পারিজাত মোল্লাঃ রাজ্য রাজনীতিতে একমুহূর্তে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হচ্ছে রেশন দুর্নীতি মামলা।ব্যবসায়ী বাকিবুর রহমান গ্রেফতারি পরবর্তীতে প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী তথা বর্তমান বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক গ্রেপ্তার হওয়ায় রাজ্যজুড়ে চলছে পক্ষে বিপক্ষে আলোচনা। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ঠিক এহেন পরিস্থিতিতে রেশন দুর্নীতিতে মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের সাথে সাংসদ কাকলি ঘোষ দাস্তিগারের নাম জড়িয়েছেন সংবাদ মাধ্যমের সামনে।
প্রসঙ্গত, ইডির বর্তমান হেফাজতে থাকা মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের সংশ্লিষ্ট এলাকার সাংসদ হচ্ছেন কাকলি।বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে এবার আইনি নোটিস পাঠালেন বারাসতের তৃণমূল সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার। সম্প্রতি রেশন দুর্নীতির অভিযোগে কেন্দ্রীয় আর্থিক তদন্তকারী সংস্থা ইডি গ্রেফতার করেছে বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে। তাঁর সঙ্গে দুর্নীতিতে কাকলিও জড়িত বলে মন্তব্য করেছিলেন শুভেন্দু। সেই মন্তব্যের প্রেক্ষিতেই এই নোটিস পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন সাংসদ।মঙ্গলবার নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে সেই আইনী নোটিসটি পোস্ট করেছেন সাংসদ ।
সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি লিখেছেন , ”আমার এবং আমার পরিবারের সবাই খেটে খাওয়া মানুষ, আমরা অনৈতিক ভাবে কোনও উপার্জন করি না। অন্যায়ের সাথে আপস করি না। আমাদের নামে যে ভাবে সংবাদ মাধ্যমের সামনে কুরুচিকর মন্তব্য করেছে তার জন্যই শুভেন্দু অধিকারীকে মানহানির আইনি নোটিস পাঠালাম।” জানা গেছে সাংসদের তরফে শুভেন্দু কে এই নোটিসটি পাঠিয়েছেন সাংসদের আইনজীবী প্রসেনজিত্ নাগ। জানা যাচ্ছে , জ্যোতিপ্রিয়ের গ্রেফতারির পর রানাঘাটে দলীয় কর্মসূচিতে যোগদান করতে গিয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা। সেখানেই সংবাদমাধ্যমের এক প্রশ্নের জবাবে শুভেন্দু একটি মন্তব্য করেন। সেই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে মানহানির নোটিস পাঠানো হয়েছে।
নোটিসে দাবি করা হয়েছে, ‘সমাজমাধ্যমে বিরোধী দলনেতাকে বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের সঙ্গে সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদারও জড়িত।”’ এই মন্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে নোটিসে বলা হয়েছে, ‘কাকলি শুধু এক জন রাজনীতিকই নন, এক জন নির্বাচিত সাংসদ এবং নামী চিকিত্সকও। তাই বিরোধী দলনেতার মন্তব্যে তাঁর এবং পরিবারের সম্মানহানি হয়েছে।
নোটিস পাওয়ার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে নিঃর্শত ক্ষমা না চাইলে শুভেন্দুর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হবে।’ সোশ্যাল মিডিয়ায় যে লিঙ্কে শুভেন্দু ওই মন্তব্য করছেন, সেই লিঙ্কও তুলে দেওয়া হয়েছে মানহানির নোটিসে। বারাসতের তৃণমূল সাংসদের পাঠানো নোটিসে গুরত্ব দিতে চাননি বিরোধী দলনেতা। তিনি সংবাদ মাধ্যমে জানিয়েছেন , ”এই নোটিসের জবাব আইনি পথেই দেওয়া হবে।” রেশন দুর্নীতিতে ইডির হাতে ধৃত জ্যোতিপ্রিয়কে নিয়ে এখন রাজ্য রাজনীতি উত্তাল। সেই সময় জ্যোতিপ্রিয়ের সঙ্গে তাঁর নাম জড়াক, চান না কাকলি বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল ।
তাই তিনি শুভেন্দুর মন্তব্যের কথা জানার পরেই আইনি নোটিস পাঠিয়েছেন বলে জানা গেছে। কাকলি যে বারাসত লোকসভার সাংসদ, জ্যোতিপ্রিয় সেই লোকসভার অধীনে হাবড়া বিধানসভার বিধায়ক।
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী স্বাধ্বী নিরঞ্জন সম্পর্কে কুকথা বলেন তৃণমূল সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদার, এমনই অভিযোগ তুলেছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। তোপ দাগেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছিলেন, -‘ একজন নারী সম্পর্কে এই ধরনের মন্তব্য করাটা একজন এমপির পক্ষে শোভন নয়। তিনি আবার চিকিত্সকও’। উল্লেখ্য, দিল্লিতে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী স্বাধ্বী নিরঞ্জনের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন তৃণমূলের নেতারা। কিন্তু সেখানে তাঁর দেখা পাননি তাঁরা। এরপর কলকাতায় এসে রাজভবনের সামনে ধর্না।বিরোধী দলনেতাকে আইনি নোটিস পাঠিয়ে কাকলি বলেছেন, ‘আমি এবং আমার পরিবারের সবাই খেটে খাওয়া মানুষ, আমরা কোনও অনৈতিকভাবে উপার্জন করি না। অন্যায়ের সঙ্গে আপস করি না।” তিনি বলেন, ‘আমাদের নামে যেভাবে সংবাদমাধ্যমের সামনে কুরুচিকর মন্তব্য করা হয়েছে, তার জন্যই শুভেন্দু অধিকারীকে মানহানির আইনি নোটিস পাঠালাম।”কাকলির এই দাবি নিয়ে পাল্টা প্রশ্নও উঠেছে। নারদ স্টিং অপারেশন কাণ্ডে কাকলি ঘোষ দস্তিদারকে টাকা নিতে দেখা গিয়েছিল। ওই কাণ্ডে অভিযোগ রয়েছে শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধেও।
তবে সাংসদদের বিরুদ্ধে নারদ কাণ্ডে তদন্ত এগোনোর জন্য কেন্দ্রীয় এজেন্সি এখনও সংসদের অনুমতি পায়নি। তাই নারদ কাণ্ডে শোভন চট্টোপাধ্যায় বা ফিরহাদ হাকিমদের একদিন জেল হেফাজতে থাকতে হলেও ওই কাণ্ডে অভিযুক্ত সাংসদদের কোনও অস্বস্তিতে পড়তে হয়নি।রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, -‘ জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে গ্রেফতারের পাশাপাশি যেভাবে কাকলির নাম টেনে আনা হয়েছে, তার নেপথ্যে বিজেপির বৃহত্তর রাজনৈতিক কৌশল থাকতে পারে। লোকসভা ভোট আসন্ন। তার আগে জ্যোতিপ্রিয় গ্রেফতারের ঘটনার সূত্রে বারসত লোকসভা কেন্দ্রটিতে একটা ঢেউ তুলতে চাইছে বিজেপি। বারাসত লোকসভার মধ্যেই পড়ে হাবড়া ও মধ্যমগ্রাম বিধানসভা। হাবড়ার বিধায়ক হলেন জ্যোতিপ্রিয়। আর মধ্যমগ্রামের বিধায়ক তথা রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষের বাড়িতে নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডের সূত্রে ইতিমধ্যে তল্লাশি চালিয়ে কেন্দ্রীয় এজেন্সি। তা ছাড়া বারাসত লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে স্থানীয় বেশ কয়েকটি পুরসভার কাউন্সিলর ও চেয়ারম্যান-ভাইস চেয়ারম্যানকে পুর নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় নোটিস পাঠানো হয়েছে।