বিশেষ প্রতিবেদন: রক্তের উপাদান দীর্ঘমেয়াদি কোভিড-১৯ রোগীদের শনাক্ত করতে সক্ষম, নয়া গবেষণায় এই প্রমাণ মিলেছে। নেচার জার্নালে প্রকাশিত একটি নতুন গবেষণায় বিজ্ঞানীরা এমনটাই জানিয়েছেন। গবেষণা অনুসারে, দীর্ঘ মেয়াদি করোনার জন্য রক্তের বায়োমার্কার বা নির্দিষ্ট রক্তের উপাদান যা রোগ নির্দেশ করে তা শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। রোগের সঙ্গে রোগীদের সঠিকভাবে পার্থক্য করতে এই রক্তের উপাদান ব্যবহার করা যাবে।
উল্লেখ্য, দীর্ঘমেয়াদি কোভিডের সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে ক্লান্তি, মাথাব্যথা, ক্রমাগত কাশি, মাথা ঘোরা, শ্বাসকষ্ট, অনিদ্রা। উদ্বিগ্নতা দেখা দিতে পারে। ডায়াবেটিস, স্থূলতা, ফুসফুসের রোগ, হৃদরোগ বা উচ্চ রক্তচাপের মতো ব্যাধিযুক্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ থেকে দীর্ঘমেয়াদী জটিলতায় দিকে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। দীর্ঘমেয়াদি কোভিডকে কখনও কখনও কোভিড পরবর্তী অবস্থা বলে পরিচিত। তবে এই দীর্ঘমেয়াদি কোভিড রোগীদের সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম করোনাভাইরাস-২(সাএআরএস-কোভিড-২) -এর সঙ্গে তুলনা করা ঠিক নয়। কোভিডের কারণে শরীরে তৈরি হতে পারে এমন অ্যান্টিবডি, যা রোগীর নিজের শরীরকেই আক্রমণ করতে পারে।
আমেরিকায় কিছু সংখ্যক রোগীর রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার ধরন নিয়ে গবেষণার সময় বিষয়টি নজরে আসে চিকিৎসকদের। দেখা যায়, তাঁদের শরীরে এমন কিছু অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে, যা দীর্ঘমেয়াদি ভাবে শরীরেই থেকে যাচ্ছে। কোভিড সেরে যাওয়ার পরে সেই সব অ্যান্টিবডি শরীরের অন্য কোষ বা অঙ্গকে আক্রমণ করছে। বিজ্ঞানীরা এই সব অ্যান্টিবডি সম্পর্কে বলছেন, যুদ্ধ শেষ হয়ে গেলেও এরা লড়াই থামায় না। উল্টে শরীরকেই আক্রমণ করে।
ইয়েল ইউনিভার্সিটি এবং অন্যান্য মার্কিন প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানীরা বিশ্লেষণ করে জানিয়েছেন, সঞ্চালিত অ্যান্টিবডিগুলি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে যা শরীরকে নন-কোভিড ভাইরাসগুলির সঙ্গে লড়াই করতে সহায়তা করে, যেমন এপস্টাইন-বার ভাইরাস (যা অনেক ক্যান্সারের সঙ্গে যুক্ত একটি মানব হারপিস-সৃষ্টিকারী ভাইরাস)।
নিউইয়র্কের আইকান স্কুল অফ মেডিসিনের গবেষক ডেভিড পুট্রিনো বলেছেন, রক্তের উপাদান সংগ্রহ নির্ভরযোগ্য রক্ত পরীক্ষার সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপ। কোভিড রোগীদের রক্তের উপাদান আরও তথ্য সরবরাহ করেছে।
গবেষণার জন্য ২০২১-২০২২ সালে ২৭১ জনের ওপরে পরীক্ষা চালা্নো হয়। যাদের নিয়ে গবেষণা চালানো হয়, সেই সমস্ত রোগীরা করোনা থেকে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন, অথবা সুস্থ হয়েছে ওঠার পরেও যারা চার মাস ধরে করোনা উপসর্গ শরীরে ছিল। তবে এরা কোনওভাবেই সাএআরএস-কোভিড-২-এ আক্রান্ত নয়।
গবেষকরা রোগীদের রক্তের নমুনা এবং মেশিন লার্নিং অ্যালগরিদম বিশ্লেষণ করেছেন। বিজ্ঞানীদের কথায়, দীর্ঘমেয়াদী করোনা রোগীদের শনাক্ত করার জন্য সবচেয়ে কার্যকর বায়োমার্কার নির্ধারণ করা। গবেষণাচলাকালীন রোগীদের তাদের উপসর্গ, চিকিৎসা ইতিহাস, এবং স্বাস্থ্য-সম্পর্কিত জীবনের মান সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। গবেষকরা বলেছেন যে, অ্যালগরিদমটি দীর্ঘমেয়াদি করোনা রোগীদের শনাক্ত করতে ৯৬ শতাংশ কার্যকরী।
ইয়েল স্কুল অফ মেডিসিনের ইমিউনোবায়োলজি এবং আণবিক, সেলুলার এবং উন্নয়নমূলক জীববিজ্ঞানের সহ অধ্যাপক আকিকো ইওয়াসাকি বলেন, বৃহত্তর গবেষণা প্রয়োজন। দীর্ঘমেয়াদি কোভিডের রোগের প্যাথোজেনেসিস (প্যাথোজেনেসিস রোগের উদ্ভব বা অগ্রগতিকে বোঝায়) করার প্রথম পদক্ষেপ বলা যেতে পারে। গবেষক ডেভিড পুট্রিনো বলেছেন, দীর্ঘ কোভিডের চিকিৎসার জন্য কোনও ‘সিলভার বুলেট’ নেই, কারণ এটি এমন একটি অসুস্থতা যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং হরমোন নিয়ন্ত্রণের মতো জটিল সিস্টেমে অনুপ্রবেশ করে। জটিল অসুস্থতার জন্য জটিল চিকিৎসার সমাধান প্রয়োজন, তার জন্য এবং দীর্ঘ কোভিডকে আরও ভালোভাবে গবেষণা করতে হবে। এর আমাদের নয়া আবিষ্কারের সঙ্গে প্রতিশ্রুতিশীল থেরাপি প্রয়োজন।