসসি-এসটি সহ অন্যান্য মিলে প্রায় ৮০টি আসন শূন্য। এই আসনগুলিতে প্রার্থী নেই। তাঁর মতে, সংরক্ষিত আসনগুলি আইন মেনে জেনারেলে কনভার্ট করে নিয়োগ হলে আরও চাকরিপ্রার্থী নিয়োগ পাবেন।
এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় শূন্য আসন সংখ্যা আরও বাড়ার কথা। কী কারণে বাড়ল না, তা কমিশনই বলবে। তবে যে সমস্ত শূন্যপদ আছে, সেগুলি অবিলম্বে পূরণ করা হোক। এতে যেমন বেকার ছেলেমেয়েরা চাকরি পাবেন। স্কুলের পড়ুয়ারাও উপকৃত হবে।
এক হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেন, আরবি আরবি আন্তর্জাতিক একটি ভাষা। মধ্য প্রাচ্যের দেশগুলিতে চাকরির সুযোগ বেড়েছে। তাই এই ভাষা শিক্ষার একটা আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। তাই এই বিষয়ে শিক্ষক নিয়োগের প্রয়োজন। তবে সমস্ত স্কুল যাতে নিয়োগ পায় তার বন্দোবস্ত করলে ভালো হয়।