বিশেষ প্রতিবেদক: রাশিয়াতে এবার তীব্র ইহুদি বিদ্বেষ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। রাশিয়ার মুসলিম-প্রধান একটি অঞ্চলের বিমানবন্দরে ফিলিস্তিনে মুসলিম নিধন ও ধ্বংসযজ্ঞের প্রতিবাদে বহু লোক জড়ো হয়। তারা একটি বিমান তেলআবিব থেকে এসেছে শুনে খুঁজতে থাকে, এর মধ্যে কারা ইসরাইলের নাগরিক এবং ইহুদি।
এমনিতেই ইউরোপের খ্রিস্টানদের মধ্যে ইহুদি বিদ্বেষের বহু পুরাতন এক ঐতিহ্য রয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বে যুদ্ধের সময় খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী হিটলারের কথিত ইহুদি নিধনের পর হঠাৎ করে খ্রিস্টান শাসকদের মধ্যে ইহুদি-প্রেম চাগিয়ে ওঠে। এক্ষেত্রে জায়নবাদী প্রচারেরও ছিল এক বড় ভূমিকা। ছিল জায়নবাদী কবলিত মিডিয়ারও বড় অবদান। জার্মানিতে ইহুদি হত্যার জন্য খ্রিস্টানরা এক অপরাধবোধে ভুগতে থাকে। আর ইহুদিদের একটি স্বদেশ দেওয়ার জন্য তারা মরিয়া চেষ্টা চালাতে থাকে। শেষ পর্যন্ত তারা বেছে নেয়, ফিলিস্তিনের মুসলিম ভূমিকে। সেখানেই ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠা হয় ইসরাইলের।
মাঝেমধ্যেই দেখা যায়, খ্রিস্টান অধ্যুষিত জার্মানি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রভৃতি দেশে ইহুদি প্রার্থনা গৃহ সিনাগগ-এ হামলা হচ্ছে। বাইরের দেওয়ালে ইহুদি বিদ্বেষী পোস্টার লাগানো হচ্ছে। কিংবা প্রার্থনাকারীদের গুলি চালিয়ে হত্যা করা হচ্ছে। আসলে খ্রিস্টানদের মধ্যে ইহুদি বিদ্বেষের শিকড় রয়েছে শতাধীর পর শতাধী ধরে। এবার কিন্তু মুসলিমদের মধ্যেও ইহুদি বিদ্বেষ ছড়িয়ে পড়ছে। বিশেষ করে অবরুদ্ধ নগরী গাজায় যেভাবে ইসরাইলের লাগাতার পাশবিকতা চলছে তা জিওনিস্ট রাষ্ট্রটির বিরুদ্ধে বিশ্বের সচেতন মানুষকে এক সারিতে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।
উল্লেখ্য, ঘটনাটি ঘটেছে রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত দাঘেস্থানের রাজধানী মাখাচাকলা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। এক খবর ছড়িয়ে পড়ে যে, ইহুদিরা এখন যুদ্ধ কবলিত ইসরাইল থেকে পালাতে চায়। আর তেলআবিব থেকে যে বিমানটি এসেছে তাতে রয়েছে এই পলায়মান ইসরাইলি শরণার্থীরা। দাঘেস্থানের ক্রুদ্ধে নাগরিকরা আল্লাহু আকবর ধ্বনি দিয়ে বিমানে উঠে পড়ে এবং যাত্রীদের পাসপোর্ট চেক করতে থাকে। দাঘেস্থানের এই বিমানবন্দরটি সাময়িকভাবে উড়ান চলাচলের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়। এই সময় পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের যে সংঘর্ষ হয় তাতে কিছু লোক আহত হয়েছে বলে দাঘেস্থানের স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে।
একজন প্রতিবাদকারীর প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, শিশুহত্যাকারীদের দাঘেস্থানে কোনও ঠাঁই নেই। নালচিকে রাশিয়ার কবরদিনো-বলকারিয়া রিপাবলিকে নির্মিয়মাণ একটি ইহুদি কালচারাল সেন্টারে হামলা হয়। নালচিকের অধিবাসীদের ৭০ শতাংশই হচ্ছে মুসলিম। এই অসমাপ্ত কালচারাল সেন্টারে রুশ নাগরিকরা অগ্নিসংযোগ করে। বিক্ষোভকারীদের প্ল্যাকার্ডে লেখাছিল, ‘মৃত্যু হোক ইহুদিদের’ (ডেথ টু ইহুদিস)। এখানে বিক্ষোভকারী বেশকিছু গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে।
জানা গেছে, রাশিয়ার আর একটি মুসলিম প্রদেশ চেচেনিয়াতেও ইসরাইলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাড়ছে। এদিকে রাশিয়ার কর্তৃপক্ষ বলছেন, ইউক্রেনের টেলিগ্রাম চ্যানেল থেকে এখানকার স্থানীয়দের উসকানি দেওয়া হয়েছিল। যেভাবে মুসলিম রাষ্ট্রগুলির জনগণের মধ্যে ফিলিস্তিনিদের হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে এবং পাশ্চাত্যের বিভিন্ন শহরে মুসলিমদের আবাদি রয়েছে, সেখানে কর্তৃপক্ষ অশান্তির আশঙ্কা করছেন এবং পুলিশকে সতর্ক থাকতে বলেছেন।
In 🇷🇺 Makhachkala, locals storm the airport after a plane from Tel-Aviv arrives. They check passports, looking for Israelis. The police don’t interfere. #Israel #IsraelPalestine pic.twitter.com/2mnTBiq1kK
— olexander scherba🇺🇦 (@olex_scherba) October 29, 2023