বিশেষ প্রতিবেদকঃ এখন আলিয়া নিয়ে আরও কিছু কথা। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সংকট কিন্তু আরও ঘনীভূত হয়েছে। আমার মূল্যায়নে খুব একটা কমেনি। অনেকেই মনে করছেন, আর্থিক সংকটের অবসান হলে সংকটের নিরসন হবে। আমাদের মনে হয় এই ধারণা ঠিক নয়। আসলে সংকটের মূল প্রসারিত হয়েছে অন্যক্ষেত্রে অন্যদিক থেকে। একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় বিষয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি সমাজের মানুষের বিশেষ আস্থা, সম্মান বা শ্রদ্ধাবোধ। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় এই মুহূর্তে এই জায়গাতেই সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থানে পৌঁছেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক সম্মান এখন ভূলণ্ঠিত। আর ফেসবুক-হোয়াটসঅ্যাপে কিছু ব্যক্তি পুরো বিষয়টি না জেনে এমন কিছু মন্তব্য করছেন, যাতে বিভ্রান্তি আরও বাড়ছে।
সমাজের মানুষ প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিয়োগ ও পদোন্নতি বিষয়ে। এসব নিয়ম মেনে যথাযথভাবে হয়নি বলে মনে করছেন অনেকেই। গুরুতর অভিযোগ দানা বেঁধেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বরাদ্দ অর্থ খরচ করতে না পারার প্রেক্ষিতে। বিগত তিনটি অর্থবর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য দেওয়া অর্থের সিংহভাগই ফেরত দেওয়া হয়েছে। অঙ্কটা প্রায় এক শত তিরিশ কোটি টাকার মতো। সবচেয়ে বড় কথা, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অভিযোগ করছেন, তাদের প্রাপ্য টাকা তাদের দেওয়া হচ্ছে না। এর বিপরীতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এভাবে টাকা ফেরত দেওয়া বিস্ময়কর বৈকি। বিশেষত ১৮ জুন ২০২১ তারিখে যেখানে প্রায় দুই কোটি টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে।
অভিযোগসমূহ নিঃসন্দেহে গুরুতর এবং রীতিমতো উদ্বেগজনক। এখন প্রশ্ন এই উদ্বেগজনক পরিস্থিতি সৃষ্টির দায়ভার কি সবটাই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উপর বর্তায় না এর অংশবিশেষ অন্যদের দিকেও যায়? আমরা অবগত হয়েছি, এমন অপ্রিয় অবস্থার দায় শুধুই বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়, অনেক সংস্থার– অনেক দায়িত্বশীল ব্যক্তিই এর জন্য দায়ী। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছেন, ফেরত যাওয়া অর্থের একাংশ অবশ্যই খরচ করা সম্ভব হয়নি তাদের প্রশাসনিক ব্যর্থতার কারণে। তবে তার পরিমাণ সামান্যই। অধিকাংশ অর্থই অব্যহৃত থেকে গেছে প্রশাসনিক জটিলতার ফলে। সরকারি বিধি মেনে টাকা খরচ করা মোটেই সহজ বিষয় নয়। এর জন্য সংশ্লিষ্ট সবপক্ষকে সমানভাবে সক্রিয় হতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দাবি করছেন, এক্ষেত্রে তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সহায়তা লাভে বঞ্চিত হয়েছেন।
প্রথমত হাতে টাকা থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয় সেই টাকা নিজেদের ইচ্ছামতো ব্যয় করতে পারে না। টাকার অঙ্কটা একটু বেশি হলেই আলাদা করে এমএএমই দফতরের অনুমোদন নিতে হয়। এমন অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে যেখানে দফতরের অনুমোদন চেয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে এবং তার পর বছর ঘুরে গেলেও দফতরের দিক থেকে উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। বারবার তাগাদা দিয়েও কোনও সদুত্তর মেলেনি। এতে বহু অর্থ অব্যবহৃত থেকে গেছে। দ্বিতীয়ত এমন অনেক ক্ষেত্র রয়েছে যেখানে বরাদ্দ অর্থ ব্যয় করার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যক্ষ কোনও ভূমিকা নেই। যেমন বিল্ডিং কনস্ট্রাকশন। বাড়ি তৈরির ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কেবলমাত্র প্রস্তাব দেন। প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে অর্থ বরাদ্দ হলে তা খরচ করার সব দায় বর্তায় এমএএমই-র উপর। তারাই পিডব্লিউডিকে দিয়ে কাজটা করিয়ে নেন এবং পেমেন্ট দেন। বাড়ি তৈরি হয়ে গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে নিয়ম মেনে বাড়িটার হ্যান্ডওভার দেওয়া হয় মাত্র। এর মাঝে বিশ্ববিদ্যালয়ে আর কোনও অফিসিয়াল ভূমিকা থাকে না। তৃতীয়ত, অনেকক্ষেত্রে এমন হয়েছে দফতর থেকে যখন টাকা অনুমোদন করা হয়েছে তখন নিয়ম মেনে ওই টাকা খরচ করার মতো উপযুক্ত সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের হাতে নেই। এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, নিয়ম বহির্ভূতভাবে অর্থ ব্যয় করা দণ্ডযোগ্য অপরাধ।
বিগত তিন অর্থবর্ষে কেবলমাত্র বিল্ডিং কনস্ট্রাকশন বাবদ বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে এমএএমই-তে যে প্রপোজাল দেওয়া হয়েছিল তার এক তৃতীয়ংশও যদি অনুমোদন করা হত, তবে টাকা ফেরত যাওয়া তো দূরের কথা অতিরিক্ত আরও একশো কোটি টাকা বরাদ্দ করতে হত। উল্লেখ্য, বিল্ডিং কনস্ট্রাকশন বাবদ বিগত কয়েকটি অর্থবর্ষে যে প্রপোজাল দেওয়া হয়েছিল তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, মেল বিল্ডিংয়ের সম্প্রসারণ (নিউ টাউন ক্যাম্পাস)– দ্বিতীয় গার্লস ও দ্বিতীয় বয়েজ হোস্টেল (নিউ টাউন ক্যাম্পাস)– টিচারস্ ও নন টিচিং কোয়াটারস (নিউ টাউন ক্যাম্পাস)– প্রশাসনিক ভবন (নিউ টাউন ক্যাম্পাস)– দ্বিতীয় গার্লস ও প্রথম বয়েজ হস্টেল (পার্ক সার্কাস ক্যাম্পাস)– প্রশাসনিক ভবন (পার্ক সার্কাস ক্যাম্পাস)– গার্লস হোস্টেল (তালতলা ক্যাম্পাস)। এই সব প্রস্তাবের সমস্তটাই আটকে রয়েছে লাল ফিতের বাঁধনে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অসহায়ভাবে অপেক্ষা করছেন বছরের পর বছর। এ দিকে তাদেরকেই অভিযুক্ত করা হচ্ছে টাকা ফেরত যাওয়ার জন্য। বিশ্বস্ত সূত্রের খবর, বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তরা প্রয়োজনে এই বিষয়ক সমস্ত নথিপত্র অর্থাৎ কবে কোন প্রস্তাব দফতরের কাছে পাঠানো হয়েছে, তা সংরক্ষণ করেছেন। প্রয়োজনে তারা তা উপস্থাপন করতে পারেন। এই যে বলা হচ্ছে, বিগত তিন বছরে পরিকাঠমোগত কোনও উন্নতি হয়নি সেই কথাটা ঠিক। কিন্তু সম্পূর্ণ এর নেপথ্য ইতিহাস অন্য। অর্থাৎ পরিকাঠামোগত কোনও উন্নয়ন না হওয়ার দায় মুখ্যত এমএএমই কর্তৃপক্ষের উপর বর্তায়। উল্লেখ্য, ২০১২ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে পরিকাঠামো ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের যে অসামান্য অগ্রগতি হয়েছিল, তার মূলে ছিলেন দফতরের সেদিনের। ঊর্ধ্বতন আধিকারিক মাননীয় সহিদুল ইসলাম। তিনিই সরকার পক্ষের সঙ্গে দরকষাকষি করে বিশ্ববিদ্যালয়কে অনেকটা পথ এগিয়ে দিয়েছিলেন। সেদিক থেকে দেখলে বর্তমানের সঙ্গে তার কোনও তুলনা হয় না।
১৮ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে প্রায় দুই কোটি টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে। এ দিকে বিদ্যুৎ বিল– সাফাই কর্মী ও নিরাপত্তাকর্মীদের বেতন দেওয়া হয়নি। এর জন্য অনেকেই অভিযুক্ত করতে চাইছেন বিশ্ববিদ্যালয়কে। কিন্তু খতিয়ে দেখলে প্রতিপন্ন হবে এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের দিক থেকে কোনওরকম ত্রুটি করা হয়নি। প্রথমত জুন মাসের বিদ্যুৎ বিল বিশ্ববিদ্যালয়ের হাতে এসেছে ৬ জুলাই। জুন মাসের ১৮ তারিখে যে টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে সেই টাকা থেকে এই বিল পরিশোধ করা কীভাবে সম্ভব। দ্বিতীয়ত ওই টাকা দিয়ে সাফাই ও নিরাপত্তাকর্মীদের বেতন দেওয়া সম্ভব হয়নি টেকনিক্যাল কারণে। এক্ষেত্রে যেসব সংস্থা পরিষেবা সরবরাহ করে, তাদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে চুক্তি ছিল মার্চ ২০২১ পর্যন্ত। ভোটবিধির জন্য ২ মে-র আগে তাদের সঙ্গে নতুন করে চুক্তি করা সম্ভব হয়নি। তাছাড়া চুক্তি হওয়ার পর পরই বকেয়া বিল পরিশোধ করা সম্ভব হয় না। কারণ তার জন্যও বিশেষ প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়, যা যথেষ্ট সময়সাপেক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময় অবশিষ্ট ছিল না। তৃতীয়ত শেষ কোয়ার্টারের পাঁচ কোটি টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাতে এসে পৌঁছয় ১ মার্চ। এর অনতিবিলম্বে ভোটবিধি কার্যকর হয়েছে। এই অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় ইচ্ছা করলেও অনেকক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারেনি টাকা খরচের জন্য। চতুর্থত একটা খাতের টাকা কিছুতেই অন্য খাতে ব্যয় করা যায় না। এ ছাড়া নির্দিষ্ট খাতে নির্দিষ্ট টাকা ব্যয় করার পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে নির্বাচনবিধি। যেদিন রহিত হল নির্বিাচনবিধি তার কয়েক দিন পরেই ছিল ঈদ। সংগত কারণে এই সময় স্বাভাবিক কাজকর্ম করা যায়নি। তারপর যেদিন ঈদ সম্পন্ন হল তার ঠিক দু’দিন পর থেকে (১৬ মে) লাগু হল কঠোর লকডাউন। এই অবস্থায় কেমন করে টাকা খরচ করা সম্ভব– অসৎ উপায় অবলম্বন করা ছাড়া।
বলার অপেক্ষা নেই এসব কথার পর ১৮ জুন ফেরত দেওয়া প্রায় দুই কোটি টাকা নিয়ে আর কিছু বলার থাকে না। তবে তা সত্ত্বেও যদি ধরে নেওয়া হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে দেওয়া এইসব যুক্তি সন্তোষজনক নয়, তবে তারপরেও কিন্তু কথা থেকে যায়। বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ম মেনে দফতরের অনুমতি সাপেক্ষে ১৬ কোটির বেশি টাকার সামগ্রী ক্রয় করেছিল ২০২০ সালের মার্চ এপ্রিল মাসে। নিয়মের ফাঁসে আটকে যাওয়ায় ওই টাকা তখনও পাওনাদারদের হাতে তুলে দেওয়া যায়নি। সব টাকাই সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া হয় এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে। অতঃপর অতিক্রান্ত হয়েছে দীর্ঘ সময়। এতদিনে বারবার পত্রাঘাত করার পরেও দফতরের পক্ষ থেকে বকেয়া ওই টাকা পরিশোধ করার ব্যবস্থা করা হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় তার পার্ক সার্কাস ক্যাম্পাসের ইন্টারনেট ব্যবস্থা সচল করার জন্য প্রয়োজনীয় টাকা চেয়ে এমএএমই দফতরকে চিঠি করেছেন বারংবার। কিন্তু এমএএমই দফতরের দিক তাতে কোনওরকম কর্ণপাত করা হয়নি। কর্ণপাত করা হয়নি ন্যাক ভিজিট কিংবা সমাবর্তনের মতো অতি প্রয়োজনীয় বিষয়ে টাকা চাওয়ার পরেও। ন্যাক ভিজিট-এর জন্য চাওয়া হয়েছে ৪০ লক্ষ টাকা। অদ্যাবধি এর জন্য একটি টাকাও অনুমোদন করা হয়নি। যে টাকা স্বাধীনভাবে ব্যয় করার কোনওরকম অধিকার বিশ্ববিদ্যালয়ের নেই, সবটাই যেখানে দফতরের অনুমোদন সাপেক্ষ, সেখানে বরাদ্দ টাকা ব্যয় করতে না পারার দায়ভার সম্পূর্ণভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর চাপিয়ে দেওয়া নিশ্চয়ই ঠিক নয়। এর থেকে অনৈতিক কাজ আর কী হতে পারে। বিশেষত বিশ্ববিদ্যালয়ের দিক থেকে দেওয়া প্রস্তাবে কোনওরকম কর্ণপাত না করা– যেখানে দফতরের আধিকারিকরা তাদের নিয়মিত অভ্যাসে পরিণত করেছেন।