পূর্ববর্তী অংশের পর—
বিশেষ প্রতিবেদকঃ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ ও শিক্ষকদের পদোন্নতি নিয়ে যে অভিযোগ উঠেছে– দুই একটি ক্ষেত্রে তার সামান্য সারবত্তা থাকলেও মোটের উপর তা সম্পূর্ণ অসার। নানা কারণে বিশ্ববিদ্যালয় দীর্ঘদিন প্রমোশন প্রক্রিয়া চালু করা সম্ভব হয়নি। এই অবস্থায় যাদের প্রমোশনের সময়সীমা পেরিয়ে যাচ্ছিল– তারা অনেকক্ষেত্রে বাধ্য হয়ে ওপেন পোস্টে আবেদন করে অধ্যাপক বা সহযোগী অধ্যাপকের পদে অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন। পরে প্রমোশন প্রক্রিয়া চালু করা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাব সাপেক্ষে তারা বর্তমান পদ থেকে পদত্যাগ করে নতুন পদে পুনর্বহাল হন এবং সেখান থেকে প্রমোশন প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে তাঁদের পদোন্নতি হয়। এই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ ন্যায় সম্মত। এর মধ্যে এতটুকুও অনিয়ম নেই। এ রাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন ঘটনার অনেক দৃষ্টান্ত রয়েছে। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনিক ক্ষেত্রে বিশেষ করে অনুসরণ করে করা হয় যে বিশ্ববিদ্যালয়কে সেই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়েও এর একাধিক দৃষ্টান্ত বর্তমান।
শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে কোথাও কোথাও সামান্য বিচু্যতি থাকতে পারে। তবে কথা হল এমন ত্রুটি-বিচ্যুতি কোথায় না থাকে। অনুসন্ধান করলে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়েও হয়তো এমন অজস্র দৃষ্টান্ত পাওয়া যাবে। এক্ষেত্রে বড় পার্থক্যের দিক হল– ওইসব বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃত্তান্ত সেভাবে প্রকাশ্যে আসে না– যেটুকু আসে তা থেকে সাধারণের মধ্যে কোনও আলোড়ন তৈরি হয় না। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে তার ব্যতিক্রম ঘটছে এবং এই ব্যতিক্রমেরও সংগত কারণ রয়েছে। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় এই রাজ্যের মুসলমান সমাজের বিরাট আশা-আঙ্কাক্ষার ক্ষেত্র। এর দিকে সকলেরই সচেতন দৃষ্টি রয়েছে। এমন অবস্থায় সকলেই অতিরিক্ত উদ্যোগী হয়ে ঘটনার পাঠ নিয়েছেন এবং নিজের মতো করে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। এভাবে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা এমনিতে দোষের নয়– কিন্তু কার্যক্ষেত্রে সেই সূত্রে বিশেষ সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক সম্মান বজায় রাখা– না রাখার উপর নির্ভর করে অনেক কিছু। বিশেষত আমাদের সামাজিক ও মানসিক স্বাস্থ্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি– বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের প্রতি যদি ন্যূনতম সম্মান বজায় না রাখা হয়– তবে যে সামাজিক সংকট তৈরি হয় তার সুদূরপ্রসারী ফল অতি মারাত্মক হতে বাধ্য। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে যা হতে পারে বলে মনে হচ্ছে।
একটা শ্রেণি উপাচার্য বা শিক্ষক মহাশয়দের অপরাধী সাব্যস্ত করে অদ্ভুত এক মানসিক আনন্দ অনুভব করছেন। এটা চূড়ান্ত সামাজিক অস্বাস্থ্যের লক্ষণ। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে উপলক্ষ করে ব্যবহার করা হচ্ছে এমন শধবন্ধ যেমন ‘ফাজলামু’ হচ্ছে। