আসিফ রেজা আনসারী: রেল হকারদের উচ্ছেদের বিরুদ্ধে সব সংগঠন একসঙ্গে লড়াই করবে।মানুষের রুজিরুটির উপর আঘাত মেনে নেওয়া হবে না। বুধবার এক সাংবাদিক সম্মেলনে এমনই ঘোষণা করলেন নেতারা। প্রসঙ্গত, রেল চত্ত্বরে কোনও হকারি করতে দেওয়া হবে না, এতে নাকি সমস্যা হয়। এমনই অজুহাতে রেলস্টেশন সহ রেলের জায়গা খালি করতে অভিযানে নেমেছে রেলওয়ে প্রটেকশন ফোর্স বা আরপিএফ। এরই বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামে জাতীয় বাংলা সম্মেলন নামে একটি সংগঠন।
সেই আন্দোলনের উপর আরপিএফ অত্যাচার চালিয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। তারপর বিভিন্ন সংগঠনের তরফে ঘটনার ধিক্কার জানিয়ে জাতীয় বাংলা সম্মেলনের পাশে থাকার বার্তা দেওয়া হয়।
এবার সব সংগঠনের নেতারা এ দিন বিকালে কলকাতা প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন করে রেল হকারদের উচ্ছেদের বিরুদ্ধে ডাক দিলেন গণআন্দোলনের। সভায় হকার নেতা সিদ্ধব্রত দাসের পাশে ছিলেন বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা।
এ দিন টিউসিসির প্রতিনিধি তাবারক আলি খান বলেন, একসময় বাঙালিদের বাংলাদেশি বলে তাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছিল, আমরা রুখে দিতে পেরেছি। আজও বলছি আমরা হকারদের সঙ্গে থাকব, আমরা লড়াই জিততে চাই। আইএসএফ,এর শ্রমিক সংগঠনের নেতা রাজীব মণ্ডল বলেন, হকারদের উপর কেন্দ্র সরকার স্বৈরাচারী মনোভাব নিয়ে চলছে।
এর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ লড়াই করতে হবে। আমরা তাতে অংশ নেব, বিধায়ক নওসাদ সিদ্দিকীও রেল হকারদের পাশে থাকবেন। আর হকার সংগ্রাম সমিতির কৃর্তীমান ঘোষ বলেন, ১৬ তারিখের ঘটনার নিন্দা জানানোর ভাষা নেই। রেলে ৭০ লক্ষ হকার আছে। সরকার চাকরি দিতে পারে না, রুজির ব্যবস্থা করে না তাই বাধ্য হয়েই তারা হকারি করে। হকারদের জন্য লড়াই চলবে। তাঁর দাবি, হকারির মাধ্যমে দৈনিক ৮ হাজার কোটি টাকা লেনদেন হয়।
সেই মার্কেট দখল করতে দেওয়া হবে আদানিদের, তারজন্য হকার তুলে দেওয়া হচ্ছে। হকারদের সমর্থন করেন সংগীতশিল্পী পুতুল চট্টোপাধ্যায়, চলচ্চিত্র পরিচালন গৌতম ঘোষ, লেখক অধ্যাপক ইমানুল হক, কবি প্রসূন ভৌমিক প্রমুখ।
ইমানুল হক বলেন, অর্থনৈতিক সন্ত্রাসবাদ চালাতে চাইছে আরএসএস,বিজেপি। রেলের জায়গা দখল করে বড় বড় কোম্পানির হাতে তুলে দেওয়া হবে। তিনি অভিযোগ করেন, রেলে হকার তুলে দেওয়া হলে নামিদামি দোকান বসবে আর সেখানে ১০ টাকার ঝালমুড়ির বদলে ১০০টাকার বার্গার কিনে খেতে হবে। গরিব মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাবে সবকিছু। একটা বন্দে ভারত ট্রেনের জন্য ১০০ ট্রেন বন্ধ করার অভিযোগও করেন ইমানুল হক। জাতি ধর্ম ভুলে সবাইকে এক হয়ে লড়ার বার্তা দেন তিনি।
একইভাবে লেখক ও গবেষক বিশ্বেন্দু নন্দ বলেন, স্লোগান তুলতে হবে হকার না থাকলে কোনও দোকান থাকবে না। তার যুক্তি এই হকারি প্রায় আড়াই হাজার বছর ধরে ভারতীয় সংßৃñতির একটি অংশ, অন্যদিকে পুঁজিপতিদের কারবার শুরু হয়েছে আড়াইশো বছর আগে। অতএব দীর্ঘদিন ধরে চলে পেশা বন্ধ করা যাবে না।
আরপিএফ বাহিনীর হাতে হকারদের মার খাওয়ার ঘটনাকে ধিক্কার জানান বন্দিমুক্তি কমিটির ছোটন দাস। তিনি বলেন, বেঁচে থাকা ও জীবনে অধিকার একটি মৌলিক অধিকার। এই অধিকার কেড়ে নিতে চাইলে আমরা রুখে দেব।একইভাবে হকার সংগঠন ইউটিসির প্রতিনিধিও বলেন, গণআন্দোলন করতে হবে। সরকারকে হকারদের দাবি মানতে বাধ্য করা হবে। রেলের গাজোয়ারি মানা হবে না বলেও তিনি মন্তব্য করেন।