আহমদ আবদুল্লাহ: সাংসদ দানিশ আলিকে নয়া সংসদের ভিতর যেসব গালিগালাজ ও কটূকাটব্য করা হয়েছে তা এখন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। সবথেকে বড় কথা হচ্ছে, এই গালিগালাজ শুধু দানিশ আলিকে দেওয়া হয়নি, দেওয়া হয়েছে একটি সম্প্রদায়কে। এই গালিগালাজ ও হুমকি হচ্ছে, কিভাবে ভারত থেকে ভূমিপুত্র-সংখ্যালঘু মুসলিমদের নিকেশ করা যায়, সেই সুদূরপ্রসারী ও বৃহত্তর পরিকল্পনার অংশ। আরএসএস-এর প্রথম দিকের গুরুজিরা কম-বেশি এই ধরনেরই পরিকল্পনা ব্যক্ত করেছিলেন। কট্টরপন্থীদের মতে এখন নাকি ‘হিন্দুরাজ’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আর তাই এবার নানা ধরনের পূর্বপরিকল্পনাগুলি বাস্তবায়ন করার সময় এসেছে।
কথা হচ্ছিল রমেশ বিদুরির সেই অশ্লীল ও ঘৃন্য গালিগালাজ নিয়ে যা বিজেপির তাবড় তাবড় নেতারা দন্ত বিকশিত করে উপভোগ করছিলেন। শুধু তাই নয়, সংসদে টেবিল চাপড়ে রমেশ বিদুরিকে সমর্থন দিচ্ছিলেন। অনেকেই বলছেন, ভারতীয় সভ্যতা ও শালীনতা সম্পর্কে এই বিজেপি নেতাদের যা ধারণা, তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছিলেন তাঁরা। কিছু দুঃশাসন, বিভীষণ নামধারী যে হিরোরা ছিলেন, তাদেরও তো অনুসারী কাউকে না কাউকে থাকতে হবে। তবে শেষ পর্যন্ত রাম কিন্তু সীতা উদ্ধার করেছিলেন। আর দ্রৌপদীর ও সম্মান রক্ষা করেছিলেন শ্রীকৃষ্ণ। এক্ষেত্রে বিজেপি ও সংঘ পরিবারের আক্রমণ থেকে কারা মুসলিম ও খ্রিস্টান সংখ্যালঘুদের রক্ষা করবে, তা অবশ্য আল্লাহই জানেন। মোদ্দাকথা, রামায়ন-মহাভারতেও দুষ্টের দমন ও শিষ্টের জয়ের কথা রয়েছে। কিন্তু বিজেপি পরিবার এইসব কথায় ধারধারে বলে মনে হয় না!
কথা হচ্ছিল ‘কাটুয়া’ শব্দ নিয়ে। রমেশ বিদুরি গালি দিতে গিয়ে কি শেষ পর্যন্ত ‘কাটুয়া’দের প্রশংসাই করে বসলেন নাকি, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে।
চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের বক্তব্য হচ্ছে, যদি কারও খতনা করা থাকে তাহলে ইউরিনারি ট্র্যাক্ট বা মুত্রনালীতে ইনফেকশনের ঝুঁকি অনেক কমে যায়। এছাড়া পুরুষদের মধ্যে কিছু যৌনরোগেরও সম্ভাবনা হ্রাস পায়। এছাড়া মারাত্মক পেনাইল ক্যান্সারের ক্ষেত্রেও ‘কাটুয়া’দের রিস্ক কম থাকে। পেনাইল ক্যান্সার একটি রোগ, যা পেনিস বা লিঙ্গের টিস্যুতে ম্যলিগন্যান্ট বা ক্যান্সারযুক্ত কোষগুলির অনিয়ন্ত্রিতভাবে সংখ্যাবৃদ্ধি করে। এটি একটি বিরল ধরণের ক্যান্সার, যা চল্লিশোর্ধ্ব পুরুষদের মধ্যে দেখা যায়। সুন্নত বা খতনা