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। যদি ধরেও নেওয়া হয়– উপাচার্য সত্যিই তাঁর দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছেন– তবে তারপরেও ভেবে দেখতে হবে– এভাবে তাঁকে অপদস্থ করা কতটা সংগত? মনে রাখতে হবে– উপাচার্য হিসাবে তিনি হয়তো সেভাবে সফল নন– কিন্তু একজন অধ্যাপক হিসাবে তার সাফল্য প্রশ্নাতীত। পৃথিবীর বিভিন্ন নামি প্রতিষ্ঠানে গবেষণা করার ও অসামান্য সব গবেষণাপত্র প্রকাশ করার দুর্লভ সম্মান সঞ্চিত রয়েছে তাঁর ঝুলিতে। খতিয়ে দেখতে হবে তাঁর প্রতি যিনি ওভাবে অশিষ্ট শব্দবন্ধ ব্যবহার করছেন– তার ব্যক্তিগত যোগ্যতা ঠিক কতটা? তাছাড়া একজন ব্যক্তি নিজে থেকে এসে উপাচার্যের আসনে অধিষ্ঠিত হন না। অত্যন্ত সম্মানের সঙ্গে তাঁকে ওই চেয়ারে বসানো হয়। এক্ষেত্রে দায়িত্ব দেওয়ার আগে হাজারবার ভেবে দেখার সুযোগ আছে। কিন্তু একবার কাউকে ওই চেয়ারে বসানো হলে সহজে তার বিরুদ্ধে কথা বলা সাজে না– এক্তিয়ার বহির্ভূতভাবে কথা বলার তো প্রশ্নই ওঠে না। কিন্তু এক্ষেত্রে তাই করা হচ্ছে। বর্তমান উপাচার্যের কার্যকাল এই চার বছরে পড়েছে। এর মধ্যে তাঁকে নিয়ে কথা বলা শুরু হয়েছে বিগত কয়েক মাস যাবৎ। প্রথম তিন বছরে কোনও পক্ষ কোনও কথাই বলা হয়নি। সহসা তিনি কারও কারও এত অপছন্দের হয়ে উঠলেন কীভাবে? যখন তাঁর কার্যকাল আর মাত্র কয়েক মাস অবশিষ্ট আছে– তখন তাঁকে পদত্যাগ করার জন্য চাপাচাপি করা হচ্ছে প্রবলভাবে। গোটা ব্যাপারটা কেমন যেন ঘোর সন্দেহজনক।
যে কথা উপাচার্য সম্পর্কে প্রযোজ্য– সেই একই কথা প্রযোজ্য শিক্ষকদের সম্পর্কেও। অদ্যাবধি শিক্ষাক্ষেত্রে যাঁরা আমাদের নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্যতা রাখেন– বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তাঁরাই। যদি ধরেও নেওয়া হয়– তাঁরা অন্যায় পথে প্রমোশন নিয়েছেন তবে তারপরেও তাঁদের বিরুদ্ধে সরব হওয়ার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। নিতে হবে সঠিক পদক্ষেপ। অন্যায় করা হলে তার প্রতিবাদ অবশ্যই করতেই হবে– তবে লক্ষ্য রাখতে হবে ওই প্রতিবাদ যেন অন্য কোনও অন্যায়ের কারণ না হয়– তৈরি না হয় জটিল সামাজিক সংকট– এক্ষেত্রে যা হয়েছে বা হচ্ছে। সামাজের সাধারণ মানুষ– যাঁরা অন্যায় হয়েছে বলে মনে করছেন– তাঁদের অধিকাংশজনই অবগত নন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রমোশন প্রক্রিয়ার বিষয়ে। তাঁরা যা বলছেন বা করছেন তার সবই শোনা কথার ভিত্তিতে। এমনটা করার মধ্যে বিশেষ ভ্রান্তি থাকা সম্ভব এবং এখানেও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না।
বিষয়টা এই জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে– আমরা প্রত্যেকেই প্রায় আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বিশেষ দায়িত্বশীল সামাজিকে পরিণত হয়েছি। এটা অবশ্যই ভালো লক্ষণ। তবে কথা হল– এই ভালোত্বের পথ ধরে আমাদের প্রত্যেককে হেঁটে যেতে হবে– শেষপর্যন্ত মাঝপথে থেমে গেলে চলবে না। পূর্ণমাত্রায় দায়িত্বশীল থাকতে হবে নিজের প্রতি– নিজেদের প্রতি। অন্যথায় প্রবল এক সামাজিক বিপর্যয় দেখা দিতে পারে এবং তার যথেষ্ট সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে কথা বলতে হলে অবগত হতে হবে ইউসিজি– ইসি– কোর্ট কাউন্সিল ইত্যাদি নানা বিষয়ে। এ বিষয়ে ন্যূনতম জ্ঞান ব্যতিরেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম-কানুন নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করা হলে নিশ্চিতভাবে ভুল করা হবে।
সমস্যা হল– আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় বিষয়ে যাঁরা কথা বলছেন তাঁদের মধ্যে সাধারণে তো বটেই– যাঁরা তদন্ত কমিটির সদস্য হিসাবে কাজ করছেন তাঁরাও এসব বিষয়ে কোনও স্বচ্ছ ধারণা রাখেন না। তাই তাঁরা প্রশ্ন রাখেন– অধ্যাপকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিযুক্ত হওয়ার সময় প্রিলি ও মেনস পরীক্ষায় কত নম্বর পেয়েছিলেন? আমরা বিশ্বাস করি– আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের সামাজিক ও সাংস্টৃñতিক শ্রীবৃদ্ধির অদ্বিতীয় প্রতিষ্ঠান। এমন প্রতিষ্ঠানকে কিছুতেই নষ্ট হতে দেওয়া যায় না। একে যেভাবেই হোক সংরক্ষণ করতে হবে। প্রতিবাদে ফেটে পড়তে হবে বিশ্ববিদ্যালয়কে ঘিরে সংগঠিত যেকোনও অন্যায়ের প্রতি। সে অন্যায় উপাচার্য– শিক্ষক– আধিকারিক যেই করে থাকুন। তবে মনে রাখতে হবে– সে প্রতিবাদকে ঘিরে যেন নতুন করে কোনও অন্যায়ের বীজ উপ্ত না হয়।
