পুবের কলম,প্রতিবেদক: ইসরাইলি বাহিনী আক্রমণ চালাচ্ছে গাজা ভূখণ্ডে। তাতে মারা যাচ্ছেন অংখ্য অসামরিক মানুষ। ইসরাইলি হানাদার আক্রমণে বাদ যাচ্ছেন নারী, শিশু ও বয়স্করাও। অন্যদিকে চিরকাল ফিলিস্তিনের আত্মনিয়ন্ত্রণ ও স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের পক্ষে ছিল ভারত সরকার। সম্প্রতি মোদি সরকার ইসরাইলের হয়ে সওয়াল করেছেন। সামগ্রিক এই পরিস্থিতি নিয়ে কী ভাবছে কংগ্রেস ও বামপন্থী দলগুলি? শুনলেন আসিফ রেজা আনসারী
মুহাম্মদ সেলিম, রাজ্য সম্পাদক, সিপিআইএম: আমাদের বক্তব্য খুব স্পষ্ট। আমাদের দলের তরফে বিবৃতিও রয়েছে। সিপিআইএম পলিটব্যুরো ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় হামাস ও ইসরায়েলি বাহিনীর মধ্যে হামলা ও পালটা হামলার তীব্র নিন্দা করছে। অবিলম্বে এই সংঘর্ষের অবসান ঘটাতে হবে। ইসরাইলের নেতানিয়াহু সরকার নির্বিচারে ফিলিস্তিনের জমি দখল করছে এবং ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক এলাকায় ইহুদি বসতি স্থাপন করছে। রাষ্ট্রসংঘকে অতি অবশ্যই ফিলিস্তিনি জনগণের স্বভূমির বৈধ অধিকারকে সুনিশ্চিত করতে হবে, সমস্ত ইসরায়েলি অবৈধ বসতি এবং ফিলিস্তিনি ভূমি দখল প্রত্যাহার করতে হবে। দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের জন্য রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের আহ্বান, রাষ্ট্রসংঘ ও ভারত সরকার-সহ আন্তর্জাতিক মহলকে এই সংঘাতের অবিলম্বে অবসান নিশ্চিত করতে হবে।
নরেন চট্টোপাধ্যায়, রাজ্য সম্পাদক, ফরওয়ার্ড ব্লক: ফিলিস্তিনের মুক্তির সংগ্রামের পক্ষে বামপন্থী দল হিসেবে আমরা ফরওয়ার্ড ব্লক বরাবরই ছিলাম। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের স্বাধীনতার পক্ষে আমরা ছিলাম। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু যে ফ্রি-ইন্ডিয়া সরকার গঠন করেছিলেন সেই সরকারও বিভিন্ন দেশের মুক্তি সংগ্রামকে সমর্থন করেছিল। নানা দেশের মুক্তি সংগ্রামে আজাদ হিন্দ বাহিনী ও সুভাষচন্দ্রের ভূমিকা ছিল। সেই কারণে আমরা ফিলিস্তিনের পক্ষে। ফিলিস্তিনের উপর ইসরাইলের এই আক্রমণের আমরা বিরোধী। আর আজকে ইসরাইল যা কিছু করছে আমরা তার নিন্দা করছি। ইসরাইলের ভূমিকা বিশ্বশান্তির পক্ষে বড় আঘাত। মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা হয় না।
দীপঙ্কর ভট্টাচার্য, সাধারণ সম্পাদক, সিপিআইএমএল-লিবারেশন: আমাদের দলের তরফে বিবৃতি দিয়ে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, ইসরাইলের দখলে থাকা ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে বেসামরিক জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ইসরাইলি আগ্রাসন বৃদ্ধি এবং গাজায় যা হচ্ছে একটি গুরুতর উদ্বেগের বিষয়। বর্তমান যে সংঘাতের ঘটনা ঘটছে, এর প্রেক্ষিতে ভারতকে অবশ্যই সংঘর্ষ বন্ধ করার জন্য পদক্ষেপ করতে হবে। ফিলিস্তিনিদের অধিকার সমুন্নত রেখে তাদের একটি সার্বভৌম স্বদেশের জন্য রাজনৈতিক সমাধান খুঁজতে ভারত সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে। মোদি একে ‘সন্ত্রাসী হামলা’ বলে অভিহিত করেছেন এবং ইসরাইলের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছেন। আসলে বিজেপি ভারতে সন্ত্রাসী হামলা এবং হামাসের বর্তমান আক্রমণের মধ্যে একটি মিথ্যা মিল খুঁজতে চাইছে। মোদি সরকার এবং বিজেপি ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে সংঘটিত দখলদারিত্ব এবং অপরাধ নিয়ে অন্ধ। মুসলমানদের প্রতি ঘৃণা জাগানোর জন্য এই পরিস্থিতিকে কাজে লাগাতে চাইছে।
প্রদীপ ভট্টাচার্য, প্রাক্তন সাংসদ, কংগ্রেস নেতা: ঘটনা অনেক পুরানো। দ্বিতীয় বিশযুদ্ধের পর সবথেকে সমস্যা দেখা দিয়েছিল গাজা স্ট্রিপকে নিয়ে। একে দ্বিখণ্ডিত করার যে ব্যাপারটা ঘটেছিল, তা যদি আমেরিকা একটা সমাধানের জায়গায় নিয়ে আসতে পারতো তাহলে বর্তমানে যা কিছু ঘটছে তা হয়তো হতো না। তবে ফিলিস্তিন আলাদা একটি রাষ্ট্র হোক, ভারত এটা চিরকালই চেয়েছিল। আমাদের দেশ ফিলিস্তিনের আলাদা রাষ্ট্র গঠনের জন্য রাষ্ট্রসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামেও বারবার সরব হয়েছে। সেই দিক দিয়ে ভারত সরকারের ভূমিকা যথার্থই ছিল। বর্তমানে ভারত সরকার যে পুরোপুরি সাপোর্ট ইসরাইলকে দিয়েছে, এটা ঠিক কাজ করেনি। এটা ঠিক যে হামাস যেভাবে রকেট লঞ্চার ছুঁড়েছে সেটা নিন্দার বিষয়। এরা কখনও ইসরাইলের সঙ্গে যুদ্ধ করে পারবে না। তার পরিণতি ভয়ংকর হতে পারে। ইমিডিয়েটলি রাষ্ট্রসংঘকে বিষয়টি নিয়ে সমাধানের চেষ্টা করতে হবে।