পুবের কলম,ওয়েব ডেস্ক: ইসরাইলের বোমা হামলায় নিহত শিশুসন্তানকে বুকে আঁকড়ে রেখেছিলেন আবদুল্লাহ তাবাস। রক্তাক্ত মরদেহটি দাফনের জন্য তাঁর কাছ থেকে নিতে পারছিলেন না কেউ। আহাজারি করতে করতে অসহায় বাবা বলছিলেন, ‘এ আমার মেয়ে, আমি ওকে যতবার খুশি দেখতে চাই।’ ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি বাহিনীর অব্যাহত নিমর্মতা–নৃশংসতার মাত্র একটি চিত্র এটি। মঙ্গলবার সারা দিনে এবং আগের দিন রাতভর হামলায় উপত্যকাটির শত শত মানুষ তাঁদের প্রিয়জনকে হারিয়েছেন। গতকাল বিকেলে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, আগের ২৪ ঘণ্টায় বোমার আঘাতে ৭০৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৩০৫টিই শিশু। ৭ অক্টোবর ইসরাইল–ফিলিস্তিন সংঘাত শুরুর পর থেকে এক দিনে এত মৃত্যু দেখেননি গাজার বাসিন্দারা। এর মধ্য দিয়ে উপত্যকাটিতে নিহত ব্যক্তির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৭৯১। আহত ১৬ হাজার ২৯৭ জন।
গাজায় হামলা চালানোর ক্ষেত্রে কোনো বাছবিচার করছে না হানাদার ইসরাইলিরা। অবিরাম বোমাবর্ষণে নিমেষে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হচ্ছে আবাসিক ভবন, শরণার্থীশিবির, মসজিদ, গির্জা, হাসপাতালসহ নানা অবকাঠামো। ইসরাইলের প্রতিটি বোমার আঘাতের সঙ্গে সঙ্গে গাজার হাসপাতালগুলোয় বাড়ছে আহত, চিরতরে পঙ্গু হওয়া মানুষের ভিড়। চিকিৎসকেরা বলছেন, বোমায় আহত ব্যক্তিদের ক্ষত দেখে মনে হচ্ছে, যেন তাঁদের ত্বক গলে যাচ্ছে। এ ক্ষত চিকিৎসায় কোনো ওষুধ হাসপাতালে নেই। ইসরাইলের নির্বিচার ও টানা হামলায় গাজার স্বাস্থ্যব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে৷ গত ১৮ দিনে ইসরাইলের হামলায় গাজায় ৬৫ চিকিৎসাকর্মীর মৃত্যু হয়েছে। ধ্বংস হয়েছে ২৫টি অ্যাম্বুলেন্স। এ ছাড়া ১২টি হাসপাতাল ও ৩২টি স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেছে।
এদিকে গতকাল অধিকৃত পূর্ব জেরুসালেমে পবিত্র আল–আকসা মসজিদ বন্ধ করে দিয়েছে ইসরাইল পুলিশ। মসজিদ চত্বরেও মুসলমানদের প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না বলে জানিয়েছে মসজিদটির দেখভালের দায়িত্বে থাকা কর্তৃপক্ষ। সকাল থেকে আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে শুধু ইহুদিরা প্রবেশ করছেন। সেখানে ইহুদিদের প্রার্থনা করার সুযোগ দিয়েছে ইসরাইলি পুলিশ। আল-আকসা মসজিদ মুসলমানদের কাছে পবিত্র একটি স্থান। সেখানে শুধু তাঁরাই নামায আদায় করেন। কিন্তু নিয়ম ভঙ্গ করে সেখানে ইহুদিরা প্রার্থনা করেছেন।
এ ছাড়া গতকাল পশ্চিম তীর থেকে অন্তত ৩২ ফিলিস্তিনিকে আটক করেছে ইসরাইল। এ নিয়ে গত ১৮ দিনে সেখানে ১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনিকে আটক করা হলো। একই সময়ে ইসরাইলের হামলায় এখানে নিহত হয়েছেন ৯৬ জন।