পরিশেষে আরও একটি কথা– আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও এর সিবিএস বিভাগকে ঘিরে গভীর জিজ্ঞাসা দানা বেঁধেছে। ঘটনাক্রম থেকে অবগত হওয়া গেছে যে– ২০১২-১৩ অর্থবর্ষে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়কে একশো কোটি টাকা দেওয়া হয়েছিল সংখ্যালঘু সমাজের পিছিয়েপড়া বা শিক্ষা-ছুট ছেলে-মেয়েদের ভোকেশনাল ট্রেনিং বা কারিগরি প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মজীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সুযোগ করে দেওয়ার লক্ষ্যে। বিশ্ববিদ্যালয় টাকা পাওয়ার পর নিয়ম অনুসারে জর্জ টেলিগ্রাফ-সহ আরও কিছু সংস্থার সঙ্গে নিয়ম মেনে যুক্তি করে (মউ) এই ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করেছিল। অতঃপর ঘটনার স্রোত প্রবাহিত হয় সম্পূর্ণ অনৈতিক পথে। মউ-এ বলা ছিল– উক্ত সব সংস্থা পশ্চিমবঙ্গের নানা স্থানে ট্রেনিং সেন্টার স্থাপন করবে ও যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। এ দিকে বাস্তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে তার কিছুই করা হয়নি। অনেকক্ষেত্রে গোটা বিষয়টাই সম্পন্ন করা হয়েছে সম্পূর্ণ কাগজে কলমে। কোনও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়নি। অনেকক্ষেত্রে এমন হয়েছে– একটা বাড়ি বা ঘর ভাড়া নিয়ে তার বাইরে একটা হোর্ডিং লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে মাত্র– এর অতিরিক্ত কিছুই নেই সেখানে। আবার ক্ষেত্র বিশেষে এমনও হয়েছে– হোর্ডিংয়ে লেখা আছে কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টার। কিন্তু বাস্তবে সেখানে একটি কম্পিউটারও নেই। এভাবেই চলছিল গোটা ব্যাপারটা এবং তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল অর্থস্রোত। কোটি কোটি টাকা সঞ্চিত হচ্ছিল ওই সব সংস্থার তহবিলে। পরে একটা সময়ে বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নজরে আসে এবং তারপর অবশিষ্ট অর্থ প্রদান স্থগিত করা হয়। এই অবস্থায় উক্ত সংস্থাসমূহ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর চাপ সৃষ্টি করতে থাকে বকেয়া অর্থ পরিশোধ করার জন্য। উল্লেখ্য– চুক্তির একস্থানে বলা ছিল– সংশ্লিষ্ট সংস্থাসমূহ যাদের ট্রেনিং দিচ্ছে তাদের মধ্যে শতকরা ৭৫ জনের কর্মসংস্থান হয়েছে– এই মর্মে উপযুক্ত পদাধিকারিক কর্তৃক প্রত্যয়িত শংসাপত্র দাখিল করা হলে তবেই শেষ কিস্তির টাকা (কম বেশি ২৫ কোটি) পরিশোধ করা হবে। চুক্তির এই ধারার সাপেক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দৃঢ়তর অবস্থান নেন। কোনও চাপের কাছেই তাঁরা নতি স্বীকার করবেন না। অতঃপর ঘটনাস্রোত বাঁক নেয় অপ্রত্যাশিতভাবে।
উক্ত সংস্থাসমূহের মধ্যে অধিকাংশই শেষাবধি রণেভঙ্গ দিলেও জর্জ টেলিগ্রাফের মতো দুই-একটি সংস্থা নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করে যেতেই থাকে। একটা সময়ে তারা এমএএমই কর্তৃপক্ষের দ্বারস্থ হয় এবং এমএএমই কর্তৃপক্ষ তাদের হয়ে ‘অতিসক্রিয়তা’ দেখাতে শুরু করেন। লোকমুখে প্রকাশ– তাদের একজন নাকি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে এও বলেন– দুই ঘণ্টার মধ্যে এই ফাইল ক্লিয়ার করা না হলে তাঁকে নবান্নস্থিত এমএএমই দফতরে আটক করে রাখা হবে। তবে তারপরেও বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বশীলরা তাঁদের অবস্থানে অনড় থাকেন।