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যা বিষয়ক এমন অনেক গবেষণাগারে সংশ্লিষ্ট সামগ্রী রয়েছে যার দাম হয়তো কয়েক কোটি টাকা এবং পৃথিবীতে একটি মাত্র কোম্পানিই তা তৈরি করে। এসব ক্ষেত্রে আমাদের দেশে অন্তত ৩টি টেন্ডার প্রস্তাব জমা দিতে হয়। সেক্ষেত্রে সংশিষ্ট সকলকে অধিক উদ্যোগী হয়ে প্রয়োজনীয় পদপেক্ষ নিতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছেন, এমন অনেক দৃষ্টান্ত রয়েছে সেখানে তারা তাদের দিক থেকে সমস্ত কৃত্যাদি সম্পন্ন করে দফতরের কাছে ফাইল প্রেরণ করেছেন এবং তারপরে বছর ঘুরে গেলেও দফতরের কর্তা-ব্যক্তিরা কোনওরকম পদক্ষেপ নেননি। এতে কোটি কোটি টাকা অব্যবহৃত থেকে গেছে। পদার্থবিদ্যা বিভাগের ক্ষেত্রে এই টাকার পরিমাণ যেমন ৯ কোটি ৮৬ লক্ষ। এ দিকে তার দায়ভার চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপরে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছেন– ২০১৯-২০২০ অর্থবর্ষে যে ৫৯ কোটি টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে– তার মধ্যে ৫৭ কোটি টাকা অনায়াসে ব্যয় করা যেতে পারত যদি দফতরের আধিকারিকরা তাঁদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতেন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি সহানুভূতিশীল হতেন। এক্ষেত্রে তাঁরা তাঁদের দাবির সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় নথি তুলে ধরতে প্রস্তুত আছেন।
তাছাড়া এটা অত্যন্ত উদ্বেগজনক বিষয় যে, বিশ্ববিদ্যালয় টাকা ফেরত দিয়ে দফতরকে যেসব চিঠি লিখেছেন, তার প্রত্যেকটি এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধম্যের হাত ধরে সকলের হাতে হাতে পৌঁছে গেছে। যে নথি সম্পূর্ণ অফিসিয়াল কর্তৃপক্ষের বাইরে যা অন্য কারও হাতে যাওয়ার নয় তা কেমন করে সকলের কাছে পৌঁছে গেল? যিনি প্রথম এই নথি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করলেন– তিনি তা কোথা থেকে পেলেন? যে বা যারা এই নথি তাঁর হাতে তুলে দিয়েছেন– তাঁরা আইনানুগ শাস্তিযোগ্য কি না? এভাবে অফিসিয়াল সামগ্রী সাধারণের হাতে তুলে দিয়ে যারা বিশ্ববিদ্যালয়কে অপদস্থ করার চক্রান্ত করেন– তাঁদের ন্যায়-নীতির প্রশ্নে কোনও কথা বলার অধিকার থাকে কি? কিন্তু উল্লেখ্য– গবষেকদের গবেষণাভাতা বিষয়ক বিশেষ সমস্যার প্রেক্ষিতে এমএএমই দফতরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উপস্থিতিতে একটি মিটিং হয়েছিল– সেই মিটিংয়ের রেজ্যুলিউশনও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভেসে বেড়াচ্ছে। এর থেকে অনৈতিক আর কী হতে পারে।
এ নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের দিক থেকে অনেক ত্রুটি আছে, বিশেষত আর্থিক ক্ষেত্রে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ বিভাগ অত্যন্ত দুর্বল। অনেকে ক্ষেত্রে তারা নিয়ম মেনে সমস্ত কাজ করে উঠতে পারেননি এ কথা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দ্বিধাহীন কণ্ঠে উচ্চারণ করছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, এক্ষেত্রে তাদের দিক থেকে বড় সমস্যা তৈরি হয়েছে ফিনান্স অফিসারের পদ অদ্যাবধি শূন্য থাকায় সেই প্রথম দিন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনও স্থায়ী ফিনান্স অফিসার নেই। দফতর থেকে বিভিন্ন সময়ে প্রেরিত বিভিন্ন আধিকারিক অস্থায়ীভাবে কাজ করেছেন। এতে সুসংগঠিত কোনও পরিকাঠামো গড়ে ওঠেনি। কোনও ক্রমে কাজ চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। ফলত দিনে দিনে জটিলতা বেড়েছে এবং এখন তা মারাত্মক রূপ নিয়েছে।
উল্লেখ্য, ইন্টারভিউ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পরেও উপযুক্ত যোগ্যতা সম্পন্ন প্রার্থী না থাকায় ফিনান্স অফিসার পদে কাউকে স্থায়ীভাবে নিয়োগ করা সম্ভব হয়নি।