পারিজাত মোল্লা: বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টের অবকাশকালীন বেঞ্চ পরিস্কারভাবে জানিয়ে দিল রেশন দুর্নীতি মামলায় ধৃত মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের চিকিৎসা সংক্রান্ত নির্দেশ তদন্তকারী সংস্থা ইডির বক্তব্য শোনার পরেই জানানো হবে।
তাই ব্যাঙ্কশাল আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী আপাতত মন্ত্রীর চিকিৎসা চলবে কম্যান্ডো হাসপাতালেই। নিম্ন আদালতে আর্জি খারিজ হয়ে যাওয়ায় কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল কম্যান্ড হাসপাতাল। তবে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের ইস্যুতে হাসপাতালের আবেদনে এখনই সাড়া দিল না হাইকোর্ট।
ইডির বক্তব্য শোনার পরেই এই বিষয়ে বিবেচনা করা হবে বলে জানিয়েছেন বিচারপতি মধুরেশ প্রসাদ। আগামী ৮ নভেম্বর এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে বলে জানা গেছে।
রেশন দুর্নীতিতে ধৃত মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের চিকিত্সা কমান্ড হাসপাতালে করাতে পারবে ইডি। এর আগে এমন নির্দেশ দিয়েছিল নিম্ন আদালত অর্থাৎ ব্যাঙ্কশাল আদালত। সেই নির্দেশের বিরুদ্ধে নিম্ন আদালতে গিয়ে বিফল হয় কমান্ড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সেই কারণে তারা কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়।
বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্ট জানিয়ে দিল জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের চিকিত্সা আপাতত কমান্ড হাসপাতালকেই করতে হবে। জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের চিকিত্সা সংক্রান্ত মামলায় কমান্ড হাসপাতালের আবেদনে এখনই সাড়া দিল না কলকাতা হাইকোর্ট।
ইডির বক্তব্য জানার পরেই বিবেচনা করা হবে বলে জানালেন হাইকোর্টের নবনিযুক্ত বিচারপতি মধুরেশ প্রসাদ। আগামী ৮ নভেম্বর এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে।
এদিন আদালতে কমান্ড হাসপাতালের আইনজীবী জানান, ওই হাসপাতালে সেনা, নৌ-সেনা এবং বায়ুসেনা-সহ সামরিক বাহিনীর লোকজন ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের চিকিত্সা দেওয়া হয়। সেখানে বাইরের কাউকে চিকিত্সা করাতে সমস্যা রয়েছে।
এর আগেও একাধিকবার ইডি ওই হাসপাতালে বাইরের অনেক ধৃতকে (রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে) চিকিত্সা করাতে নিয়ে গিয়েছে। আপাতত কোনও অন্তর্বর্তী নির্দেশ দেওয়া হোক’ ।
এর প্রত্যুত্তরে কেন্দ্রীয় আর্থিক তদন্তকারী সংস্থা ইডির আইনজীবী বলেন, ‘কেন্দ্রীয় সরকারের দুই সংস্থা একে অপরের বিরুদ্ধে হাসপাতালে আসতে পারে না । এর নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া রয়েছে। আমাদের সঙ্গে কমান্ডের কোনও ব্যক্তিগত সমস্যা নেই। আমরা দুই সংস্থাই দেশের জন্য কাজ করি। মামলাকারীর আবেদনে সাড়া না দিয়ে, সময় দেওয়া হোক। উচ্চতর কতৃপক্ষের বক্তব্য জানাতে সময় দেওয়া হোক।”
অপরদিকে কমান্ড হাসপাতালের তরফে জানানো হয়, অর্ন্তবর্তী নির্দেশ দিক আদালত। যাতে বাইরের আর কাউকে বা জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককেও ওখানে চিকিত্সার জন্য না পাঠানো হয়-‘ ।
বিচারপতি দুই পক্ষের বক্তব্য শোনার পর নির্দেশে জানান, -‘ এখনই কোনও অন্তর্বর্তী নির্দেশ দেওয়া হবে না’ । এর ফলে রাজ্যের মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে কমান্ড হাসপাতালে চিকিত্সা করতে কোনও বাধা থাকল না।
প্রসঙ্গত, রেশন দুর্নীতিতে গ্রেফতার হয়েছেন প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী তথা বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। হেফাজতে থাকাকালীন ইডি প্রয়োজনে তাঁকে কমান্ড হাসপাতালে চিকিত্সা করাতে পারবে বলে গত শুক্রবার নির্দেশ দেন ব্যাঙ্কশাল আদালতের বিচারক। যদিও আদালত কক্ষেই মন্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাঁকে বাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভরতি করা হয়। সেখান থেকে ছুটি পাওয়ার পর জ্যোতিপ্রিয় এখন সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে ইডি হেফাজতে রয়েছেন। তবে কমান্ড হাসপাতাল নিম্ন আদালতে গিয়ে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের চিকিত্সা করানো থেকে অব্যাহতি চায়। সেই আবেদন নিম্ন আদালত খারিজ করে দেয়। এর পর তারা কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়। যদিও তার আগেই গত বুধবার ইডি জ্যোতিপ্রিয়কে কমান্ডে নিয়ে যায়। সেখানেই তাঁর স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়।
বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্ট জ্যোতিপ্রিয়র চিকিত্সা থেকে সেনার ওই হাসপাতালকে রেহাই দিল না। আগামী ৮ নভেম্বর পরবর্তী শুনানি।