এই ধরনের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়। তাই মুসলমান এবং ইহুদি পুরুষদের মধ্যে পেনাইল ক্যান্সার সাধারণত খুবই কম দেখা যায়। এছাড়া অনেকে বলেন, খতনা করা থাকলে যৌনশক্তিও নাকি বৃদ্ধি পায়। এছাড়া খতনা করার আরও অনেক সুফল রয়েছে বলে বছর দুয়ের আগে ইসরাইলি বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে জানতে পেরেছেন। গুগল সার্চ করলে তা পাওয়া যেতে পারে। একসময় খ্রিস্টানরাও বিজেপির কথা মতো এই ‘কাটুয়া’ সম্প্রদায়ভুক্ত ছিলেন। বাইবেলে খতনার উপকারিতার কথাও বর্ণিত হয়েছে। পরে অবশ্য খ্রিস্টানরা খতনার প্রথা পরিত্যাগ করে। তবে পাশ্চাত্য দেশে অনেকে চিকিৎসকের পরামর্শে খতনা করিয়ে থাকেন। রমেশ বিদুরি এইসব কথা জানলে হয়তো মুসলিমদের ‘কাটুয়া’ না বলে নিজেই সম্ভবত ‘কাটুয়া’ হয়ে যেতেন। তবে একটা কথা আছে, চোরা না শোনে ধর্মের কাহিনি, তাই বিদুরি এইসব কথা শুনবেন কি না কে জানে।
তবে ‘ভাড়ুয়া’ শব্দ নিখাতই গালিগালাজ। মানে হচ্ছে ‘পিম্প’ বা সোনাগাছি বা জিবি রোডের অসহায় মহিলাদের দালাল টাইপ। কিন্তু ইদানিং এইসব মহিলাদের আর বেশ্যা, পতিতা ইত্যাদি অভিধার সঙ্গে যুক্ত করা যায় না। তাতে মানহানির মামলা হতে পারে। পশ্চিমা ধাঁচে এদের বলা হয় সেক্স ওয়ার্কার বা যৌনকর্মী। তাহলে পিম্প বা যৌনকর্মীদের দালালদেরও পুরুষ সেক্স ওয়ার্কার বলতে হবে। এদের মধ্যে কিন্তু সব থেকে বেশি হচ্ছে বিদুরি সাহেবের ধর্ম ও সম্প্রদায়ের লোক।
সে যাই হোক, এসব ব্যাপারে কথা না বাড়ানোই ভালো। তবে লোকে বলছে, হঠাৎ কেন সংসদের বিশেষ অধিবেশনের শেষদিনে রমেশ বিদুরি ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলেন, আর চিৎকার করে করে এইসব গালিগালাজ ও অশ্লীল বাক্যবাণ প্রয়োগ করলেন, এমনকি সংসদ থেকে এবং সম্ভবত দেশ থেকেও বের করে দেওয়ার হুমকি দিলেন। লোকে আরও বলছে এটা হঠাৎ ঘটে যাওয়া কোনও বিষয় নয়। আসলে নানা সমস্যায় বিজেপি এখন হালে পানি পাচ্ছে না।
মণিপুর, নুহ্ ছাড়াও জি-২০ নিয়ে সাফল্যের ঢাকঢোলের বাজনা কানাডা সহ নানা প্রশ্নে স্তিমিত হয়ে এসেছে। সাধারণ মানুষের অর্থনীতি খুবই খারাপ। ক্রোড়পতিদের অবশ্য ভালো। কিন্তু ভোটটা তো দেয় গরীব মানুষরা। ওবিসি প্রশ্নে এবং নারী আইন বাস্তবায়িত করার দীর্ঘ বিলম্ব নিয়ে মোদি সরকার ঘোর অস্বস্তিতে। তাহলে হাতে থাকল কি? হাতে থাকল পেনসিল এবং সাম্প্রদায়িকতা ও বিদ্বেষ ভাষণ। বাজিমাত করার আর একটি পুরনো থিওরি নতুন বোতলে হয়তো বা পার্লামেন্টে পেশ করা হল!