মনে করা অসংগত নয় যে– আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়কে ঘিরে এই যে অচলবস্থা তৈরি হয়েছে তার মূলে রয়েছে জর্জ টেলিগ্রাফ বৃত্তান্ত। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যদি প্রস্তাব মতো ফাইলটি অনতিবিলম্বে ক্লিয়ার করে দিতেন– তবে খুব সম্ভব কোনও সমস্যাই হত না। সব কিছু মসৃণভাবে চলত– যেমন চলছিল। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অন্যায় চাপের কাছে মাথানত করেনি– এটাই তাদের অপরাধ। এই অপরাধের সাপেক্ষে সরাসরি কিছু করতে না পেরে ঘুরপথে নানাভাবে কর্তৃপক্ষকে– সেইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়কে অপদস্থ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ভেবে দেখতে হবে– এক্ষেত্রে অন্যায়ের গভীরতা কত বেশি। নিতান্ত পিছিয়েপড়া– হতভাগ্য একটা সমাজ তাদের উন্নয়নের লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় সরকার থেকে বরাদ্দ করা বিরাট অঙ্কের টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে ও আরও করার চেষ্টা চলছে। আর সেটাকে প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে আধিকারিক ও অন্যান্যদের পক্ষ থেকে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য– কয়েক দিন আগে আলিয়ার ছাত্ররা সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছে– তারা তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যা নিয়ে এমএএমই কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দেখা করলে ওখানকার এক আধিকারিক বলেন– আপনাদের বিশ্ববিদ্যালয়কে বলুন– জর্জ টেলিগ্রাফের ফাইলটা ছেড়ে দিতে। তাহলে আমরাও বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ফাইল ছেড়ে দেব। এই কথা যদি সত্যি হয়– তবে এর গভীরে যে অন্তর্নিহিত বিষয় রয়েছে তা জ্বালিয়ে পুড়িয়ে নিঃশেষ করে দিতে পারে আর সব কিছুকে। যাবতীয় সম্ভাবনার দীপ এক মুহূর্তে ধ্বস্ত হতে পারে এর করাল গ্রাসে পড়ে। ভেবে দেখতে হবে– একশো কোটি টাকা যদি যথাযথভাবে ব্যবহৃত হত– তবে কী না হতে পারত। সংখ্যালঘু সমাজের হাজার হাজার ছেলেমেয়ে বিভিন্ন কারিগরি প্রশিক্ষণ নিয়ে কর্মক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সুযোগ পেত। সবচেয়ে বড় কথা– যদি ওই একশো কোটি টাকার ইউসি (ব্যবহার করার সার্টিফিকেট) দিয়ে পুনরায় আবেদন করা হত– তবে এতদিনে আরও কয়েকশো কোটি টাকা হয়তো ওই বাবদ পাওয়া যেত। আর তাহলে আক্ষরিক অর্থেই সংখ্যালঘু সমাজে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে একটা বিপ্লব ঘটে যেত। এমন বিরাট এক সম্ভাবনার মূলে কুঠারাঘাত করেছে যেসব অসাধু সংস্থা– জাতীয় উন্নতির লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের অসামান্য পরিকল্পনাকে বানচাল করে দেওয়ার চক্রান্তে লিপ্ত যেসব ব্যক্তি তাদের অসৎ উদ্দেশ্যের সঙ্গে হাত মেলান– তাদের শাস্তি কী হওয়া উচিত তা আজ নির্ণয় করার সময় এসেছে।
যে প্রশ্ন এখন সবচেয়ে বেশি করে তাড়িত করছে তা হল– এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়কে– সেইসঙ্গে এই রাজ্যের সংখ্যালঘু সমাজকে সংরক্ষিত রাখা যাবে কীভাবে। কোনও সন্দেহ নেই– বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের শত সচেষ্টতা সত্ত্বেও এর থেকে আত্মরক্ষা সহজ হবে না। এর জন্য প্রয়োজন সর্বাত্মক প্রতিরোধ গড়ে তোলা। পিছিয়েপড়া শ্রেণির তথা গরিব মানুষের হক যারা মেরে খায়– তাদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত অবস্থান নেওয়াই এক্ষেত্রে একমাত্র পথ। হয় রাজ্য সরকারকে এই কেলেঙ্কারির তদন্তের যথাযথ ব্যবস্থা করতে হবে নতুবা যেকোনও মূল্যে উচ্চ আদালতে হাজির করতে হবে সংশ্লিষ্ট সবপক্ষকে। অতঃপর করতে হবে বিচার। এই বিচার যথাযথভাবে সম্পন্ন হলে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আকাশ থেকে দুর্যোগের মেঘ অপসৃত হবে অচিরে।
শেষ