পুবের কলম প্রতিবেদক: ভারতের পৌরহিত্যে সম্প্রতি শেষ হয়েছে জি-২০ বৈঠকে। বৈঠকে যোগ দিতে অন্যান্য রাষ্ট্রপ্রধানদের পাশাপাশি ভারতে আসেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। মোদি ও ট্রুডোকে একসঙ্গে ভারত মণ্ডপমে দাঁড়িয়ে করমর্দন করতে দেখা যায়। কিন্তু তার পরেই বিনামেঘে বজ্রপাত! পুরো ৩৬০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেল ঘুরে এখন ভারত আর কানাডার মধ্যে সম্পর্কের অবনতিতে জোর চাপানউতোর শুরু কূটনৈতিক মহলে। কানাডার শিখ নেতা হরদীপ সিং নির্ঝর হত্যার ঘটনায় ভারত সরকারের দিকে সরাসরি অভিযোগের আঙুল তোলার পরে প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এখন চাইছেন যে কানাডার মিত্র দেশগুলি তাদের পাশে দাঁড়াক। দুই দেশের মধ্যে এই বৈমাত্র সুলভ আচরণের প্রভাব পড়েছে ভারত ও কানাডায়। বিশেষ করে উদ্বেগে বাণিজ্য মহল। বিপাকে ৪০ কোটির বিনিয়োগ।
ভারতের একাধিক বড় বড় কোম্পানিগুলির বিনিয়োগ রয়েছে কানাডায়। পাশাপাশি কানাডার বেশ কিছু কোম্পানির ব্যবসা রয়েছে ভারতেও। ফলে দুই দেশের কূটনৈতিক স্তরে চলা চরম বিরোধ উভয় দেশের বাণিজ্যে প্রভাব পড়তে চলেছে। মোটা অঙ্কের এই বিনিয়োগ দুই দেশের মধ্যেই চিন্তা বাড়িয়েছে। সম্প্রতি কনফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রি একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে দাবি করেছিল, কানাডার অর্থনীতিতে ভারতীয় অবদান বেড়েছে। বলা হয়, কানাডায় ভারতীয় শিল্পের উপস্থিতি ক্রমেই বেড়ে চলেছে। রিপোর্টে জানানো হয়, কানাডায় বর্তমানে ৩০টি ভারতীয় কোম্পানির ব্যবসা রয়েছে, কোম্পানিগুলোর মোট বিনিয়োগের পরিমাণ রয়েছে প্রায় ৪০,৪৪৬ কোটি টাকা। বিনিয়োগ আরও বৃদ্ধি হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। উদ্ভূত পরিস্থিতি সেই আশার উপর পুরো জল ঢেলে দিয়েছে। ভারতীয় কোম্পানিগুলোর কানাডায় ব্যবসার ফলে সেদেশে প্রায় ১৭,০০০ জনেরও বেশি লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে।
দুই দেশের মধ্যে যেভাবে বাণিজ্য এগিয়ে চলেছিল, তাতে আগামীদিনে উন্নয়নের সম্ভাবনা আরও প্রবল ছিল। ২০২২ সালে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বেড়ে দাঁড়ায় ৮ বিলিয়ন ডলার। কানাডায় রফতানি করার পরিমাণও হয়েছে ৮ বিলিয়ন ডলার ও আমদানি করার পরিমাণও ছিল ৮ বিলিয়ন ডলার। কানাডা থেকে মূলত ভারতে আসে কৃষি খাতের সার, জ্বালানির নানা উপাদান যেমন কয়লা, কোক এবং ব্রিকেট ইত্যাদি। অন্যদিকে, ভারত কানাডায় রফতানি করে নানা পোশাক ও ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য।
দুই দেশের এই উদ্বেগজনক পরিস্থিতির মধ্যে চিন্তায় আইটি কোম্পানিগুলি। কারণ ভারতীয় আইটি সংস্থাগুলি কানাডায় বিপুল বিনিয়োগ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে উইপ্রো, ইনফোসিস, টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিসেস মতো জায়ান্ট কোম্পানিগুলি। ফলে এই মুহূর্তে কোম্পানিগুলি অপেক্ষা করা আর পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা ছাড়া আর কোনও গতি নেই। ২০২২ সালের হিসেবে দেখা হলে ভারত ছিল কানাডার দশম বৃহত্তম ব্যবসায়িক পার্টনার।
যদিও আইটি শিল্পের শীর্ষ সংস্থা ন্যাসকম বলেছে, “তাৎক্ষণিক উদ্বেগের কারণ নেই”, স্টার্টআপ সহ আইটি সংস্থাগুলি সতর্কতার সঙ্গেই সব কিছু নজরে রেখেছে’। এই উত্তেজনার মধ্যে এবার কানাডার নাগরিকদের জন্য ভিসা পরিষেবা স্থগিত করল ভারত। বৃহস্পতিবার ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্র এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, পরবর্তী নোটিশ না দেওয়া পর্যন্ত কানাডিয়ানদের ভিসা পরিষেবা বন্ধ থাকবে।শিল্প বিশেষজ্ঞরাও উদ্বেগ প্রকাশ করে বলছেন যে, বর্তমান অচলাবস্থায় নতুন ব্যবসায়িক চুক্তি এবং দুই দেশের মধ্যে পেশাদারিত্বকে বিলম্বিত করতে পারে। কারণ ব্যবসা বৃদ্ধির জন্য একটি ‘অনুকূল রাজনৈতিক জলবায়ু’ চুক্তি অপরিহার্য।