পারিজাত মোল্লা: সোমবার হেফাজত শেষে ব্যাংকশাল আদালতে পেশ করা হয় রাজ্যের বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক কে। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডির আবেদন মেনেই আদালত প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ওরফে বালুকে সাতদিন তাদের হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিল। সোমবার হাসপাতালে চেকআপের পর বালুকে চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তোলা হয়। ভারপ্রাপ্ত বিচারক বিশাখা বন্দ্যোপাধ্যায় দুই পক্ষের সওয়াল শেষে রায়দান স্থগিত রাখেন প্রথমে। পরবর্তীতে ৭ দিনের ইডি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
ইডির আইনজীবীর তরফে জানানো হয় রেশন দুর্নীতি মামলায় ১০ দিন ইডি হেফাজত দেওয়া হয়েছিল মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে।সেই সময় উনি হাসপাতালে ছিলেন। তাই এবার আরও ৭ দিনের জন্য ইডি হেফাজতের আবেদন জানানো হয়েছে।জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যায়নি। আর সেই কারণেই তাঁকে সাত দিনের জন্য হেফাজতে চেয়ে আর্জি জানায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।এদিন জামিনের আবেদনই জানাননি অভিযুক্তের আইনজীবী।শেষ পর্যন্ত আদালত ইডির আর্জি মেনে নেয়।তার আগে আবারও নিজেকে নির্দোষ দাবি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের। ‘আমি নির্দোষ, ওরা, অন্যায়, অনৈতিক কাজ করেছে’ দাবি করেন প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী। আদালতে যাওয়ার আগে তাঁর দাবি, -‘আদালত আমায় মুক্ত করবে’।জানা গিয়েছে, তদন্তে উঠে আসা বেশ কিছু নতুন তথ্য তুলে ধরে প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী ও বনমন্ত্রীকে নিজেদের হেফাজতে চায় ইডি।
কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার দাবি, তদন্তে উঠে এসেছে বেশ কিছু কোম্পানির নাম। ওই সব সংস্থায় বাকিবুরের জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে। অঙ্কিত ইন্ডিয়া লিমিটেড নামে আরও একটি সংস্থার হদিশ মিলেছে, যারা বাকিবুর-মডেলেই চাল কল, আটা কল, কর্পোরেট অফিস-সহ কলকাতা, হাওড়ার বিভিন্ন জায়গায় সাম্রাজ্য বিস্তার করেছে। এই সমস্ত সংস্থায় রেশন দুর্নীতির কালো টাকা ঢুকেছে বলে দাবি করে ইডি।
এই সমস্ত তথ্য পেশ করে প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রীকে আরও জেরা করার জন্য এদিন আদালতে আবেদন জানায় ইডি।এর আগে গত ৩ নভেম্বর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে নিয়ে যাওয়ার সময় তিনি দাবি করেছিলেন, ২ দিনের মধ্যে সত্য প্রকাশ হবে। ৬ তারিখ প্রমাণ করে দেব, আমি নির্দোষ।আদালতের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও বনমন্ত্রী তথা প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের জন্য কম্যান্ড হাসপাতালে মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়নি। রেশন বণ্টন দুর্নীতি মামলার শুনানি চলাকালীন তেমনটাই দাবি করলেন ধৃতের এক আইনজীবী।
মন্ত্রী রাজনৈতিক চক্রান্তের শিকার বলেও মন্তব্য করেন শুনানির সময় আদালতে উপস্থিত এক আইনজীবী।সোমবারই বিস্ফোরক দাবি করেছেন মন্ত্রীর প্রাক্তন পিএ অভিজিত্ দাস। তাঁর দাবি, -‘ মন্ত্রীর নির্দেশেই তাঁর স্ত্রী ও মাকে ৩টি সংস্থার ডিরেক্টর পদে বসানো হয়েছিল’। ইডির দাবি, -‘রেশন দুর্নীতির কোটি কোটি কালো টাকা যে ৩টি সংস্থার মাধ্যমে সাদা করা হয়েছে সেই সংস্থাগুলিতে একসময় ডিরেক্টর ছিলেন মন্ত্রীর স্ত্রী মণিদীপা মল্লিক ও মেয়ে প্রিয়দর্শিনী মল্লিক।
পরে এই ৩টি সংস্থার ডিরেক্টর হন মন্ত্রীর প্রাক্তন আপ্ত সহায়ক অভিজিত্ দাসের স্ত্রী সুকন্যা ও মা মমতা দাস’। অভিজিতের দাবি, -‘মন্ত্রীর নির্দেশে ডিরেক্টর হলেও, সংস্থার কাজ সম্পর্কে কিছু জানা ছিল না। শুধু জানতেন মন্ত্রী ব্যবসা করবেন’। ওই সংস্থাগুলি থেকে কোনও টাকা তাঁর স্ত্রী বা মায়ের অ্যাকাউন্টে ঢোকেনি বলেও দাবি করেছেন জ্যোতিপ্রিয়র প্রাক্তন পিএ অভিজিত্। ধৃত মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের আইনজীবীদের মধ্যে রয়েছেন আনসার মন্ডল মহাশয়।