পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: ইসরায়েলি-ফিলিস্তিনিদের মধ্যে লড়াই ক্রমশই তীব্র আকার ধারণ করেছে। যুদ্ধ পরিস্থিতিতে প্রায় পাঁচ শতাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। আহত কয়েক হাজার। শনিবার ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস ইসরাইলে আচমকা হামলা শুরু করলে এই সহিংসতা শুরু হয়। অপরদিকে হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে ইসরাইল সরকার। এদিকে এই পরিস্থিতিতে ইসরাইলে অবস্থিত নেপালের দূতাবাসের দাবি, সেদেশে পড়তে যাওয়া ৭ জন নেপালি পড়ুয়া আহত হয়েছে। মোট ১৭ জনকে বন্দি করে রেখেছে হামাস গোষ্ঠী।
ইজরাইলের নিযুক্ত নেপালের রাষ্ট্রদূত কান্তা রিজালের দাবি, সেদেশের হার্জলিয়ায় ৭ জন নেপালি আহত হয়েছেন। তাঁদের সঙ্গে আরও ১০ জনকে বন্দি করে রেখেছে জঙ্গিরা। তবে বন্দিরা হস্টেলেই রয়েছেন বলে জানানো হয়েছে। যুদ্ধ পরিস্থিতিতে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না।
ইসরাইক ও প্যালেস্টাইনের মধ্যে এই সংঘাত নতুন কিছু নয়। ফিলিস্তিনে তখন ইহুদি-আরবদের মধ্যে সহিংসতা শুরু হয়। একই সঙ্গে সহিংসতা বাড়ছিল ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধেও।
১৯৪৭ সালে জাতিসংঘে এক ভোটাভুটিতে ফিলিস্তিনকে দুই টুকরো করে দুটি পৃথক ইহুদি ও আরব রাষ্ট্র গঠনের কথা বলা হয়। জেরুজালেম থাকবে একটি আন্তর্জাতিক নগরী হিসেবে। ইহুদি নেতারা এই প্রস্তাব মেনে নেন, কিন্তু আরব নেতারা তা প্রত্যাখ্যান করেন। জাতিসংঘের এই পরিকল্পনা কখনোই বাস্তবায়িত হয়নি। ব্রিটিশরা এই সমস্যার কোনও সমাধান করতে না পেরে ১৯৪৮ সালে ফিলিস্তিন ছাড়ে। ইহুদি নেতারা এরপর ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ঘোষণা করে। বহু ফিলিস্তিনিনের প্রতিবাদ জানান এবং এরপর যুদ্ধ শুরু হয়। প্রতিবেশী আরব দেশগুলোর সৈন্যরাও যেখানে যায় যুদ্ধ করতে।
হাজার হাজার ফিলিস্তিনিকে তখন ঘরবাড়ি ফেলে পালাতে অথবা চলে যেতে বাধ্য করা হয়। ফিলিস্তিনিরা এই ঘটনাকে ‘আল নাকবা’ বা ‘মহাবিপর্যয়’ বলে থাকেন। পরের বছর এক যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে যখন যুদ্ধ শেষ হয়, ততদিনে ইসরাইল ফিলিস্তিনের বেশিরভাগ অঞ্চল দখল করে নিয়েছে। জর্ডান দখল করেছিল একটি অঞ্চল, যেটি এখন পশ্চিম তীর বলে পরিচিত। আর মিশর দখল করেছিল গাজা। জেরুজালেম নগরী ভাগ হয়ে যায়, ইসরায়েলি বাহিনী দখল করে নগরীর পশ্চিম অংশ, আর জর্ডানের বাহিনী পূর্ব অংশ।
দু’পক্ষের মধ্যে যেহেতু কখনোই কোনো শান্তিচুক্তি হয়নি, তাই উভয় পক্ষই অপর পক্ষকে দোষারোপ করতে থাকে। দুই পক্ষের মধ্যে পরের দশকগুলোতে এরপর আরও বহু যুদ্ধ হয়েছে।
১৯৬৭ সালে আরেকটি যুদ্ধে ইসরাইল ফিলিস্তিনিদের পূর্ব জেরুজালেম এবং পশ্চিম তীর, সিরিয়ার গোলান মালভূমি, গাজা, এবং মিশরের সিনাই অঞ্চল দখল করে নেয়। ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিরা কিছু ইস্যুতে মোটেও একমত হতে পারছে না। সংকট সমাধানে সবশেষ একটি উদ্যোগ নিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র, যখন ডোনাল্ড ট্রাম্প দেশটির প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এটিকে ‘ডিল অব দ্য সেঞ্চুরি’ বলে বর্ণনা করেছিলেন। কিন্তু ফিলিস্তিনিরা এই উদ্যোগকে নাকচ করে দিয়েছিলেন একেবারে একতরফা উদ্যোগ বলে। ফলে ট্রাম্পের সেই উদ্যোগ খুব একটা কাজে আসেনি।
বেশিরভাগ ফিলিস্তিনি শরণার্থী থাকেন গাজা এবং পশ্চিম তীরে। প্রতিবেশী জর্ডান, সিরিয়া এবং লেবাননেও রয়েছেন অনেক ফিলিস্তিনি।
ইসরায়েল এই ফিলিস্তিনি এবং তাদের বংশধরদের কাউকেই আর নিজেদের বাড়িঘরে ফিরতে দেয়নি। ইসরায়েল বলে থাকে, এদের ফিরতে দিলে সেই চাপ ইসরায়েল নিতে পারবে না এবং ইহুদি রাষ্ট্র হিসেবে ইসরায়েলের অস্তিত্বই হুমকির মুখে পড়বে।
ইসরায়েল এখনো পশ্চিম তীর দখল করে রয়েছে। গাজা থেকে তারা যদিও সৈন্য প্রত্যাহার করে নিয়েছে, জাতিসংঘের দৃষ্টিতে এটি এখনো ইসরায়েলের দখলে থাকা একটি এলাকা।
ইসরায়েল এখন পুরো জেরুজালেম নগরীকেই তাদের রাজধানী বলে দাবি করে। অন্যদিকে, ফিলিস্তিনিরা পূর্ব জেরুজালেমকে তাদের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে চায়। পুরো জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে কেবল যুক্তরাষ্ট্রসহ হাতে গোনা কয়েকটি দেশ।
গত ৫০ বছর ধরে ইসরায়েল এসব দখলীকৃত জায়গায় ইহুদি বসতি স্থাপন করে যাচ্ছে। ছয় লাখের বেশি ইহুদি এখন এসব এলাকায় থাকে। ফিলিস্তিনিরা বলছেন, আন্তর্জাতিক আইনে এগুলো অবৈধ বসতি এবং শান্তিপ্রতিষ্ঠার পথে অন্তরায়। তবে ইসরায়েল তা মনে করে না।