সেখ কুতুবউদ্দিন: আবহাওয়ার আরও আপডেট পেতে এবার ডায়মন্ডহারবার মহিলা বিশ্ববিদ্যালয়ে বসছে বিশেষ যন্ত্র। এই যন্ত্র বসানো নিয়ে কেন্দ্র সরকারের মেট্রোলজিক্যাল ডিপার্টমেন্ট বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একটি মৌ সাক্ষরিত করে। এই যন্ত্র দুই ভাবে আবহাওয়ার খবর দিতে পারবে। একটি ম্যানুয়াল পদ্ধতি। আর একটি অটোমেটিক পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে বিস্তারিত জানা যাবে।
এই যন্ত্র থেকে তথ্য নিয়ে আবহাওয়ার পূর্বাভাস সহজে জানানো সম্ভব হবে। পুজোর ছুটির পরই এই কাজ শুরু হবে। এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যে মৌ স্বাক্ষরিত হয়েছে। এতে সুন্দরবন এলাকার মানুষদের সুবিধা হবে। তাছাড়া আবহাওয়ার খবর কলকাতা থেকে প্রচার করা হয়। এই যন্ত্র বসানো হলে এখান থেকেই সাধারণ মানুষকে জানানো সম্ভব হবে বলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
এই যন্ত্রের সাহায্যে জানা যাবে, বায়ুর চাপ, তাপমাত্রা বাতাসের গতি। বিভিন্ন আধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করে এই তথ্য সকলের সামনে তুলে ধরা হবে। পাশাপাশি এই সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরাও অবগত হতে পারবে।
এই যন্ত্রের সাহায্যে বসবে বায়ুর চাপ মাপার যন্ত্র ব্যারোমিটার। আনা হয়েছে রেন গেজ (বৃষ্টিপাতের পরিমাণ), হাইগ্রোমিটার (বায়ুর আর্দ্রতা), টিডিএস বা টোটাল ডিসলভড সলিড (জলে মিশ্রিত কঠিন পদার্থের পরিমাণ), পিএইচ মিটার (তরলের অম্ল/ক্ষার পরিমাপক)-সহ নানা যন্ত্র।
এদিকে, এর আগে সমুদ্র তীরবর্তী এলাকাগুলিতে বসানো হয়েছে বিশেষ যন্ত্র। বঙ্গপোসাগরের তীরে এই বিশেষ যন্ত্র বসানোর ফলে আগাম খবর জানা যাচ্ছে। আর এতে সব পক্ষের সুবিধা হচ্ছে।
সামুদ্রিক ঝড়-ঝঞ্ঝা-জলোচ্ছ্বাসের সম্ভাবনা, জলের তাপমাত্রা-সহ সামুদ্রিক আবহাওয়ার যাবতীয় পূর্বাভাস এ বার উপকূল এলাকা থেকেই পেয়ে যাবেন মৎস্যজীবীরা।
এ জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের ভূ-বিজ্ঞান বিষয়ক মন্ত্রকের অধীন হায়দরাবাদের ‘ইনকোয়েস’ সংস্থা ও ‘দিঘা শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদ’ ডিএসডিএ)-এর যৌথ উদ্যোগে বৃহস্পতিবার দিঘা থেকে ২২ নটিক্যাল মাইল দূরে গভীর সমুদ্রে একটি সামুদ্রিক ‘বয়া’র উপর ‘ওয়েব রিডার যন্ত্র’ বসানো হয়। এই যন্ত্রই সামুদ্রিক আবহাওয়ার বিভিন্ন মুহূর্তের পূর্বাভাস দেবে। উপকূলে বসেই এই পূর্বাভাস পেয়ে যাবেন মৎস্যজীবীরা।
বহু জায়গায় বসানো হয়েছে ‘ওয়েব রিডার যন্ত্র’। এই যন্ত্রটি চব্বিশ ঘণ্টাই তিনশো মিটার ব্যাসার্ধ বিশিষ্ট এলাকার আবহাওয়ার যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করবে। উপগ্রহের মাধ্যমে যন্ত্রটি যাবতীয় তথ্য দিঘার নির্দিষ্ট কেন্দ্রে পাঠাবে। সংশ্লিষ্ট কেন্দ্র থেকে আবহাওয়ার তথ্য মৎস্যজীবীদের জানিয়ে দেওয়া হবে। যন্ত্রটি উপগ্রহের মাধ্যমে উপকূল বরাবর ২৫০ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে এই তথ্য ছড়িয়ে দেবে।
জানা গিয়েছে, সমুদ্রে যে কোনও ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য দেশের সমস্ত উপকূলীয় রাজ্যে এই ধরনের যন্ত্র বসানোর নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। ইতিমধ্যেই গুজরাত, অন্ধ্রপ্রদেশ, ওড়িশা-সহ দেশের ১২টি রাজ্যের উপকূলীয় এলাকায় এই যন্ত্র বসানো হয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুরের শঙ্করপুর থেকে ২২ নটিক্যাল মাইল দূরে গভীর সমুদ্রে একটি সামুদ্রিক বয়া-র উপর ‘ওয়েব রিডার যন্ত্র’ বসানো হয়েছে।
এই সমস্ত যন্ত্রের মাধ্যমে উপকূলের আবহাওয়া, সমুদ্রের জলতরঙ্গ-সহ সামুদ্রিক ঝড় ঝঞ্ঝার আগাম পূর্বাভাস উপকূল থেকেই পাওয়া যাবে। এর ফলে মৎস্যজীবী-সহ উপকূলের মানুষেরাও উপকৃত হবেন।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, সমুদ্রে ভাসমান অবস্থায় যন্ত্রটি যাতে সামুদ্রিক কোনও জলযানের ধাক্কায় নষ্ট না হয়, সে জন্য সেটি একটি বয়া-র উপরে বসানো হয়েছে।
আবহাওয়া বিজ্ঞানী উষ্ণাংশু তাইওয়ান থেকে পুবের কলমকে বাংলার উষ্ণাংশু বলেন, কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার যৌথ উগ্যোগে ‘এক্স ব্যান্ড ডোপলার ওয়েদার রাডার বসাচ্ছে। এতে সুবিধা হবে। কারণ, এই মুহূর্তে আবহাওয়ার কী পরিবর্তন হচ্ছে বা ঘটছে তা ২০ মিনিটের মধ্যেই জানা সম্ভব হবে। তাছাড়া আলিপুরে যে আবহাওয়া দফতর রয়েছে তা সুন্দরবন থেকে অনেকটা দূরে। তাই ডায়মন্ডহারবারের এই যন্ত্র বসানো হলে সুন্দরবন বাসীর জন্য বিশেষ সুবিধা হবে।