রফিকুল হাসান, বারাসাত: কেউ জড়িয়ে ধরছেন তো কেউ বুকে টেনে নিচ্ছেন। কেউ চোখের জল মুছছেন তো আবার কারুর চোখের জল গড়িয়ে পড়ছে। সরকারী কর্মচারী, জনপ্রতিনিধি থেকে সাধারণ মানুষ তাদের একটাই বক্তব্য বিডিও সাহেব এখানেই থাকুন। সোমবার সান্ধ্যকালীন বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এমনই ঘটনার সাক্ষী থাকল উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার বারাসাত দুই ব্লক।
উল্লেখ্য, সরকারী নিয়ম অনুযায়ী রাজ্যের অন্যান্য বিডিও সাহেবদের মতো বদলি হয়েছেন বারাসাত দুই ব্লকের বিডিও অর্ঘ্য মুখোপাধ্যায়। তিনি বদলি হয়ে পশ্চিম বর্ধমানের দুর্গাপুর ফরিদপুর ব্লকের বিডিও হিসাবে দায়িত্ব নিচ্ছেন। আর এদিকে বারাসাত দুই ব্লকের বিডিও হিসাবে দায়িত্ব নিচ্ছেন বোলপুর শান্তিনিকেতনের বিডিও শেখর সেন।
উল্লেখ্য বিডিওর বদলি নিয়ে সরকারী কর্মচারীদের মধ্যে ব্লক অফিসে বেশ কয়েকদিন কানাঘুষো চলছিল। অনেকেই মেনে নিতে পারছিলেন না তাদের প্রিয় বিডিও স্যারের বদলি। তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটল সোমবারের সান্ধ্যকালীন বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে। অনেক কর্মচারী স্মৃতিচারনা করতে গিয়ে তো চোখের জল আর ধরে রাখতে পারলেন না। শুধু সরকারী কর্মচারীরা নয় জনপ্রতিনিধিরাও বুকে জড়িয়ে ধরলেন তাদের প্রিয় বিডিও সাহেবকে। তাদের চোখের জলই বলে দিচ্ছিল বিডিও সাহেবের বদলি তারা কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না। শুধু সরকারী কর্মচারী বা জনপ্রতিনিধিরা নয় বুকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললেন সাধারন মানুষজনও।
কৃষ্ণমাটি গ্রামের হাজী ইয়াকুব আলী, স্মৃতিকনা অধিকারীদের একটাই বক্তব্য একজন ভালো মনের আধিকারিককে আমরা হারিয়ে ফেলছি। সরকারী নিয়মের গেরোয় তিনি বদলি হচ্ছেন ঠিকই, কিন্তু সাধারন মানুষজন আমরা কোনোদিন ভুলব না। তার অফিসে আমরা সাধারন মানুষজন ঢুকতে পারতাম। আমাদের সমস্যার কথা বললে তড়িঘড়ি অন্যান্য কর্মচারীদের ডেকে তৎক্ষণাৎ সমস্যার সমাধান করে দিতেন। বারাসাত দুই ব্লকের এক মহিলা কর্মচারী তো অকপটে স্বীকার করলেন বিডিও সাহেব মহিলাদেরকে খুব সম্মান করতেন। ওনার অফিসে কোনো বয়স্ক মহিলা আসলে মা সম্মোধন করে কথা বলতেন, তাদের সমস্যার সমাধান করে দিতেন।
বারাসাত দুই পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সভাপতি ইফতিকারউদ্দিন সাহেব বলেন, অনেক দুস্থ পড়ুয়া ওনার কাছে আসলে নিজের পকেটের টাকা থেকে বই কেনা বা পড়াশুনার জন্য তিনি খরচ জোগাতেন।
বিডিও সাহেবের বদলিতে সকলের চোখেই জল, এ ব্যাপারে বারাসাত দুই ব্লকের প্রাক্তন বিডিও অর্ঘ্য মুখোপাধ্যায় বলেন, চার বছর এই ব্লকে সকলকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করেছি। তাই কাজের বাইরে সকলের সঙ্গে একটা পরিবারের মতো সম্পর্ক তৈরি হয়ে গেছে। তাই এটা আবেগের একটা বহিঃপ্রকাশ। তিনি আরো বলেন, সরকারী নিয়ম আমরা মানতে বাধ্য। সরকারী নিয়ম অনুযায়ী আমাকে অন্যত্র যেতে হচ্ছে। সরকারী নিয়মের গেরোয় আটকে তাদের প্রিয় বিডিও সাহেবের বদলি হলেও হাজী ইয়াকুব আলী, স্মৃতিকনা অধিকারীরা কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না। তাদের একটাই আবেদন সরকার বাহাদুর তাদের প্রিয় স্যারকে আবার বারাসাত দুই ব্লকের বিডিও করেই এখানে পাঠান। সম্ভব হলে পুনর্বিবেচনা করে কী দেখলে হয় না? এটাই তাদের জিজ্ঞাসা।