পারিজাত মোল্লা: বৃহস্পতিবার নিয়োগ দুর্নীতির তদন্ত নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে আবারও তোপের মুখে পড়ল কেন্দ্রীয় আর্থিক তদন্তকারী সংস্থা ইডি। এদিন বিচারপতি সৌমেন সেন এবং বিচারপতি উদয় কুমারের বেঞ্চ জানায় ,-‘ ১৯ মাস ধরে ইডি কিছুই করেনি’।
আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে তদন্ত শেষ করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। পাশাপাশি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে কোনও রক্ষাকবচ দেয়নি ডিভিশন বেঞ্চ। নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে ইডিকে কার্যত সময় বেঁধে দিল হাইকোর্ট। এদিন আদালতের তরফে জানান হয়, ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে তদন্ত শেষ করতে হবে। হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে ফের প্রশ্নের মুখে পড়তে হল ইডিকে।’১৯ মাস ধরে আপনারা কিছুই করেননি’, এমনটাই মন্তব্য ডিভিশন বেঞ্চের।এদিকে, ইডির তরফে জানান হয় যে, -‘তদন্তে সহযোগিতা করছেন না অভিষেক ‘।
এই প্রসঙ্গ উঠতেই হাইকোর্টের তরফে বলা হয়, ‘আগে নথি দেখুন, প্রয়োজনে ডেকে পাঠান, জিজ্ঞাসাবাদ করুন। ১২ ঘণ্টা, ১৫ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করুন, শেষ না হলে আবার ডাকুন। জিজ্ঞাসাবাদ শেষ না হলে আবার পরের দিন ডাকুন, তদন্ত শেষ করুন’।
এদিকে, ডিভিশন বেঞ্চের কাছে নথি পেশে বাড়তি সময় চাইলেন অভিষেকের আইনজীবী। ১০ অক্টোবরের মধ্যে দিতেই হবে, না পারলে ইডিকে জানান, তা জানান বিচারপতি । এই প্রসঙ্গেই ইডির অভিযোগ, এভাবেই তদন্তকে ব্যাহত করার চেষ্টা চলছে। এরপর অভিষেকের আইনজীবীর তরফে বলা হয়, ৪-৫দিনের রক্ষাকবচ দেওয়া হোক। যদিও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আইনজীবীর আর্জি খারিজ করে আদালত। রক্ষাকবচ দিল না হাইকোর্ট।’
সব নথি না পেলে সমন পাঠাতে পারবেন, কোনও রক্ষাকবচ দিচ্ছি না’, এদিন অভিষেকের আইনজীবীর আর্জি খারিজ করে এমনটাই জানিয়ে দিল ডিভিশন বেঞ্চ। ‘নথি দেখে সন্তুষ্ট না হলে সমন পাঠানো যাবে, কিন্তু ১৯-২৬ অক্টোবরের মধ্যে নয়’, প্রাথমিক তদন্তে জানিয়ে দিল হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ কার্যত ধোপে টিকল না শুভেন্দুর বিরুদ্ধে ইডির তথ্য ফাঁসের অভিষেকের অভিযোগও। ‘গোপন নথি ফাঁস হয়েই থাকে, কিন্তু ইডিকে আরও সতর্ক থাকতে হবে’, অভিষেকের তথ্য ফাঁসের অভিযোগ নিয়ে মন্তব্য করেন বিচারপতি।তাঁর আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি চার-পাঁচদিনের জন্য রক্ষাকবচ চান। আদালত সেই আর্জিও খারিজ করে দিয়েছে।
এদিন আদালত ইডিকে বলে, আগে আপনারা নথি জমা নিন। তারপর দরকার পড়লে ডেকে পাঠান। ১২ ঘণ্টা, ১৫ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করুন। শেষ না হলে আবার পরের দিন ডেকে তদন্ত দ্রুত শেষ করুন। বেঞ্চ বলেছে, মনে রাখবেন, সমন পাঠানো হলেই আদালত বলতে পারে না যে, সেই ব্যক্তি অভিযুক্ত। আমরা সময় বেঁধে দেব। সেই সময়ের মধ্যে অভিষেককে নথি পাঠাতে হবে। তিনি না পাঠালে আপনার সমন পাঠাবেন। যেদিন ডাকবেন, সেদিন তাঁকে হাজিরা দিতেই হবে। না যাওয়ার কোনও অজুহাত দেওয়া চলবে না।
ইডির আইনজীবী ধীরাজ দ্বিবেদী বলেন, নথি দেখার পর আমরা যেন ৪৮ ঘণ্টার নোটিসে তাঁকে ডাকতে পারি। না এলে যেন কড়া পদক্ষেপ করতে পারি। আদালত বলে, সেটা আপনাদের সিদ্ধান্ত। আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ করবেন। তাড়াহুড়ো করবেন না। ইডির আইনজীবী বলেন, আমরা আজও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তৈরি।
বিচারপতি সেন বলেন, আরও তথ্য সংগ্রহ করুন। নথি দেখে আপনাদের প্রশ্নপত্র বদলও করতে হতে পারে। ইডির আইনজীবী বলেন, প্রতি মুহূর্তে মামলা করে আমাদের কাজে বাধা দেওয়া হচ্ছে। নথি চাইলে দুই সপ্তাহ সময় চাওয়া হচ্ছে। আর সু্প্রিম কোর্টে দুই মিনিটের মধ্যে এসএলপি দাখিল হয়ে যাচ্ছে।নথি জমা দেওয়ার জন্য অভিষেকের আইনজীবী আরও সময় চান। তা খারিজ করে দিয়ে আদালত বলে, ১০ অক্টোবরের মধ্যে দিতেই হবে। না পারলে সেটাও ইডিকে জানাবেন। সব নথি না পেলে আপনারা সমন পাঠাবেন। আমরা কোনও রক্ষাকবচ দিচ্ছি না। তবে ১৯ থেকে ২৬ অক্টোবরের মধ্যে সমন পাঠানো যাবে না।